২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

‘সঠিক পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ’

বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ক্রমেই বড় হচ্ছে। বাড়ছে আমাদের সক্ষমতা।

এখন নিজস্ব অর্থায়নের হচ্ছে দেশের উন্নয়ন। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন পেল। এডিপির বরাদ্দ বাড়ছে ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ ভাগ। একইসঙ্গে মাথপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৬০২ ডলার। কিছু কিছু খাতে অসঙ্গতি মনে হলেও সঠিক পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা এমনটাই মনে করছেন।

সম্প্রতি বড় আকারের এডিপি অনুমোদন ও দেশের প্রবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু বিষয়ে কথা হয় প্রবীণ অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির সাইজ বড় হচ্ছে। ২৪৮ বিলিয়ন ডলারের বর্তমান অর্থনীতিতে এডিপির আকার বড় হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে চলমান এডিপির অনেক টাকা পূর্বে শুরু হওয়া অনেক প্রকল্পে খরচ করতে হয়। যেগুলো আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এখানে থেকে বের হতে পারছি না সেটা উদ্বেগের।’

১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার এডিপির মধ্যে নিজস্ব তহবিল হতে জোগান হবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের যা করতে হবে নিজস্ব অর্থায়নেই করতে হবে। কারণ বিদেশি সাহায্য আর ওইভাবে পাওয়া যাবে না। বিদেশি অর্থায়ন যাও আসে তা দিয়ে সেভাবে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। কারণ যা দেয় তা দিয়ে অল্প অল্প করে এগোতে আমাদের অনেক বছর লেগে যাবে।’

৭.২৪ প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রবীণ ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিবিএসের পরিসংখ্যানে বিতর্ক রয়েছে। সরকার বলছে, প্রবৃদ্ধি ৭.২৪। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্যরা বলছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮। এখনো অনেকেই বিবিএসের পরিসংখ্যান নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে আরো আধুনিক ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দিতে হবে। তা না হলে অনেক পরিকল্পনা গড়বড় হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে হারে প্রবৃদ্ধি রয়েছে, আমরা সঠিক পথেই হাটছি বলে আমি মনে করি।’

বর্তমান এডিপি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে আবু আহমেদ বলেন, ‘অর্থবছরের শেষ সময় এসে এডিপির ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর পূর্বের প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্তমান এডিপির একটা বড় অংশ চলে যায় পুরাতন প্রকল্প বাস্তবায়নে, যা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আবার অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় খরচ না হওয়া ওই টাকা পরবর্তী এডিপিতে যোগ হয়। এতেও এডিপির সাইজ বড় দেখাচ্ছে।’

সরকারের কিছু নীতির পরিবর্তন হওয়া দরকার এমন কথা বলে তিনি বলেন, ‘সরকারের হাইওয়ে কিংবা বড় বড় ফ্লাইওভারে কম হলেও টোল নেওয়া উচিত। তা না হলে নিজস্ব অর্থায়ন ব্যবস্থা জোরদার করা যাবে না। অন্যদিকে বেসরকারি কিংবা পিপিপির আওতায় বেশি বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে জনগণের জন্য বোঝা হয় এমন প্রকল্পও নেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে অর্থপাচার কমাতে ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সরকারকে সহজ নীতিতে আসতে হবে। দেশের ইকোনমিকে গ্লোবাল মার্কেটের সঙ্গে থাকতে হবে।’

চলতি অর্থবছর শেষে সরকার ৭.২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করলেও আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক মনে করছে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৮ শতাংশ। শেষ সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে আপত্তি। তবে সংস্থাটি মনে করছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। তবে স্থিতিশীলতা বজায় আছে। যদিও রপ্তানি ও রেমিটেন্সে প্রতিকূল হাওয়া বইছে। দেশে বিনিয়োগ যে পরিমাণ হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেটিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার সীমার মধ্যেই রয়েছে। রপ্তানি কমে আমদানি বাড়ায় ঘাটতি বেড়েছে। রিজার্ভে স্বস্তি আছে। তবে তুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বাড়লেও বাস্তবায়নে প্রথম দিকে ধীর গতি ও পরে দ্রুত ব্যয় করার প্রবণতা আগের মতোই রয়েছে, এটা উদ্বেগের।’

গত ১৪ মে আগামী অর্থছরের এডিপি অনুমোদন শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকার অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেজন্য এডিপির আকারও বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। রাজস্ব আদায়, আমাদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্সসহ সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। এডিপির আকার দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিবিএসের হিসাবে চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৪ ভাগ, যা যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ।’

তিনি বলেন, ‘মাথপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬০২ ডলার, যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৪৬৫ ডলার। বিনিয়োগের পরিমাণ চলতি অর্থবছর বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ২৭ ভাগ। বিশ্বে একমাত্র ভারত ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, আর বাংলাদেশ এই অর্জন করল। ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আমরা এটিও অর্জন করব।’

প্রসঙ্গত, ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) হতে জোগান দেওয়া হবে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহার করা হবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল হতে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুত্ খাতের জন্য। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাচ্ছে ১৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার এক কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ ৮ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। ৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য। পানি সম্পদ মন্ত্রণালেয়র বরাদ্দ ৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া এডিপিতে তালিকাভুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের জন্য আট হাজার ৯১৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এডিপিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য ৩৬টি প্রকল্পের তালিকা সংযোজন করা হয়েছে।

অন্যদিকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৪ ভাগ। এর মধ্যে কৃষিতে ৩ দশমিক ৪০ ভাগ, শিল্প খাতে ১০ দশমিক ৫০ ভাগ এবং সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫০ ভাগ। বিবিএসের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৪৯ বিলিয়ন ডলার।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।