জধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শনিবার দুপুরে দুই দফা জোরালো ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পের সময় বিভিন্ন এলাকার মানুষ আতঙ্কে বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। রিখটার স্কেলে ৭.৫ মাত্রার এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালের বারপাক অঞ্চলে।
তীব্রমাত্রার এ ভূমিকম্পে পাবনায় এক স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে সাভারে বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস শ্রমিক আহত হন।
এছাড়া ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের বেশ কয়েক জায়গায় কয়েকটি বহুতল ভবনে ফাটল দেখা গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতরে পরিচালক মো. শাহ আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রথম দফায় দুপুর ১২টা ১১টা মিনিটে ভূকম্পন অনুভূত হয়। আগারগাঁও ভূমিকম্প পরিমাপ কেন্দ্র থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ৭৪৫ কিলোমিটার দূরে নেপালের বারপাক অঞ্চল ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। কেন্দ্রস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়বার ভূকম্পন অনুভূত হয় ১২টা ৪৫ মিনিটে। এর সময় রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪।’
বাংলাদেশে কত মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে তা পরিমাপ করা সম্ভব নয় জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘সেন্টারের (কেন্দ্রস্থল) মাপটাই আমরা বলি। তবে ক্রমান্বয়ে কম্পন যত দূরে যাবে মাত্রা তত কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। সারা দেশেই কম্পন অনুভূত হয়েছে, কম্পনটা বেশ বড় হয়েছে।’
তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, নেপালের লামজুং থেকে ২৯ কিলোমিটার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভূকম্পনের কেন্দ্রস্থল। কেন্দ্রস্থলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯ রিখটার স্কেল।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, আমরা তিনটি বিষয় বিবেচনা করে পরিমাপ করি। ইউএসজিএসের কাছে অনেক বেশি তথ্য আছে। সে অনুযায়ী হয়তো তারা পরিমাপ করেছে।
দ্য রিপোর্টের রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নোয়াখালী, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, ফরিদপুর, বান্দরবান ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, এ সব এলাকায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এ সময় পুকুরের পানিতে ঢেউ খেলে যায়। বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এতে আতঙ্কিত হয়ে মানুষজন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
অনেকদিন পর বেশ ধরণের ভূমিকম্পের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। এর আগে ১৯৫৪ সালের ২১ মার্চ ভারতের মনিপুরে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে কেপে উঠেছিল দেশ।
এদিকে ভূমিকম্পনের কারণে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার আশা টাওয়ারের বেশ কয়েকটি ফ্লোরে ফাটল দেখা গেছে। ওই ফ্লোরগুলোতে আশা বিশ্ববিদ্যাল, মোবাইল ফোন অপোরেটর এয়ারটেল ও এনজিও আশা’র কার্যালয় রয়েছে।
এ বিষয়ে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মীর অমি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সোয়া ১২টার দিকে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ওই সময়ে ভবনের ভেতরে অন্যান্য অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও তাৎক্ষনিক রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। পরে আশা টাওয়ারের চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, পেছন দিকের ১০টি পিলারের মধ্যে একটি পিলার চার তালা থেকে ১৩ তালা পর্যন্ত ফেটে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পনের ফলে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের শনিবার সাড়ে ১২টার এক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।’
আশা টাওয়ারের ফাটলের বিষয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার হাসিবুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আতংকিত হওয়ার মতো ফাটল আমাদের চোখে পাড়ে নি। তবে ভবনের অভ্যন্তরে ফাটল রয়েছে কী না তা বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।’
এদিকে ভূমিকম্পনের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্যসেন হলের নাসির হোসেন নামের এক ছাত্র আহত হয়েছেন। তার রোল নম্বর-৬৭২। ভূমিকম্পনের সময় হলের সিড়ি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে নামার সময় আহত হন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।