বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস থেকে শুরু করে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত, সবই গেছে বিপক্ষে। ভারতের কাছে ১০৯ রানে হেরে তাই সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন ভেঙেছে মাশরাফি বিন মুর্তজাদের।
চমৎকার বোলিংয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানদের বেধে রেখেছিলেন বোলাররা। ৪০তম ওভারের আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে রোহিত বেঁচে যাওয়ার পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাই বদলে যায়। হতবাক হওয়া ক্রিকেটারদের বোলিং-ফিল্ডিং সবই যায় এলেমেলো হয়ে।
বৃহস্পতিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ‘ভাগ্যবান’ রোহিত শর্মার শতকে দ্রুত রান তুলে ৬ উইকেটে ৩০২ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত। শেষ ১৫ ওভার ১৪৭ রান যোগ করে শিরোপাধারীরা।
তিনশ’ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। কেউই নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাই লক্ষ্যের ধারে-কাছে যেতে পারেনি তারা। ৪৫ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।শুরু থেকেই রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী ছিলেন তামিম ইকবাল; কিন্তু নিজের ইনিংস খুব একটা বড় করতে পারেননি। ২৫ বলে ২৫ রান করে মহেন্দ্র সিং ধোনির গ্লাভসবন্দি হন তিনি।
তামিমের বিদায়ের পরের বলে রান আউট হয়ে যান ইমরুল কায়েস। ৩৩ রানে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল সৌম্য সরকার-মাহমুদুল্লাহর দিকে। উইকেটে থিতু হয়ে ফিরে গিয়ে দলকে হতাশ করেছেন তারা।
টানা দুই ম্যাচে শতক পাওয়া মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ শিখর সীমানার কাছে ধাওয়ানের তৃতীয় প্রচেষ্টার ক্যাচে পরিণত হন।ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেননি দুই ব্যাটিং ভরসা সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমও। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম বলে (৩৬তম ওভার) ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকের বিদায়ে ভীষণ বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে ৫০ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমান। তবে তারা পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছেন কেবল। তাদের ৭.৫ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙার পর আর বেশি দূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ চার উইকেটের পতন হয় মাত্র চার রানে।বৃহস্পতিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট টস জিতে ব্যাট করতে নেমে রোহিত ও শিখর ধাওয়ানের ব্যাটে শুরুটা ভালো হয় ভারতের। তবে উইকেট নিতে না পারলেও ভারতের ব্যাটসম্যানদের বেধে রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই চাপ কাটানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ভাঙে শিরোপাধারীদের ৭৫ রানের জুটি।
বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন সাকিব। তার বল এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি ধাওয়ান। সুবর্ণ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্টাম্পিং করে তাকে ফেরান মুশফিক।
পরের ওভারেই ভারতকে বড় একটা ধাক্কা দেন রুবেল হোসেন। অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত হন বিরাট কোহলি।
চার রানের মধ্যে দুই উইকেট হারানো ভারতকে এরপর প্রতিটি রানের জন্য লড়াই করতে হয়। রানের গতি বেধে রাখার সাফল্য পেতে বেশি দেরি হয়নি বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদের বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অজিঙ্কা রাহানে।রোহিতের সঙ্গে রায়নার শতরানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে ভারত। ৩২ রানেই ভাঙতে পারত এই জুটি। ব্যক্তিগত ১০ রানে কোনোরকমে বেঁচে যান রায়না। মাশরাফির বলে অল্পের জন্য এলবিডব্লিউ হননি তিনি।
ভাগ্যের সহায়তা আরো পেয়েছে ভারত। ইনিংসের ৪০তম ওভারে আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গৌণ্ডের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বেঁচে যান রোহিত। ৯০ রানে ব্যাট করছিলেন তখন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ফুলটস দিয়েছিলেন রুবেল; বলটিতে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন রোহিত। কিন্তু বলটি কোমরের ওপরে ছিল উল্লেখ করে লেগ আম্পায়ার দার বোলিং প্রান্তে থাকা ইয়ান গৌল্ডকে ‘নো’ বলের সঙ্কেত দেন। ইংল্যান্ডের আম্পায়ার গৌল্ড তখন ‘নো’ ডাকলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
আম্পায়ারের সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর এলেমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের ফিল্ডিং। ওভার থ্রো, হাত ফস্কে চার হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে এই সময়ে।
সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি রোহিত-রায়না। ১২২ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান এই দুই জনে। মাশরাফির বলে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে রায়নার বিদায়ে ভাঙে ১৫.৫ ওভার স্থায়ী জুটি। ৬৫ রান করা রায়নার ৫৭ বলের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ১টি ছক্কায়।
রায়না ফিরে গেলেও ভারতকে এগিয়ে নিতে থাকেন জীবন পাওয়া রোহিত। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শতকে পৌঁছানোর পর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন তিনি। তাসকিনের বলে তার স্টাম্প এলোমেলো হওয়ার আগে ১৩৭ রান করেন তিনি।
ম্যাচ সেরা রোহিতের ১২৬ বলের ইনিংসটি ১৪টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ। ‘জীবন’ পাওয়ার পর ২৪ বলে ৪৭ রান যোগ করেন তিনি।শেষ দিকে ১০ বলে অপরাজিত ২৩ রানের ইনিংস খেলে ভারতের সংগ্রহ তিনশ’ পার করেন রবিন্দ্র জাদেজা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩০২/৬ (রোহিত ১৩৭, ধাওয়ান ৩০, কোহলি ৩, রাহানে ১৯, রায়না ৬৫, ধোনি ৬, জাদেজা ২৩, অশ্বিন ৩; ৩/৬৯, রুবেল ১/৫৬, সাকিব ১/৫৮, মাশরাফি ১/৬৯)
বাংলাদেশ: ৪৫ ওভারে ১৯৩ (তামিম ২৫, ইমরুল ৫, সৌম্য ২৯, মাহমুদুল্লাহ ২১, সাকিব ১০, মুশফিক ২৭, সাব্বির ৩০, নাসির ৩৫, মাশরাফি ১, রুবেল ০, তাসকিন ০*; উমেশ ৪/৩১, সামি ২/৩৭, জাদেজা ২/৪২, মোহিত ১/৩৬)
ম্যাচ সেরা: রোহিত শর্মা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।