১৯৭১ সালের আজকের এই দিন শেষে রাতের দিকে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় রক্তপিপাসু হিংস্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে এ রাতে তারা মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে ঢাকা শহরকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষদের ওপর চালায় গণহত্যা ও পৈশাচিকতা। সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে ছাত্র, শিক্ষক, নারী, শিশু এমনকি রিকশাচালকও রেহাই পায়নি।
স্বাধীনতাকামী বাঙালির স্বাধীনতা স্পৃহা চিরতরে মুছে দেয়ার জন্য ঢাকার বাইরেও চলেছে গণহত্যা। এ রাতেই নিহত হন কমপক্ষে ৫০ হাজার সাধারণ মানুষ। এ রাতেই ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেয়া সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষক কলোনি, পুলিশ, ইপিআর ব্যারাকসহ আবাসিক এলাকা এবং বস্তিবাসীর ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে শুরু করেছিল নয় মাসব্যাপী বিশ্ব ইতিহাসের নজিরবিহীন গণহত্যা, নিপীড়ন ও অত্যাচার। এ হত্যাযজ্ঞে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল বিশ্ববিবেক। বাঙালি জাতির এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করার জন্য হানাদার বাহিনী মেতে ওঠে ভয়াবহ এই হত্যাযজ্ঞে।
হঠাৎ করেই ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় হানাদার বাহিনীর অগ্নিসংযোগে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। হানাদার বাহিনীর এই আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ ঘরের কোণে আশ্রয় নিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।
এদিকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রতিরোধে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বাঙালি সদস্যরা। শুরু হয় প্রতিরোধ-মুক্তিযুদ্ধ। তারই ধারাবাহিকতায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হয় হাজার বছরের স্বপ্ন সাধের স্বাধীনতা, বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় লাল সবুজের স্বাধীন ভূখণ্ড স্বাধীন বাংলাদেশ।
জানা যায়, এদিন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর জন্য রাত সাড়ে ১১টায় ছাউনি থেকে বেরিয়ে আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ফার্মগেটের মুখে হানাদার বাহিনী প্রথম প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। সেখানেই তারা চিৎকার করে গোটা ঢাকায় কারফিউ ঘোষণা করে। ছাত্র-জনতা বাধা দিলে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। ডিনামাইটের মাধ্যমে ব্যারিকেড উড়িয়ে দিয়ে শহরে প্রবেশ করে সেনা সদস্যরা। রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় ব্যারিকেড। প্রতিরোধকারী বাঙালি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ট্যাংক, মর্টার, রকেট ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। হানাদাররা রাত দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে হানা দেয়। রাতেই বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। মধ্যরাতে সেনাবাহিনী পিলখানা, রাজারবাগ ও নীলক্ষেত আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনী পিলখানা ও নীলক্ষেতে প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। হানাদার বাহিনী ট্যাংক, বাজুকা, মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল করে ফেলে। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর পিলখানার ইপিআর ব্যারাকের পতন হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন হামলাকারীদের কব্জায় আসে রাত দু’টায়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় আগুনের লেলিহান শিখায় একদিকে নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
অপরদিকে এ রাতের বিসর্জিত রক্তের ওপর দিয়েই পরদিন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় নতুন প্রতিজ্ঞার ইতিহাস, শুরু হয় মুক্তির জন্য যুদ্ধ। ২৬ মার্চ আসে স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর নয় মাস বাঙালির মরণপণ যুদ্ধে অর্জিত হয় রক্তের পতাকা।
তাই স্বাধীনতাকামী মানুষের রক্তে ভেজা ২৫ মার্চ তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ক্ষণ। এ দিনে শুরু হওয়া রক্তের স্রোতে ভেসেই জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।