রাজনীতি ডেস্কঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার জন্য প্রস্তুত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রচারণায় বিভিন্ন চমকসহ ডিজিটাল মাধ্যমকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের প্রচার কমিটি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া কৌশলগত প্রচারণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দেশবরেণ্য অভিনয়শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী এবং চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের। এরইমধ্যে দফায় দফায় আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ করে নির্ধারণ করা হয়েছে প্রচারণা শুরুর তারিখ। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর, এরপর প্রতীক বরাদ্দের পর ১১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার পক্ষে প্রচারণা শুরু হবে।
বুধবার (৫ ডিসেম্বর) প্রচার কমিটির বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা প্রচারণার সামগ্রী ইতোমধ্যে যেগুলো প্রস্তুত করেছি, সেগুলো কীভাবে বণ্টন করা হবে; সেই বিষয়ে প্রচার কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেছি। এজন্য আমরা কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে দেশের অনেক অভিনয়শিল্পী, সেলিব্রিটি প্রচারের কাজে যুক্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকগুলো টিভিসি তৈরি করেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, আগামী ১১ তারিখ সকাল ১১টায় এফডিসির সামনে থেকে অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে ঢাকা শহরে প্রচারপত্র বিলির কাজ শুরু করবো। অভিনয়শিল্পীরা ঢাকার বাইরেও যাবেন প্রচারণার কাজে। চট্টগ্রামসহ কয়েকটি শহরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ তারিখ টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত ছাড়াও সেখানে সুধীমহলের সঙ্গে মতবিনিময় ও একটি জনসভা করার প্রস্তাব খসড়ায় রয়েছে। পরদিন পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটালীপাড়ায় সমাবেশ হতে পারে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোও খসড়া সফরসূচিতে রয়েছে। খসড়া পরিকল্পনায় একাধিক বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে। তবে, রুট, পরিবহন ব্যবস্থা, স্থান ও সময়ের ওপর ভিত্তি করে সার্বিক সফরসূচি চূড়ান্ত হবে।
সূত্রমতে, টুঙ্গিপাড়ার পর প্রধানমন্ত্রী খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল এবং যশোর হয়ে ঢাকা ফিরতে পারেন। যাওয়া ও আসার একটি হতে পারে সড়ক পথে। এছাড়া জেলাগুলোও তিনি সফর করবেন সড়ক পথেই। ঢাকা ফিরেই বঙ্গবন্ধু কন্যা যেতে পারেন সিলেটে হযরত শাহজালাল (রা.) এবং হযরত শাহ পরানের (রা.) মাজার জিয়ারতে। সিলেট শহরেই একটি জনসভায় অংশ নিয়ে ওই অঞ্চলের প্রস্তাবিত দুটি রুটের একটি হয়ে তিনি রাজধানীতে ফিরবেন। প্রস্তাবিত রুটের একটি হলো সিলেট থেকে সড়ক পথে সুনামগঞ্জ হয়ে অথবা সড়ক পথে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরা। সিলেটে যাওয়ার অথবা ফেরার পথে একবার বিমানে এবং আরেকবার সড়ক পথে যাতায়াত করবেন তিনি। এছাড়া ময়মনসিংহসহ ওই অঞ্চলের কয়েকটি জেলা এবং রংপুরসহ ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা সফরে যেতে পারেন সরকার প্রধান। সফরে তিনি জনসভার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা। এরমধ্যে আছেন, নাট্য অভিনেতা জাহিদ হাসান, তার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ, শমী কায়সার, আফসানা মিমি, তানভিন সুইটি, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, রিয়াজ, শাকিল খান, অরুণা বিশ্বাসসহ আরও অনেকে। দলীয় প্রচারের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তাদেরকে প্রচার কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান এমপি ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ গান তৈরি করেছেন দলের প্রচারণার জন্য। সেগুলো সিডি আকারে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করা হবে।
দলের প্রচার কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কতগুলো ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করা হয়েছে। ভিডিও কন্টেন্টগুলো শিল্পীরা তাদের ফেসবুকে শেয়ার করবেন। ভিডিও কন্টেন্টগুলো তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতির বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে। আওয়ামী লীগকে কেন আবার ক্ষমতায় আনা জরুরি সেসব বিষয় দেশবরেণ্য শিল্পীরা নিজ মুখে ভিডিও কন্টেন্টে তুলে ধরেছেন। এছাড়া তরুণ ও নতুন ভোটারদের কাছে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতেও কিছু ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র, যেখানে মূল আকর্ষণ হিসেবে পদ্মাসেতুকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, তারিক আনাম খান, চিত্রশিল্পী হাসেম খান, মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রশিল্পী নাসির উদ্দিন ইউসুফের মতো সম্মানিত ব্যক্তিদের ভিডিও বার্তা; যা ধারণ করা হয়েছে শিখা চিরন্তনের সামনে।
প্রচার কমিটি সূত্রে আরও জানা গেছে, কবে, কে, কোথায় এবং কীভাবে তাদের নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবেন এবং তা কীভাবে সফল করবে সেই বিষয়েও বৈঠক করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিলি, ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন, পথনাটক, কণ্ঠশিল্পীদের লাইভ গান ও অন্যান্য ইভেন্ট বেইজড প্রচারণা চালাবেন অভিনয়শিল্পী ও কণ্ঠশিল্পীরা।
পাশাপাশি প্রচারণায় থাকছে ছাপা কাগজে ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের চিত্র। সেগুলো বিলি করা হবে সাধারণ মানুষের কাছে। এছাড়া গ্রাফিক্স ব্যবহার করে নানা ধরনের পোস্টার তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে দলের প্রকাশনা কমিটি। এসব পোস্টারে আওয়ামী লীগের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া হবে। এছাড়া গত ১০ বছরে সরকারের করা উন্নয়নের বিষয়ে পকেট সাইজ পুস্তিকাও প্রচার করা হবে।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা মনে করছেন, বর্তমান সরকার সাড়ে ৯ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তার ঠিক চিত্র গ্রাম পর্যায়ে তুলে ধরতে পারলে আগামীতেও জনগণ নৌকাকে বেছে নেবে। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সেসব পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে নিমিষেই পৌঁছে এবং তাদের আকৃষ্ট করতে সেলিব্রিটিদেরকে প্রচারণায় যুক্ত করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।