২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

সুযোগ-সুবিধা বাড়ায় গতি বেড়েছে বায়োমেট্রিকে


বিশেষ প্রতিবেদকঃ নিবন্ধিত হলে খাবারসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে দেখে নিবন্ধন কেন্দ্রে ভীড় জমাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এতে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবরে এক মাসে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। আরো গতি বাড়াতে চলমান ৬ কেন্দ্রের সাথে আগামী সপ্তায় যুক্ত হচ্ছে আরো ২টি অতিরিক্ত কেন্দ্র। এতে ৮ কেন্দ্রে প্রতিদিন ২০ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবন্ধনের আওতায় আসা আশ্রিত এসব রোহিঙ্গারা বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পরিচয়পত্র পেয়েছে।

আর তথ্য সম্বলিত পরিচয়পত্র থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকরা অন্য সবার আগে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসায় টেকনাফ-উখিয়ায় অবস্থান নেয়া অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা নিবন্ধন কার্যালয় মুখো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। শুরুর দিকে প্রায় দু’সপ্তাহ নিবন্ধনে ছাড়া না থাকলেও বিগত দু’সপ্তাহ ধরে এটি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। সুযোগ-সুবিধা দেখে অনেকে এখনো মিয়ানমারে অবস্থান করে থাকা স্বজনদের এপারে চলে আসতে উৎসাহিত করছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে আশ্রয়ের আশায় বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়। তখন রোহিঙ্গারা এতে তেন আগ্রহ দেখায়নি। এসময় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা ছিল অনিবন্ধিত কেউ কোন সুযোগ সুবিধা পাবে না। সেনাবাহিনী ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য সহযোগিতা চালু করার পর সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গারা নিবন্ধন কার্যালয়ে আসতে শুরু করে। যা ক্রমে বাড়ছে।

এদিকে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম চালাচ্ছে ইমিগ্রেশন এন্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এমআরপি প্রজেক্ট। আর সেনাবাহিনী এবং বিজিবি টেকনিক্যাল টীম, সিকিউরিটিতে আনসার, আরআরআরসি, আইওএম, ইউএনএইচসিআর এতে সহযোগিতা দিচ্ছে। এ কার্যক্রমে সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩শ জনবল কাজ চালাচ্ছে। নিবন্ধনে ১৪ বছরের নিচে কাউকে নেয়া হচ্ছে না। ১৫ থেকে সর্বোচ্চ বয়সী সবাই নিবন্ধনের আওতায় আসছে।

নিবন্ধন কার্যক্রমে দায়িত্বরত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেছেন, বুধবার (১১ অক্টোবর) পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৩২ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। বিগত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় আসছে। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ এটি এক লাখ চল্লিশ হাজার দাড়াবে। তবে সঠিক তথ্য জানতে রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে ৬টি কেন্দ্রে ১০০টি বুথে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। নিবন্ধন কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে আরো ২টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। আগামী সপ্তাহে আমাদের গড় টার্গেট প্রতিদিন ২০ হাজার। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। এভাবে এগিয়ে যেতে পারলে সহসা-ই আশ্রিত সব রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।
নিবন্ধনে ১৪ বছরের নিচে কাউকে না নেয়া প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট একেএম লুৎফর রহমান বলেন, ১৪ বছরের কৌটায় থাকাদের দৈহিক পরিবর্তন হয়। শিশুকালের ছবি এবং আঙ্গুলের ছাপেও পরিবর্তন আসে। তাই এর কম বয়সীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে না।

ক্যাম্প সূত্র গুলো বলছে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশের বুথ গুলোতে নিবন্ধন কার্যক্রম গতিশীল হলেও কিছু কিছু কেন্দ্রে নিবন্ধনের গতি কম। কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তারা জানায়, এখনো নিবন্ধনের চেয়ে ত্রাণের দিকে বেশি ছুটছে রোহিঙ্গারা। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সীমান্ত এলাকা এবং আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। এখনো রোহিঙ্গা আগমন অব্যাহত রয়েছে। তাই কি পরিমাণ রোহিঙ্গা এলো তা সহসা পরিমাণ করা যাবে না। তাই সকল রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনাও কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন সূত্রটি।
এদিকে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় পৌনে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে সঅমান্ত এলাকার অধিবাসীরা মনে করছেন। কারণ প্রথম দিকের মতোই বিশাল বহরের স্রোত সীমান্ত অতিক্রম করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরাসরি কাজ করা বিদেশী এনজিও গুলোর নমনীয় আচরণের পাশাপাশি খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ নানান সুবিধার দেয়ার কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল।

কিন্তু, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)’র তথ্যমতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।

অপরদিকে, ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসনে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তখন থেকে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরেছে ক্যাম্প গুলোতে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।