২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

সংসদে ৬০টি আসন চায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন চায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এছাড়া তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম আরও দুটি দাবি রয়েছে। এগুলো হল সংখ্যালঘুবিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন। শুক্রবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নবম জাতীয় সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী এই ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন থেকে রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের নেতারা বলেন, জাতি-ধর্মের রোষানলে দেশ প্রায় ধ্বংসের পথে। আজ কেবল সংখ্যালঘুই আক্রান্ত নয়, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আক্রান্ত, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতাও আক্রান্ত। সার্বিকভাবে গোটা বাংলাদেশই আক্রান্ত। এর বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ রক্ষায় সংখ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকার কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে।

সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন চত্বরে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গোমেজ। উদ্বোধন শেষে একটি বর্ণাঢ্য ও সুসজ্জিত র‌্যালি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সকালের উদ্বোধনী অধিবেশন ছাড়াও বিকালে সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গোমেজের সভাপতিত্বে দুই অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, সুজিত রায় নন্দী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ঊষাতন তালকুদার এমপি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত প্রমুখ।

সম্মেলন উদ্বোধন করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, জাতি-ধর্মের রোষানলে দেশ প্রায় ধ্বংসের পথে। বর্তমানে জাতি-ধর্ম নিয়েই সবচেয়ে বেশি বিভেদ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে আসতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভেদ ও পার্থক্য দূর না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবে না। কোনো ধর্মের ওপর আক্রমণও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই দেশের স্বার্থে কিংবা ন্যায্য অধিকার আদায়ে সবাইকে এক হয়ে লড়াই করতে হবে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, এ দেশের মাটি অসাম্প্রদায়িকতার। এখানে কোনো জঙ্গি-দানবের জায়গা নেই। কিন্তু জঙ্গির সঙ্গী ও সিন্ডিকেটের প্রধান খালেদা জিয়া জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। তাই অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলতে হলে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতারণ ও বয়কট করতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, আগামীতে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে সংসদীয় আসনে সংখ্যালঘু কোটার ব্যবস্থা, চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সমতা, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন, মন্দির ও উপাসনালয়ে হামলা রোধ এবং সব ধর্মের মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে- তার ব্যবস্থা করা হবে।

সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের ‘হেফাজত তোষণ নীতির’ কঠোর সমালোচনা করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জামায়াতিকরণের বিরুদ্ধে হেফাজতিকরণের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না। বরং আগুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। যার অস্ত্র হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। সমাধান হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির ধারায় দেশকে এগিয়ে নেয়া।

পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত পরাজিত হয়ে ফিরে গেল। আজ সেই হেফাজতই বিনাযুদ্ধে জয়ী হয়ে গেল পাঠ্যপুস্তকে, নারীনীতিতে। প্রশাসনেও পাকিস্তানিরা ঢুকে গেছে। তাই প্রশাসন, সরকার ও দলেও আত্মশুদ্ধি চাই।

বীরেন শিকদার বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার। একে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করবেন না। নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।

শাহরিয়ার কবির বলেন, দেশে এখন সবচেয়ে বেশি সংকট চলছে। একদিকে আওয়ামী লীগকে জামায়াতমুক্ত করতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারায় রাখতে হবে। আরেক দিকে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্মূল করতে হবে।

সংখ্যালঘুদের ব্যাপক সংখ্যায় দেশত্যাগের কথা তুলে ধরে কামাল লোহানী বলেন, আমরা ব্যর্থ হয়েছি, যারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোদ্ধা ও সাথী ছিলেন, তাদের ধরে রাখতে পারিনি। এ দেশে তাদের সংখ্যা ৩০ ভাগ থেকে আট ভাগে নেমে এসেছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ রেখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতিকেই অমান্য করা হয়েছে।

সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। শেষদিন আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে কাউন্সিল অধিবেশন এবং বিকাল ৫টায় সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।