বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘শিক্ষা মানুষকে গণতন্ত্রের প্রতি, ভিন্নমতের প্রতি, ভিন্নমত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষার এই মৌলিক লক্ষ্যকে পদদলিত করছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। বিরোধী মতের লোকজনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করছে। মোদ্দাকথা, শিক্ষার সব উদ্দেশ্য আজ ভূলুণ্ঠিত।’
শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনে ‘লেডিস ক্লাবে’ দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। মোট পাঁচটি অধিবেশনের এই সেমিনার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে এদেশের ছাত্রসমাজ শিক্ষাকে সময়োপযোগী ও কল্যাণমুখী করার জন্য অনেক আন্দোলন করেছেন, অনেক রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু এখনও শিক্ষা সমস্যার সমাধান হয়নি। সীমিত পরিসরে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা কষ্টকর ব্যাপার।’
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন পরিবর্তন প্রয়োজন যা দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে, শিক্ষার সুফল সব মানুষের জীবনে পৌঁছাবে। শিক্ষা হবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্নত জাতি হিসেবে আমাদের পরিচিতি ও মাধ্যম।’
প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ক্ষমতাসীন সরকার সব বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব, প্রতিষ্ঠা করব মানুষের অধিকার।’
শিক্ষা মানুষের জীবনকে আলোকিত করে, শিক্ষা মানুষকে মর্যাদা দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জীবনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের মানুষকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তুলবে।’
আত্মতুষ্টির কারণে পাসের হার বাড়িয়ে শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটেছে দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে, আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব।’
বর্তমানে বাংলাদেশ একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালুর বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রচলিত সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিল। আমরা শিক্ষাকমিশনও গঠন করেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।’
বিএনপির ভিশন ২০৩০-এ শিক্ষাব্যবস্থা ‘জনকল্যাণমুখী’ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে প্রথম পাঁচ বছরেই আমরা এসব বাস্তবায়িত করতে পারব না। শিক্ষাখাতে জিডিপির শতকরা পাঁচভাগ ব্যয় করে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ ও অন্যান্য শিক্ষা সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। আমরা এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলব যাতে শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের হাতিয়ার হবে না, হবে জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার হাতিয়ার।’
বিএনপি প্রধান বলেন, ‘জনসংখ্যার বয়সভিত্তিক কাঠামো যেভাবে বদলে যাচ্ছে তা মোকাবেলায় মূল কৌশল হবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা এবং আকর্ষণীয় চাকরিবাজার সৃষ্টি করা। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রয়োজনীয় সেতুবন্ধ রচনা করা।’
সকাল থেকে চার পর্বের এই সেমিনারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, শিক্ষার বিভিন্ন ধারা, উচ্চ ও অগ্রসর শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর আলোচনা হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাবিদরা অংশ নেন। সকালে বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সেমিনারের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ।
সমাপনী অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান দিনব্যাপী সেমিনারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় সমাপনী অধিবেশনে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ শিক্ষা দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধ পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, নুরুল আমিন, খলিলুর রহমান, লুৎফর রহমান খান, তাজমেরী এস এ ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, সুকোমল বড়ুয়া, আবদুল লতিফ মাসুম, এম এনামুল্লাহ (পারভেজ), ছিদ্দিকুর রহমান খান, মাহমুদুল হাসান, খসরুল আলম, নজরুল ইসলাম, নাজমুস সালাত, মামুন আহমেদ, এমতাজ হোসেন, মোরশেদ হাসান খান, মোহাম্মদ ইকবাল, সিরাজুল ইসলাম, শাহ শামীম আহমেদসহ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশ নেন।
এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নুরী আরা সাফা, ফরিদা মনি শহীদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে আন্দালিব রহমান পার্থ, এ টি এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, মোস্তফা জামাল হায়দার, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রেদোয়ান আহমেদ, শফিউল আলম প্রধান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তফিজুর রহমান ইরান, আজহারুল ইসলাম, সাঈদ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, খোন্দকার লুৎফর রহমান, এম এম আমিনুর রহমান, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, গোলাম মোস্তফা আখন্দ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।