সিবিএন ডেস্ক:
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে শিগগির। এজন্য ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও আরো ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এই ৯টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে ৬ হাজার ১৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ তেমন কিছু বলেননি। তবে সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছেন। বেশি করে ফল খেতে বলেছেন।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর কোনো আবেগের জায়গা নয়। এটা প্রয়াজন। এ প্রকল্পের কিছু ব্যয় বেশি ধরা আছে। এক্ষেত্রে সব ব্যয় সরলীকরণ করলে হবে না। এর যথেষ্ট কারণও আছে। যেমন পায়রা ও মাতারবাড়ির জমির কনফিগারেশন এক নয়। তাছাড়া মাতারবাড়ীর সড়ক কোনো সাধারণ সড়ক হবে না। এগুলো মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো হবে।’
‘‘আমাদের অর্থনৈতিক কলেবর বাড়ছে। এ জন্য বিদ্যমান সমুদ্রবন্দরগুলো দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাই মাতারবাড়ীতে চতুর্থ বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর হবে। চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা বন্দরের পরে এটাই হবে সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর। এছাড়া মাতারবাড়ীতে আমাদের অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে।’’
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ দ্রুত শুরু করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল এবং ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
তিনি আরও জানান, একনেকে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আপেল আমদানি কমে গেছে। কেন না মানুষ এখন দেশি বরই খাচ্ছে বেশি।
এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, ‘সারাবিশ্ব করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বের বাইরে নয়। সুতরাং এখানেও প্রভাব পড়বে। তবে কতটুকু প্রভাব পড়বে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ইতোমধ্যেই চীন থেকে অনেক ব্যবসা দেশে আসতে শুরু করেছে। এটি ইতিবাচক দিক।’
এডিপি সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে কিছুটা প্রভাব বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পড়লেও খুব বেশি আশংকার কিছু নেই। চলতি অর্থবছরে ৮ মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৭ দশমিক ০৯ শতাংশ।
মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, লেবু খালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেস ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
এছাড়া ১১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, ১৬১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, ৫৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলাধীন পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প।
আরও রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০ তলা ভিত বিশিষ্ট দুটি বেইজডসহ ১০ তলা প্রধান কার্যালয় নির্মাণ কাজ প্রকল্প। এতে খরচ ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প। এর খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।