বিশেষ প্রতিবেদকঃ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া আদালতের আইনজীবী ফিরোজ আহমদের বিরুদ্ধে দায়েরকরা ধর্ষণ চেষ্টা মামলাকে সাজানো ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। তার প্রতিপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে থানা পুলিশ মামলার আগে চেম্বার থেকে ফিরোজকে গ্রেফতার ও পরে তদন্তহীন এ মামলা নথিভূক্ত করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তাই অবিলম্বে মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে এডভোকেট ফিরোজ আহমদকে মুক্ত করার আহবান জানান তারা। অন্যতায় কুতুবদিয়া আদালতের মতো জেলা-উপজেলার সকল আদালতের আইনী কার্যক্রম বর্জনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন আইনজীবী নেতৃবৃন্দ।
রোববার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির (জেলা বার) ফটকে আয়োজিত মানববন্ধনে আইনজীবী নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। কুতুবদিয়া আদালতের কার্যক্রম বর্জন করে উপজেলা আইনজীবী সমিতি এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে একাত্মতা ঘোষণা করে জেলা বার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এতে বক্তারা বলেন, মামলার বাদী-বিবাদীর পক্ষে নিযুক্ত হয়ে আইনী প্রক্রিয়া চালানো একজন আইনজীবীর পেশা। সেটি করতে গিয়ে হেরে যাওয়া প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ অনেক সময় ঐ আইনজীবীকেও শত্রু হিসেবে গণ্য করেন। এডভোকেট ফিরোজও কুতুবদিয়াতে সেরকম কিছু প্রভাবশালী দুস্কৃতিকারির রোষাণলে পড়ে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন।
আইনজীবী নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মোবাইলে কল করে একটি নারী মামলার আর্জি বেধে দিতে অনুরোধ করেন অজ্ঞাত ব্যক্তি। এর দু’মিনিটের মাথায় মুখ ঢেকে রাখা চার নারী কুতুবদিয়া উপজেলা সদরের চেম্বারে গিয়ে তাদের অভিযোগ শুনান আর তিনি (এড. ফিরোজ) তা নোট করছিলেন। অকস্মাত নারীরা দাঁড়িয়ে তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও এলোপাতাড়ি প্রহার শুরু করে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আইনজীবী ফিরোজ চেয়ারেই বসা ছিলেন। নারীরা দ্রুত বেরিয়ে তাদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ তুলে। এরপরই একদল লোক ব্যানার সহকারে মিছিল করে। এরই মাঝে পুলিশের এক এসআই এসে নিরাপত্তার কথা বলে থানায় নিয়ে যান ফিরোজকে। রাত ১০টার দিকে জানানো হয় তাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরেরদিন আর্জি লিখে মামলা নথিভূক্ত করে ফিরোজকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আইনজীবীরা আরো বলেন, পুলিশ আদালতের অস্ত্র আর একজন আইনজীবী আদালতের অংশ এবং দেশের প্রতিটি আদালতের আইন কর্মকর্তা। এমন একজন মানুষকে মামলা নথিভূক্ত করার আগে ডেকে এনে গ্রেফতার দেখানো চরম দৃষ্টতা। আইনের সেবক হিসেবে পুলিশের উচিতছিল ঘটনার বাস্তবতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। একজনের ফোন, অল্পক্ষণ পর চার নারীর চেম্বারে যাওয়া, তাদের আক্রমন, চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্র ২০-২৫ জনের মিছিল করা এবং পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গিয়ে মামলার আগে গ্রেফতার দেখানো একটা সাজানো নাটকের ধারাবাহিকতা। এতে ওসির সম্পৃক্ততারও গন্ধ রয়েছে। সেদিন ফিরোজের সাথে যেমনটি হয়েছে, অন্যদিন আরেক জনের সাথে হবেনা এ নিশ্চয়তা নেই। তাই অবিলম্বে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে পাশাপাশি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বা জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ঘটনাটি নিরপক্ষে তদন্তের দাবী জানান বক্তারা। অন্যতায় বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়ে জেলার সকল আদালতের কার্যক্রম বর্জন করা হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির কুতুবদিয়া উপজেলা উপ-কমিটির সভাপতি এডভোকেট কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুল আলম, মো. জাকারিয়া, আবদুল বারী, মোস্তাক আহমদ, আব্বাস উদ্দিন, আতাউর রহমান, মো. রাশেল, আইয়ূব, ফরিদুল আলম, শফিউল আলম, মো. এহছান, খোরশেদ আলম খোকন, তৌহিদুল আনোয়ার, আতাউল হক প্রমূখ।
এসময় , এডভোকেট মো. আজম, কুতুবদিয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনাফ কুতুবী, ছলিম উল্লাহ চৌধুরী, মো. হোসেন বাবুল, মো. রিদোয়ান, নাজমুল ইসলাম শাকিল, কারান্তরিণ এড. ফিরোজের সহধর্মীনী শিক্ষিকা শাহীন আরা বেগম, আইনজীবী সহকারি দেলোয়ার হোসেন, সুজনসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে আইনজীবীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও আদালত কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।