সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন সবজি। বেশির ভাগ সবজির কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে এভাবেই।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শুক্রাবাদ, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, হাতিরপুল, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বেগুন, বরবটি, কাঁকরোল, করল্লার দাম ৬০ টাকা বা তারও বেশি। আবার বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে আলাদা আলাদা দামেও।
শুক্রাবাদ মফিজ হাজির কাঁচাবাজারের বিক্রেতা সোহাগ মিয়া জানান, প্রতি কেজি কাঁকরোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বরবটি ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। এসব সবজি সপ্তাহ দুয়েক আগেও বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। বেশি বৃষ্টি হলে ঢাকায় সবজি আসে কম। এ বাজারে পেঁপে, শসা ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
টাউন হল মার্কেটে সবজি বিক্রি হচ্ছে আরো বেশি দামে।
আলমগীর হোসেন নামের এক বিক্রেতা মাঝারি সাইজের লাউ বিক্রি করছেন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ৭০ টাকা কেজিতে বেগুন, ৬৫ টাকায় কাঁকরোল ও বরবটি, কচুর মুখি ও শসা ৪০ এবং পটোল ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেখানে। দাম হঠাৎ এত বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম। এ সময় সবজির উত্পাদন কম হয়। এ কারণে দাম বেশি।
একটি গার্মেন্ট কারখানায় ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন ফজলু মিয়া। বাজার করছিলেন পশ্চিম রাজাবাজারে। তিনি জানান, চারজনের সংসারে এই টাকায় এমনিতেই টানাটানি। আগে যে টাকায় পুরো মাসের বাজার করতাম, এখন তা দিয়ে ২০ দিনের বাজারও হয় না। জিনিসপত্রের যে দাম!
হাতিরপুলে বাজার করতে আসা আনিসুর রহমানের ক্ষোভ, ‘অজুহাত পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়; কিন্তু সহজে কমায় না। পত্রিকায় দেখি বিভিন্ন অঞ্চলের চাষি দাম পায় না। আর ঢাকায় তো ৫০ টাকার নিচে সবজিই পাওয়া যায় না। ’
আরো কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাল, সবজি, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দামই এখন বেশি। সাধারণ মানুষকে নিত্যদিনের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। বাজারে কোন পণ্য সর্বোচ্চ কত দামে বিক্রি করা যাবে সে ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় ইচ্ছামতো মুনাফা করছে ব্যবসায়ীরা। এর জন্য বাজারগুলোতে মনিটরিং বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে ক্রেতারা।
জানা গেছে, দেশে এখন কোল্ড স্টোরেজে প্রচুর আলু রাখা হয়। মৌসুম শেষ হলে সে আলু দিয়েই চলে। এর পরও সাদা আলুর দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। আর কাঁচা মরিচের কেজি এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা; যদিও গত সপ্তাহের তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের দাম উঠেছিল ১৬০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে বেগুনের পাইকারি বিক্রেতা মাসুম জানান, এখন ভালো মানের লম্বা বেগুন পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের আগে আবার পাওয়া যাবে। উত্পাদন কমে যাওয়ার কারণে দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি এনে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ থেকে সবজি নিয়মিতই আসছে। বৃষ্টি হলে সরবরাহে বড় রকমের সমস্যা হয়। ট্রাকের মধ্যেই অনেক সবজি পচে যায়। আমরা নামাতেই পারি না। তা ছাড়া এখন বন্যার সময় হওয়ায় নিচু জমিগুলোতে উত্পাদন বন্ধ। এ জন্য সবজির দাম বাড়তি। ’ তিনি মিষ্টি কুমড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে কুমড়া আমরা পাইকারি আট থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করতাম, সেটা এখন ২০ টাকা। ’
বগুড়া থেকে সবজি নিয়ে আসা ট্রাক ড্রাইভার কালাম জানান, রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। ঢাকায় আসতে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। ট্রাকভাড়াও তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে।
কাঁচা মরিচের পাইকারি বিক্রেতা মো. সোহেল জানান, একেক অঞ্চলে একেক সময় মরিচ ওঠে। এখন রাজশাহী, নওগাঁ ও চট্টগ্রামের আড়ত থেকে আসছে। নরসিংদীর মরিচ শেষ দিকে। কিছুদিনের মধ্যে কুষ্টিয়ার মরিচ পুরোদমে তোলা শুরু হয়ে যাবে, তবে সেটার দাম বেশি থাকবে। শীতের আগে কাঁচা মরিচের দাম না কমে বরং বাড়বে বলে জানালেন তিনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।