একজন সালাহউদ্দিন আহমদকে ফিরে পেতে যেন পুরো কক্সবাজার জেলার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন! দেশের একমাত্র বিচ্ছিন্ন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে শুরু করে জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রামের অলিগলির প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি বাজার, প্রতিটি স্টেশন ও মহল্লায় হাজার হাজার মানুষ আধাঘন্টা ধরে মানবপ্রাচীরে অংশ নিয়ে ওই একজন মানুষকে (সালাহউদ্দিন আহমদ) ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই মানবপ্রাচীর শুধুই একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না, অংশগ্রহণকারিদের আচরণ ও অভিব্যক্তি ছিল নিজেদের ‘মায়ের পেটের আপন ভাই’কে ফিরে পাওয়ার আকুলতা। আর এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আরেকবার মানুষ বুঝিয়ে দিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ তাদের অন্তরে কী পরিমাণ ঠাঁই করে নিয়েছেন!
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী দাবি করেছেন, এই মানবপ্রাচীরে অন্তত তিন লাখ মানুষকে সম্পৃক্ত করা গেছে। যাদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতস্ফুর্ত ও আন্তরিক। কেউ কাউকে ডেকে আনেননি, অন্তরের ভালোবাসায় তারা মানবপ্রাচীরে ছুটে এসেছেন।
মানবপ্রাচীরে অংশ নেয়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আবারও দাবি করেছেন, সালাহউদ্দিন আহমদকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাই রাতের আঁধারে উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছেন। সালাহউদ্দিন আহমদকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাই যে তুলে নিয়েছেন তার অসংখ্য প্রমাণ তাঁর সহধর্মিনী হাসিনা আহমদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ডের কাছে রয়েছে।
বক্তাদের মতে, ‘আইন শৃংখলা বাহিনী যতই অস্বীকার করুক, তাদের কাছেই সালাহউদ্দিন আহমদ রয়েছেন। আমরা যে কোন শর্তে তাঁকে ফিরে পেতে চাই।’
মানবপ্রাচীরে অংশ নেয়া সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করেন, সালাহউদ্দিন আহমদ আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছেন। আইন শৃংখলা বাহিনীই তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেই সালাহউদ্দিন আহমদকে ফিরিয়ে দেবে আইনশৃংখলা বাহিনী।
তবে মানবপ্রাচীরে অংশ নেয়া সাধারণ মানুষের কাছে একটাই বিস্ময়, প্রধান শেখ হাসিনা কেন নির্দেশ দিচ্ছেন না! কেনই বা তিনি সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদকে একবারও তাঁর সাক্ষাত পাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না!
কক্সবাজার জেলা বিএনপি সালাহউদ্দিন আহমদকে অক্ষত ও সুস্থ ভাবে ফিরে পাওয়ার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার এই মানবপ্রাচীর কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। আর এই কর্মসূচিতে বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির সকল অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ আধাঘন্টা ধরে পুরো জেলা থমকে যায় এই দীর্ঘ মানবপ্রাচীরে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল জানান, জেলার আভ্যন্তরীন প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মানবপ্রাচীর করা হয়েছে।
তাঁর মতে, কক্সবাজার শহরের জিরো পয়েন্ট (হলিডে মোড়) থেকে রামু উপজেলা হয়ে চকরিয়া উপজেলার আজিজনগর পর্যন্ত কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৭৭ কিলোমিটার, চকরিয়া-পেকুয়া-মগনামা ঘাট পর্যন্ত এবং কুতুবদিয়ার লেমশীখালী থেকে আলী আকবর বলী ঘাট এবং মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা থেকে কালারমারছড়া পর্যন্ত, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ মানবপ্রাচীর হয়েছে।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনও এই মানবপ্রাচীর কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েনি। সেন্টমার্টিনের পাশাপাশি জেলার দক্ষিণ প্রান্তের উপজেলা টেকনাফ থেকে শুরু হয়ে উখিয়া, কক্সবাজার সদর, রামু, বৃহত্তর ঈদগাঁও, চকরিয়া, মাতামুহুরী, পেকুয়া, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের অলিগলি, প্রতিটি স্টেশন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়কজুড়ে এই মানবপ্রাচীর কর্মসূচি পালন করা হয়। দাবি শুধু একটাই, যে কোন কিছুর বিনিময়ে, যে কোন শর্তে সালাহউদ্দিন আহমদকে ফিরে পেতে চাই।
পুরো জেলায় একযোগে আয়োজিত এই মানবপ্রাচীরের সমন্বয় করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সংগঠনের স্থানীয় নেতারা এই মানবপ্রাচীরের সমন্বয় করেন। এছাড়াও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।