নিজস্ব প্রতিনিধি, কুতুবদিয়াঃ
মামুনা বেগম। বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। তেমন চোখে দেখেন না তিনি। সহজে কাউকে চিনতেও পারেন না এ বৃদ্ধা। শ্রবণ শক্তিও যেন হারিয়ে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে শরীরে নানা রোগব্যাধিও জেঁকে বসেছে। তার অভাবের সংসারে দেখার মতো কেউ নেই।
এমন মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তার জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ঘরে এক মুঠো চালও নেই এ বৃদ্ধার। বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে লকডাউন থাকায় সরকারি বে-সরকারি ও ব্যাক্তিগত ভাবে ঘরবন্দি মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে। এ ত্রাণের সহায়তায়ও পায়নি সে। মামুনা বেগমের স্বামী নৌ দূর্ঘটনায় গত শতাব্দির ৮০ দশকের দিকে কুতুবদিয়া দ্বীপের কৈয়ারবিলের নাজির পাড়ার বাসিন্দা স্বামী হারুনুর রশিদ মারা যায়। তখন দুই কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী যখন মারা যায় তখন প্রথম কন্যা মমতাজ বেগমের বয়স ৪ বছর। দ্বিতীয় কন্যা বেগম তাজের বয়স ৬ মাস। সেই সময় থেকে বিধবার খাতায় নাম লিখে। অবস্থানরত প্রতিবেশীদের সহায়তায় ক্রমান্বয়ে দুই কন্যা মমতাজ বেগম ও বেগম তাজকে বিয়ে দেন। উপকূলের উপর ভয়ে যাওয়া ১৯৯১ সনের প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে সাগর গর্ভে স্বামীর ভিটি বাড়ি বিলীন হয়ে যায়। তখন গৃহহীন হয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। উপায়ান্ত না দেখে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপের আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চৌধূরী পাড়ার বড়ভাই ফজল কবির ও গোলাম কবিরের ঘরে আশ্রয় নেয়। ওখানে যৌবন কাল থেকে এ পর্যন্ত বয়স শেষ করলেও বর্তমানে মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। মামুনা বেগমের ছেলে সন্তান না থাকায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। জীবনের সব সুখ হারিয়ে দুঃখেই এখন এ বৃদ্ধার নিত্যসঙ্গী। বৃদ্ধ বয়সেও ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় মহল্লায় মহল্লায়। নিজের বয়সের ভারে হাটতে না পারলেও কোন রকম লাঠির উপর ভর করে ভিক্ষা করতে বেরিয়ে পড়েন এ বৃদ্ধা। সেই সময় থেকে বাধ্য হয়ে বাঁচার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন মামুনা বেগম। করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে এখন সেই ভিক্ষাও বন্ধ। কারো কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে পারেন না তিনি। এমন পরিস্থিতিতে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটছে তার। এক সময়ে যে ঘরে থাকতো সে ঘরও ভেঙ্গে গেলে, অর্থের অভাবে আর ঘর মেরামত করতে পারেনি। বর্তমানে শান্তিবাজার এলাকায় মেয়ের ঘরে আশ্রিত হয়ে থাকে। এমন দূর্বিসহ জীবনের বর্ণনা করছিলেন ৭৪ বছর বয়সী বৃদ্ধা মামুনা বেগম। এ বৃদ্ধার ভোটার এনআইডি কার্ডে জন্ম তারিখ ৫জুন ১৯৪৭ ইংরেজি। বৃদ্ধা মহিলার বয়স ৭৪ বছর হলেও এখনো পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা সমাজ সেবা অফিস থেকে বিধবা ভাতা কার্ড অথবা বয়স্ক ভাতা কার্ড পায় নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।