২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

হেফাজতের ৬৮ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৪ বছরেও

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীসহ সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম কর্মীদের নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা ৮৩ মামলার মধ্যে এখনও ৬৮ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এর মধ্যে পুলিশ হত্যা মামলাও রয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনার সঙ্গে শত শত মানুষের সম্পৃক্ততা থাকায় নির্দিষ্ট করে ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে দেরি হচ্ছে।

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ পাঁচ জেলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ৮৩টি মামলা হয়। কেবল রাজধানীতেই মামলা দায়ের হয়েছিল ৫৩টি। গত চার বছরে পুলিশ ১৫টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাটে একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এতে সব আসামি খালাস পেয়েছেন।

চার বছর আগে ২০১৩ সালের শুরুতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা বন্ধে আইন পাসসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল হেফাজতে ইসলাম। এটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাই হেফাজতের নেতৃত্বে ছিলেন। সংগঠনটির আমির ছিলেন হাটহাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তাকে সামনে রেখে এই আন্দোলনের সূচনা হলেও পরে এর রাজনৈতিক রূপও দেখা যায়। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল এই রূপটি।

চার বছর আগের ওই ঘটনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় ৮৩ মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয় বলে জানায় পুলিশ সদর দফতর। এসব মামলায় হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।

এরপর গত চার বছরে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এসেছে অনেক পরিবর্তন। সময়ের পরিক্রমায় হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের দূরত্বও কমে এসেছে। কোনও পক্ষই আর পরস্পরের মধ্যে তিক্ততা বাড়াতে চায় না। সে কারণেই হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তদন্তের গতি থমকে আছে। তা সত্ত্বেও হেফাজত নেতাকর্মীদের জন্য এসব মামলা খড়গ হয়েই থাকবে বলে মনে করেন হেফাজত নেতারা। তবে বর্তমানে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন মতে মিল থাকায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব মামলার নিষ্পত্তিও ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।

পুলিশ সদর দফতর জানায়, ৮৩টি মামলার মধ্যে রাজধানীর কলাবাগান থানায় দু’টি, রমনা থানায় একটি, শেরেবাংলা নগর থানায় একটি এবং বাগেরহাটে ছয়টি ও নারায়ণগঞ্জে পাঁচটিসহ মোট ১৫টি মামলায় ২০১৪ সালে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন মামলার মধ্যে এসআই শাহজাহান হত্যা মামলা, পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলাও রয়েছে।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিন এলাকার কয়েকটি থানায় বেশকিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেদিন অনেক ঘটনা ঘটেছিল। সে জন্য প্রতিটি আলাদা ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিছু মামলায় পুলিশ বাদী হয়েছে, কয়েকটি মামলায় ভিকটিমও বাদী হয়েছে। চল্লিশটিরও বেশি মামলা রুজু হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও অধিকাংশ মামলাই এখন পর্যন্ত তদন্তাধীন।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখানে (মতিঝিল) অনেক মানুষের সমাগম ঘটেছিল। সেক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে কোন ঘটনাটি ঠিক কাদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে তার তথ্য সংগ্রহ করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। যে মামলাগুলো একটু জটিল প্রকৃতির, অর্থাৎ যেখানে শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, সেসব ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল, তা জানতে সময় প্রয়োজন। যেহেতু সারাদেশ থেকেই মানুষ এসেছিল, তাদের পরিচয় খুঁজে বের করা এবং এরপর কোন ঘটনায় কার কী দায় ছিল বা কোন ঘটনাটিতে সামষ্টিক দায় ছিল— এসব বের করতে সময় লাগছে। এ কারণেই সব মামলার নিষ্পত্তি এখনও করা যায়নি।’

ওই ঘটনায় নিহত এসআই শাহজাহান হত্যা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এসআই শাহজাহান হত্যা মামলাও তদন্তাধীন রয়েছে। একজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার জবানবন্দিতে বেশকিছু সংগঠনের নেতার নাম এসেছে। তা যাচাই-বাছাই চলছে। এর বাইরেও নির্দেশনা প্রদানকারী ব্যক্তিদের নাম এসেছে। কিন্তু সরাসরি ঘটনাস্থলে থেকে যারা অংশ নিয়েছে, তাদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে এই মামলার তদন্ত এখনও চলছে। আমাদের একজন ট্রাফিক পুলিশকে হত্যাচেষ্টা মামলাটিও এখনও তদন্তাধীন। এসব মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদানকারী অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সরাসরি যারা ‘ফুট সোলজার’ হিসেবে কাজ করেছে, তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা যায়নি। সে কারণেই তদন্তে দেরি হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, হেফাজতের আন্দোলন চলার সময়ে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামীর নায়েবে আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন ও মাওলানা মমিনুল হকসহ হেফাজতের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধরপাকড় শুরু হলে হেফাজতের অনেক নেতা তখন আত্মগোপনে চলে যান। যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তারাও কিছুদিন কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসেন। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরাও এখন প্রকাশ্যে রয়েছেন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।