১১ এপ্রিল, ২০২৫ | ২৮ চৈত্র, ১৪৩১ | ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী   ●  উখিয়ার বরণ্য রাজনৈতিক মৌলভী আবদুল হকের ১৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী ২০ মার্চ   ●  হাসিঘর ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সিজন-১ এর ফল প্রকাশিত   ●  মিরসরাই প্রেসক্লাবের ইফতার ও সুধী সমাবেশ

সাজা কঠোর, সহজ হবে না বাস্তবায়ন

সড়কে আইন ভাঙলে তার জন্য প্রস্তাবিত ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’তে কঠোর সাজার বিধান রাখা হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে মৃত্যুর সাজা তিন বছর বহাল থাকলেও, যুক্ত হয়েছে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান। প্রস্তাবিত আইনে প্রাণহানির বিচার হবে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিতে। আগে খসড়ায় ৩০৪ (খ) ধারায় বিচারের কথা বলা হলেও, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া অনুযায়ী আদালত প্রাণহানির বিচার দণ্ডবিধিতে প্রযোজ্য ধারায় সাজা দিতে পারবেন।

 
‘মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩’ আধুনিক ও যুগোপযোগী করে আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১১ সালে। গত ৬ বছরে ৪ বার খসড়া প্রণীত হয়। নানা পক্ষের বাধায় বারবার তা সংশোধন করা হয়। অবশেষে গত সোমবার পঞ্চম খসড়াটি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। চূড়ান্ত এ খসড়াটি সংসদে পাস হলে আইনে পরিণত হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া আগেরগুলোর চেয়ে কঠোর। অতীতে দেখা গেছে, আইন প্রয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট। তাই কঠোর এ আইনটি কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

প্রস্তাবিত আইনে লাইসেন্স পেতে চালককে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। পেশাদার চালক হতে ২১ বছর পূর্ণ হতে হবে। চালকের সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে। সড়কে আইন ভাংলে দোষসূচক পয়েন্ট কাটা যাবে চালক ও তার সহকারীর লাইসেন্স থেকে। মোট ১২ পয়েন্ট থাকবে লাইসেন্সে। ৬ পয়েন্ট কাটা গেলে এক বছরের জন্য লাইসেন্স স্থগিত হবে। পূর্ণ পয়েন্ট কাটা গেলে লাইসেন্স বাতিল হবে। বাতিলের এক বছরের মধ্যে আর লাইসেন্স পাওয়া যাবে না। তৃতীয়বার বাতিল হলে আর কখনোই লাইসেন্স পাবেন না ওই চালক বা তার সহকারী।

ওজন সীমা লঙ্ঘনে ৩ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘনে ভোগ করতে হবে ২ বছর কারাদণ্ড। আগের খসড়ায় এসব অপরাধের সাজা ছিল ৬ মাসের কারাদণ্ড। প্রস্তাবিত আইনানুযায়ী, ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার অপরাধ করলে পুলিশ বিনা পরোয়ানাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দ্বিগুণ সাজা ভোগ করতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা না রাখার দাবি ছিল সরকার সমর্থক শ্রমিক সংগঠন ‘সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন’-এর। সড়কে মৃত্যুর বিচার ৩০৪ (খ) ধারায় সীমাবদ্ধ রাখার দাবি করেছিল। নাগরিক সমাজের দাবি ছিল মৃত্যুর বিচার ৩০২ ধারায় করার। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আইনে কোনো ধারা উল্লেখ না থাকায় আদালত যে কোনো ধারাতেই বিচার করতে পারবেন বলে জানান সড়ক পরিবহন সচিব এমএএন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘আইনে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধি অনুযায়ী বিচার হবে। ৩০২, ৩০৪, ৩০৪ (ক), না ৩০৪ (খ) ধারায় বিচার করা হবে, তা আদালতের এখতিয়ার।’ চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় আদালত দোষী চালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ উদাহরণ দিয়ে সচিব বলেন, ‘আদালত এ মামলায় সাজা দিয়েছেন ৩০৪ ধারা অনুযায়ী। প্রযোজ্য মনে করলে আদালত অন্য মামলাগুলোও এ ধারাতে বিচার করতে পারবেন।’

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আইনে ধারা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত ছিল। কারণ; সড়কে এমন অনেক মৃত্যু ঘটে, যার বিচারের প্রতি গণমাধ্যম বা অন্য কারও মনোযোগ থাকে না। সে ক্ষেত্রে ৩০৪ (খ) ধারায় বিচার হবে। অপরাধীর মাত্র ৩ বছর সাজা হবে।’ প্রস্তাবিত আইনে যতটা সাজার বিধান রাখা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করাকেও কঠিন মনে করেন তিনি। আবুল মকসুদ বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলেই ৩০২ ধারায় চালকের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন চাই না। যে অপরাধের যতটুকু শাস্তি হওয়া উচিত বা চালকের দোষ থাকলে তা যে ধারায় বিচার হওয়া উচিত, তা আইনে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন ছিল। এতে সাজার ভয়ে হলেও সবাই সতর্কভাবে গাড়ি চালাবে।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, এমপি-মন্ত্রীরাই পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতা। তাদের ওপর আইন প্রয়োগ করতে গেলে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়। এই চাপের কারণে আগের নমনীয় সাজাগুলো কার্যকর করা যায়নি। চালকের ১৫ দিনের সাজার প্রতিবাদে গোট ঢাকা শহর ৭ ঘণ্টার জন্য অচল করে দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ, চলতি মাসে দুই চালকের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত আইন কার্যকরে সরকারকেও কঠোর হতে হবে।

নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের দাবি_ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনে মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। তবে মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, আইনটি বাস্তবতা বিবর্জিত, অনেক বেশি কঠোর। মালিক সংগঠন সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সমকালকে বলেন, ‘আইনের ৪৭ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ ৯০ দিনের মধ্যে মালিক দেবেন। মালিকরা তাহলে বীমা করবে কেন?’ ওজন সীমা লঙ্ঘনের সাজা ৩ বছর কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে। একে বাস্তবতা বিবর্জিত বলছেন এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘এক্সেল লোড নীতিমালায় ওজন সীমা লঙ্ঘনের সাজা নির্ধারণ করা আছে। ৩ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে মালিকের পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। আগের তুলনায় ১০ হাজার শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা বাড়ানো হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। এভাবে চললে কেউ এ খাতে বিনিয়োগ করবে না।’

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুর রহিম বকশ দুদু বলেন, ‘যাবজ্জীবনের সাজা নিয়ে কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না।’ মালিক-শ্রমিকদের চাপে আইন বাস্তবায়ন যে কঠিন হবে, তার ধারণা তাদের কথাতেই পাওয়া যায়। খন্দকার এনায়েত জানান, তারা আইনটি পরিবর্তন করতে সরকারের কাছে দাবি জানাবেন।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে এক বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে মালিক ও চালককে। আইনে ব্যক্তি বা পরিবারপ্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে। চালক ও তার সহকারীকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। নিয়োগপত্র না দিলে মালিককে ৩ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ভূয়া লাইসেন্সে গাড়ি চালালে ৬ মাস জেল হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড। গাড়ির আকার-আকৃতি পরিবর্তনেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।