প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৬ মে উদ্বোধন করতে আসছেন স্বপ্নের বিশ্বমানের মেরিন ড্রাইভ। আর এ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে যোগ হবে নতুন মাত্রায় অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিণ ড্রাইভ সড়ক। চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বলতে গেলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নতুন সাঁজে সাঁজানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও উদ্বোধন উপলক্ষে বর্তমানে রাতদিন কক্সবাজার-মেরিন ড্রাইভ সড়কে অবশিষ্ট বাকি কাজ নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ১৬ ইসিবি’র প্রকৌশলীর সুদক্ষ টিম। গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ইনানী, সোনারপাড়া, চেপটখালী ও মনখালী এলাকায় কয়েকটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে সংস্কার কাজে নিয়োজিত হয়ে কর্মষজ্ঞ চালাচেছন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সফর সঙ্গীদের বহনকারী হেলিক্পটার অবতরণ করার জন্য ৪টি হেলিপ্যাড তৈরির কাজও চলছে। ১৬ ইসিবি’র প্রকৌশলী বিভাগ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করতে আসার আগেই ইন্শাল্লাহ আমরা কাজ সমাপ্ত করবো। এ জন্য বিরতিহীন ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
দয়িত্বশীল সুত্রে জানা যায়, উন্নত বিশ্বের আদলে নির্মিত সমুদ্রের কুল ঘেষে নান্দনিক মেরিন ড্রাইভ সড়কটি পর্যটকদের আনন্দ উচ্ছাস বাড়িয়ে দেবে। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্য আহরণ করার হাত ছানিতে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অভিভূত হয়ে বিশাল সমুদ্রের বুকে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পারবে সহজে। এ মহা মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ১৬ইসিবি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৪শত ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিণ ড্রাইভ সড়কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। গত ১২ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের একটি অনুষ্ঠানে পরিবহন সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের বলেছেন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের মেরিণ ড্রাইভ সড়কটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করবেন। এতে করে পর্যটন শিল্প বিকাশে সহায়তার পাশা-পাশি পর্যটকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনে বহুমাত্রা যোগ হবে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরো বিকশিত করতে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে পর্যটন বান্ধব কর্মসূচী। তৎমধ্যে মেরিণ ড্রাইভ সড়ক দেশী-বিদেশী পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। গত ২০ ফেব্রুয়ারী ইনানী সি-পার্ল হোটলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞনিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এ কথা গুলো বলেছিলেন। প্রকল্পের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের সঙ্গে টেকনাফকে সংযুক্ত করতে বিদ্যমান ৪৮ কিলোমিটার সাগর ও পাহাড় ঘেরা সড়কটি উন্নয়নে প্রাথমিক ভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সড়কের দৈঘ্য আরো ৩২ কিলোমিটার বাড়ানোর পাশা-পাশি ভূমি অধিগ্রহণ সহ আরো বিভিন্ন কাজ অর্ন্তভূক্ত করা হয়। ফলে ব্যয় বেড়ে গিয়ে ৪শত ৫৬ কোটি টাকাতে দাঁড়ায়। এতে মেয়াদ বর্ধিত করেন ২০১৮ সাল জুন পর্যন্ত। কিন্তু দ্রুততার সহিত কাজ করায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো আগেই কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি পর্যটক বান্ধব করতে দু’পাশে থাকবে ওয়াকওয়ে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে সড়ক জুড়ে থাকবে শেড, গাড়ী পার্কিং, চেঞ্জিন রুম। আরো থাকবে ফ্লেক্সিবল, পেভমেন্ট।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিণ ড্রাইভ সড়কে ৩টি বড় আরসিসি সেতু, ৪২টি বক্স কালভার্ট, ৩ হাজার মিটার সসার ড্রেন এবং ৫০ হাজার মিটার সিসি ব্লক ও জিও টেক্সটাইলও।
সূত্রে আরো জানায়, ৩ ধাপে মেরিণ ড্রাইভ সড়কটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে ইনানী থেকে শীলখালী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার। মেরিণ ড্রাইভ সড়ক ইতি মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। তৃতীয় ধাপে চলছে শীলখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার।
সুশীল নাগরিক সমাজের মতে মেরিণ ড্রাইভ সড়কটি পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশা-পাশি মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।