অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের অনেকের মধ্যেই ‘ম্যালওয়্যার’ সংক্রান্ত আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়। অবশ্য, কিছুদিন পর পরই যেখানে অ্যান্ড্রয়েডের মারাত্মক সব ম্যালওয়্যারের কথা প্রযুক্তি বিশ্বে শোনা যায় তখন ব্যবহারকারীদের মনে ভয় জাগবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। তাই এই ম্যালওয়্যার সংক্রান্ত ভীতির কথা মাথায় রেখেই আজকের এই ‘সেরা ৫টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যান্টি-ভাইরাস’ লেখাটি লিখতে বসা। লেখাটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে বর্তমানের সেরা পাঁচটি অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপলিকেশন এবং এগুলোর সুবিধাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরতে চেষ্টা করব। চলুন তাহলে, কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক তালিকায় থাকা সেরা পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যান্টি-ভাইরাস সম্পর্কে।
সিএম সিকিউরিটি
‘চিতা মোবাইলের’ তৈরি ‘সিএম সিকিউরিটি’ (ক্লিন মাস্টার) একটি চমৎকার অ্যান্টি ভাইরাস অ্যাপলিকেশন যা স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যেই প্রায় সকল সুবিধাই দিয়ে থাকে, অবশ্য ফ্রি-ভার্সনটিতে ব্যবহারকারীরা বেশ কিছু বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। যদি এই বিজ্ঞাপনের ব্যাপারটি আপনার ভালো না লাগে তবে মাসিক ৯৯ সেন্ট খরচ করে আপনি ‘অ্যাড-ফ্রি’ ভার্সনটিও ব্যবহার করতে পারবেন।
সিএম সিকিউরিটি অ্যাপলিকেশনটিতে একই সঙ্গে ব্যবহারকারীরা ‘অ্যান্টি-ভাইরাস’, ‘ব্রাউজিং প্রোটেকশন’, ‘ব্যাটারি সেভিং’, ‘প্রাইভেসি প্রটেকশন অব অ্যাপ’সহ আরও চমৎকার সব ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। এতসব ফিচার থাকা সত্ত্বেও এই অ্যাপলিকেশনটির ইউজার ইন্টারফেস খুবই পরিচ্ছন্ন, ফলে ব্যবহারকারীদের অ্যাপলিকেশনটি ব্যবহার করতে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হবেনা।
ক্যাস্পারস্কি অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যান্ড সিকিউরিটি
ডেস্কটপ কম্পিউটারে যে সকল অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে ক্যাস্পারস্কি অ্যান্টি-ভাইরাস এবং এর সিকিউরিটি প্যাকেজগুলো অন্যতম। এই জনপ্রিয়তা যে শুধু প্রতিষ্ঠানটির ডেস্কটপ ভার্সনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা কিন্তু নয় বরং প্রতিষ্ঠানটির অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনও সমান ভাবে সমাদৃত হচ্ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মাঝে। এই অ্যাপলিকেশনটিতে ব্যবহারকারীরা একই সঙ্গে ‘অ্যান্টি-ভাইরাস’, ‘কল অ্যান্ড টেক্সট কনট্রোল’, ‘অ্যান্টি-থেফট’ এবং ‘অ্যান্টি-ফিশিং’ সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
পাশাপাশি অ্যাপলিকেশনটি ব্যবহারকারীদের ‘রিয়েল-টাইম ওয়েব প্রটেকশন’ দিতেও সক্ষম। এগুলো ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তার সুবিধা তো রয়েছেই। তবে আপনি যদি এই অ্যাপলিকেশনটির সবগুলো সুবিধাই একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহার করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে বাৎসরিক ১৪.৯৫ ডলার খরচ করতে হবে। তবে আরও পাঁচ ডলার যোগ করলে আপনি মোট তিনটি ডিভাইসে এই সুবিধাটি উপভোগ করতে পারবেন।
এতগুলো টাকা যদি আপনার প্রথমেই খরচ করতে না ইচ্ছে করে তবে অ্যাপলিকেশনটির প্রিমিয়াম ফিচারগুলো ব্যবহার করে দেখার জন্য আপনি ৩০ দিনের ট্রায়াল সময় পাবেন। তবে এক্ষেত্রেও কিছু সুবিধা ব্যবহারের জন্য আপনাকে আপনার ইমেইল ব্যবহার করে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হতে পারে।
ম্যালওয়্যারবাইটস অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার
আজকের এই সেরা অ্যান্ড্রয়েড অ্যান্টি-ভাইরাসের তালিকায় এই অ্যাপলিকেশনটি বেশ কিছু কারণে এগিয়ে থাকতে পারে। প্রথমত, এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্টফোনকে ম্যালওয়্যার মুক্ত রাখা। দ্বিতীয়ত, অ্যাপলিকেশনটির রয়েছে খুবই সহজ ইউজার ইন্টারফেস এবং চমৎকার সব সুবিধা।
চমৎকার এই অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপলিকেশনটি সত্যিই তালিকায় থাকা অন্য অ্যাপলিকেশনগুলো থেকে বেশ লাইট। অ্যাপলিকেশনটির ম্যালওয়্যার প্রটেকশন সুবিধাটি বেশ শক্তিশালী। এই অ্যাপলিকেশনটি স্মার্টফোনে থাকা প্রতিটি অ্যাপলিকেশনকে বেশ কিছু ক্যাটাগরিতে ভেঙে ভেঙে পরীক্ষা করে, ফলে অ্যাপলিকেশনগুলো সত্যিকার অর্থেই ত্রুটিপূর্ণ কি না তা জানা বেশ সহজ হয়ে যায়। চমৎকার এই অ্যাপলিকেশনটি আপনার স্মার্টফোনের সিকিউরিটি ইস্যুগুলো খুব দ্রুত নির্ণয় করে সেই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে দিতে সক্ষম।
বর্তমানে অ্যাপলিকেশনটিতে ‘ফোন লোকেশন’ সুবিধাটি আর যুক্ত নেই কেননা বর্তমানে ‘ফোন লোকেটের’ সুবিধাটি অ্যান্ড্রয়েডে ডিফল্টভাবেই যুক্ত করা আছে। সবশেষে বলতে চাই, এই অ্যাপলিকেশনটিতে হয়ত সব মুখরোচক অনেক সুবিধাই নেই তবে এটি ব্যবহার করলে আপনি নিরাপদ থাকবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
আভাস্ট অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যান্ড সিকিউরিটি
ক্যাস্পারস্কি অ্যাপলিকেশনটির নতই আভাস্ট অ্যান্টি-ভাইরাসটিও ডেস্কটপ ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়। চমৎকার এই অ্যাপলিকেশনটিতে নিরাপত্তা জনিত সুবিধা ছাড়াও রয়েছে ‘র্যাম বুস্টিং’, ‘জাংক ক্লিনিং’ এর মতো বাড়তি সুবিধারও। তবে এই সুবিধাগুলো ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্র বিশেষে বাড়তি অ্যাপলিকেশন ইন্সটল করার প্রয়োজন হতে পারে।
চমৎকার এই অ্যাপলিকেশনটিতে রয়েছে ‘অন-ডিমান্ড ও রিয়েল টাইম স্ক্যানিং’ সুবিধা যা আমরা সবাই একটি নির্ভরযোগ্য অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপলিকেশনে আশা করে থাকি। শুধু তাই নয়, এতে আপনি আপনার ওয়াইফাই কানেকশনটি কতটুকু নিরাপদ সেটিও পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন।
অ্যাপলিকেশনটিতে রয়েছে ‘ফায়ারওয়াল’ সুবিধাও তবে এই সুবিধাটি ব্যবহার করার জন্য আপনার স্মার্টফোনটিকে প্রথমে রুট করে নিতে হবে। অ্যাপলিকেশনটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা গেলেও কিছু সুবিধার জন্য ব্যবহারকারীদের নামে মাত্র সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করতে হতে পারে।
এভিজি অ্যান্টি-ভাইরাস সিকিউরিটি
সাধারণ সব নিরাপত্তা সুবিধা ছাড়াও এভিজি অ্যাপলিকেশনটিতে ব্যবহারকারীরা ‘অ্যাপ লকিং’, ‘অ্যান্টি-থেফট’, ‘টাস্ক কিলার’, ‘অ্যাপ ব্যাক-আপ’ এবং আরও ইত্যাদি সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি চমৎকার ইউজার ইন্টারফেসের এই অ্যাপলিকেশনটিতে রয়েছে কিছু ‘ব্যাটারি-সেভিং’ সুবিধাও যার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার ব্যাটারির লাইফ স্প্যান বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জানতে পারবেন বেশ কিছু ব্যাটারি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদিও।
অ্যাপলিকেশনটিতে যুক্ত থাকা ‘পাওয়ার সেভিং’ এর মূল বিষয়গুলোর সঙ্গে আপনি হয়ত অ্যান্ড্রয়েডের স্টক ব্যাটারি সম্পর্কিত কিছু সুবিধার মিল পাবেন তবে অ্যাপলিকেশনগুলোতে নিঃসন্দেহে সেগুলো নিয়ে আরও ভালোভাবে কাজ করা হয়েছে বলেই আমার অন্তত মনে হয়েছে।
এই অ্যাপলিকেশনটি একজন ব্যবহারকারীকে ‘জাংক ক্লিনিং’ সুবিধাও দিয়ে থাকে তবে এক্ষেত্রে ‘এভিজি জাংক ক্লিনার’ নামের একটি অ্যাপলিকেশন ইন্সটল করার প্রয়োজন হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।