ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে দ্বিতীয় দিনের মত প্রচারণা চালিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রচারণাকালে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান তিনি।
গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বের হন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার গাড়িবহর গুলশান, বনানী, বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর হয়ে উত্তরা জসিম উদ্দিনের মোড় ১ নম্বর সেক্টর ৬ নম্বর সড়কে থামে।
প্রচারণার শুরুতেই ওই মোড়েই আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদার জিয়ার গাড়িবহরের সামনে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এরপর পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ধীরে ধীরে এগুতে থাকে। তিনি গাড়ি থেকে নেমে লন্ডন প্লাজায় প্রচারণা চালান। উত্তরার এসবি টাওয়ার, আমির কমপ্লেক্স, রাজউক কর্মকর্তা কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেন খালেদা জিয়া।
এসবি টাওয়ারের এক নারী বিক্রয় কর্মীকে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তাবিথ আউয়ালকে আপনারা ভোট দেবেন। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রার্থী দিয়েছি।’ জবাবে নারী বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘আমরা তাবিথ আউয়ালকে ভোট দেব। কারণ আমরা পরিবর্তন চাই।’
এরপর খালেদা জিয়া এসআর টাওয়ারের সামনে যান। গাড়িতে উপস্থিত থেকেই তিনি উপস্থিত শত শত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এ সময় উৎসুক জনতারও ভিড় দেখা যায়।
সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়া নর্থ টাওয়ারের নিচতলায় প্রচারণা চানান। সেখান থেকে সাড়ে ৬টার দিকে তার গাড়িবহর হাউস বিল্ডিং মোড় দিয়ে ঘুরানোর সময়ে সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শ’খানেক নেতাকর্মী কালো পতাকা হাতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার পাজারো জিপের সামনে পুলিশের পেট্রোল গাড়ির ওপর কালো পতাকাসহ লাঠি ছুড়ে মারে। এ সময়ে পুলিশ তৎপর হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুলিশের গাড়ির সামনে এসে গতিরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে।
ওই সময়ে কয়েকশ নেতা-কর্মী ঘিরে তার খালেদা জিয়ার গাড়ি এস্কট করে নানা স্লোগান দিয়ে নিরাপদে ঘুরিয়ে দেয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সামনে ছিল একদল কর্মীর মোটর স্কট। খালেদার নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদেরও এ সময়ে ভীষণ বেগ পোহাতে হয়।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ধীরগতিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চলে। এ সময়ে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকার মানুষজনকে খালেদা জিয়া হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
এরপর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর খিলক্ষেত মোড়ে এলে আওয়ামী লীগের গোটা পঞ্চাশেক নেতাকর্মী কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। একইস্থানে বিএনপি বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন।
কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার হয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে প্রবেশ করেন। মিনিট দশেক মার্কেটের নিচতলায় বেশ কয়েকটি দোকানে প্রচারণা চালান।
ওই মাকর্টে থেকে বের হয়ে এরপর তিনি শাহজাদপুর সুবাস্তু নজর ভ্যালী মার্কেটে প্রবেশ করেন। নিচতলায় প্রচারণাকালে সিকদার অপটিকসের এক বিক্রয়কর্মী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েন না করলে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সবাই সেনাবাহিনী চায়। সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েন চাই। কারণ সেনাবাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু ভোট চুরি করবে বলে তারাই (আওয়ামী লীগ) সেনা মোতায়েন চায় না।’
এরপর মার্কেটের সমানে সাংবাদিকদের খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বাধা সত্বেও নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি মানুষের বিপুল সমাগম হচ্ছে। এ জনসমাগম দেখে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাকে বাধা দিচ্ছে। সন্ত্রাস করছে। তবে আমি কোনো বাধা ভয় পাই না। জনগণ আমার সঙ্গে আছে আমি নির্ভয়ে তাদের কাছে যেতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন সিটিতেই আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবে।’
এরপর খালেদা জিয়া উত্তর বাড্ডা হয়ে আমেরিকান দূতাবাস মোড় ঘুরে শাহজাদপুরের নর্দ্দা, বিশ্ব রোড ফ্লাইওভার, বনানী, গুলশান-২ হয়ে খালেদা জিয়া প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা প্রচারণা শেষে রাত ৯টার দিকে বাসায় ফেরেন।
প্রচারণাকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মহিলা নেত্রী শিরিন সুলতানা, শ্যামা ওবায়েদ, সুলতানা রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া জোটের গোলাম মুর্তজা, শাহদাত হোসেন সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।