২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি উখিয়ার ১১ শহীদ পরিবার

Pic-25-03-15
যে সব মানুষের তাজা রক্তে বাংলার স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছিল, যাদের আত্মোৎসর্গের বিনিময়ে আজকের স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই মহান শহীদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটুকুও পায়নি। কক্সবাজারের উখিয়ায় এমন স্বীকৃতি বিহীন ১১ শহীদ পরিবারের উত্তরাধিকারীদের ক্ষোভ ও জিজ্ঞাসা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, মুক্তিযুদ্ধে যাদের কোন অবদান ছিল না তাদের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সম্মানীত হয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে দেখে লজ্জা লাগে এবং মনের মধ্যে অপরাধীর মত প্রশ্ন জাগে কেনই বা আমাদের পুর্ব পুরুষরা দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। এতোদিনও যাদের ভাগ্যে স্বীকৃতিটুকুও মিলল না।
শহীদ পরিবারের উত্তরাধিকার উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের নাপিত পাড়ার বাসিন্দা ব্রজেন্দ্র লাল শীলের ছেলে প্রদীপ শর্মা বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে আমি মায়ের গর্ভে ছিলাম। বাবা ব্রজেন্দ্র শীল রাঙ্গামাটি শহরে সেলুনের কাজ করতো এবং পাশা-পাশি সেখানকার স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম কমিটির সাথে সম্পর্ক ছিল। আমার যখন কিশোর বয়স, জ্ঞান বুদ্ধি হয় তখন মা সহ রাঙ্গামাটি গিয়ে জানতে পারি ১৩৭৮ বাংলার ১৩ বৈশাখ আমার বাবা অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে রাঙ্গামাটির প্রবেশ পথে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পর আমার জন্ম। আমার অসহায় অবলা মা হীরা বালা শীল খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে আমি ও আমার বড় দুই বোনকে মানুষ করে বিবাহ দেয়। অনেক কষ্ট সহ্য করে আমার মা কোন স্বীকৃতি না পেয়ে ২০০৪ সালে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য জাতির জনক তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৭/০৭/১৯৭২ সালে ৪৬৭ নং পত্রে মাধ্যমে আমার মাকে আন্তরিক সমবেদনা ও মহান ভুতি জানিয়েছিলেন এবং ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে শহীদ পরিবারের সাহার্য্যর্থে তৎকালীন কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসকের মাধ্যমে ২ হাজার টাকার অনদানের চেকও দিয়েছিলেন। প্রদীপ বলেন, সংসারে টানাপুড়নে আমিও আমার কিশোর ছেলে অন্যের দোকানে সেলুনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পেতে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়া দৌড়ি করতে করতে হয়রান হলেও স্বীকৃতি মেলেনি।
একই ইউনিয়নের মহাজন পাড়ার তৎকালীন জমিদার পুত্র মনিন্দ্র লাল বড়–য়া প্রকাশ ভুট্টা মহাজনের ছেলে শিমূল ও সলীল মহাজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব নিয়ে আর কিছু বলতে ইচ্ছে হয় না। তারা বলেন, যুদ্ধচলাকালে একদিন পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকাররা সকার ১০ টার দিকে আমাদের পাড়া ঘিরে আমাদের পিতা ও আত্মীয়-প্রতিবেশী যতিন্দ্র মোহন বড়–য়ার ছেলে মনিন্দ্র বড়–য়া প্রকাশ মনু বড়–য়া ও শেমল বড়–য়ার বাড়িতে লজিং থেকে পড়া-লেখা করত তৎকালীন এসএসসি পরীক্ষার্থী স্থানীয় মরিচ্যা বন বিট অফিসের বন প্রহরী গঙ্গাচরন দের ছেলে নির্মল চন্দ্র দে কে ধরে নিয়ে যায়। সেই থেকে এ পর্যন্ত আমার পিতা সহ তাদের আর কোন খোঁজ পায়নি। শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি নিয়ে বাঁচতে গিয়ে অনেকের নিকট ধর্না দিয়েছি, অনেকেই স্বীকৃতি আদায় করে দেওয়ার আশ্বাসে অনেক টাকা পয়ঁসা নিয়েছে কিন্তু স্বীকৃতি পায়নি। তাদের ক্ষোভ জানিনা আদৌ স্বীকৃতি পাব কি না। শহীদ মনু বড়–য়ার বড় ভাই তেজেন্দ্র বড়–য়া বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পরও এবং আমি নিজেই মুক্তিযুদ্ধ হওয়া স্বত্বেও আমরা কেউ স্বীকৃতি পায়নি। আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কাগজ থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনি। অথচ যারা মুক্তিযুদ্ধের ধারে কাছেও ছিল না, যাদের অনেকেই রাজাকারদের সাথে গোপন সম্পর্ক রেখে ভয়ে বার্মা পালিয়ে গিয়েছিল তাদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে দেখে বড় কষ্ট লাগে।
১৯৭১ সালে ছাত্র সংগ্রম পরিষদের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় উখিয়ার হলদিয়ার মরিচ্যা গ্রামের আবুল কাশেম সক্রিয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত সম্মান তিনি পাননি। এইচএসসি পাশ করার পর ১৯৭৯ সাল থেকে উখিয়ার মরিচ্যা বাজারে পল্লী চিকিৎসক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও আদর্শকে লালন করে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর থেকে সারা দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের অঘোষিত প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লোকজনদের উদ্ভুদ্ব ও সংগঠিত করেছিলাম তাদেরকে স্থানীয় রাষ্ট্রদ্রোহীরা নানা ভাবে হয়রানী করেছিল। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ পার্শ্ববর্তী দারিয়ার দীঘি বন বিট কর্মকর্তা এসএম শফিকুর রহমানকে দিয়ে আমাকে ১ নং আসামী করে আরো ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতির অভিযোগ এনে জিআর ৬১/৭১ মামলা দায়ের করে। দেশ স্বাধীনের পর মামলার বিষয় বস্তু আমলে নিয়ে ও পর্যালোচনা করে তৎকালীন কক্সবাজার মহকুমার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এসএস চাকমা ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল মামলাটি খারিজ করে আমাদের অব্যাহতি দেন। এ ভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বলে ডাঃ আবুল কাশেম জানান।
উখিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার পরিমল বড়–য়া বলেন, উখিয়ার বেশ কয়েকটি শহীদ পরিবার অনেক তদবির চেষ্টা করার পরও স্বীকৃতি পায়নি। তবে তাদের ব্যাপারে দ্রুত সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি। উখিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, স্বীকৃতি প্রভৃতি বিষয়ে অনেক বির্তক রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই হওয়া উচিৎ। সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শফিউল আলমের ছোট ভাই অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, আমাদের শ্রদ্ধয় বড় ভাই এটিএম জাফর আলম ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন সর্বোপরি ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতা প্রথম প্রহরে ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের আবাসিক ছাত্র এটিএম জাফর আলম সিএসপি অন্যান্যদের সাথে পশ্চিমা হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। অনেক চেষ্টা তদবির করার ৪২ বছর পর অবশেষে গত বছর আমরা শহীদ পরিবার হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে স্থানীয় সংগঠক ঘুনধুম জুনিয়র হাই স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোঃ ইলিয়াছ মাষ্টারকে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে উখিয়া থেকে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা তুলে নিয়ে গেলেও আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি এবং এ পর্যন্ত শহীদ পরিবার হিসেবে কোন স্বীকৃতি মেলেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শহীদ ইলিয়াছ মাস্টারের স্ত্রী কাজী সাজেদা বেগম। এছাড়াও মোট ১১ টি শহীদ পরিবার উখিয়ায় স্বীকৃতি বিহীন রয়েছে বলে উখিয়া মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল দাবী করেছেন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।