২০ এপ্রিল, ২০২৫ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২১ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী

২০২১ সালে জাতিসংঘ গৃহীত রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা সংকট মোকাবেলায় যথোপযুক্ত নয় -সিসিএনএফ


নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০২১ সালের জন্য জাতিসংঘ গৃহীত রোহিঙ্গা সাড়াদান পরিকল্পনাকে (জেআরপি) সংকট মোকাবেলায় যথোপযুক্ত নয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছে কক্সবাজারে কর্মরত ৫০টি স্থানীয়-জাতীয় এনজিও-সুশীল সমাজ সংগঠনের নেটওয়ার্ক সিসিএনএফ।
আগামী ১৮ মে জেআরপির আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা উপলক্ষ্যে ১৬ মে আয়োজিত ‘জাতিসংঘের রোহিঙ্গা সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) ২০২১: শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় যথোপযুক্ত নয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সিসিএনএফ’র কো-চেয়ার এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের র্নিবাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
এতে আরও বক্তৃতা করেন- পালস’র নির্বাহী পরিচালক, আবু মোর্শেদ চৌধুরী, ইপসার প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আরিফুর, মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল দে সরকার এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক মো. মজিবুল হক মনির।
রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, জেআরপি/রোহিঙ্গা প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা ২০২১ তৈরির সময় স্থানীয় ও জাতীয় এনজিও প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে লিখিত মতামত পাঠানো হয়েছিলো, এবং তারা গত ৬ই মে বিষয়টি নিয়ে একটি ওয়েবিনারেরও আয়োজন করা হয় যেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। তবে রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের মতামত উক্ত দলিলটিতে প্রতিফলিত হয়নি বললেই চলে। তিনি আরও বলেন, গত ৪ বছরে জাতিসংঘের বিদেশি কিছু কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত ইন্টার সেকটোরাল কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ বা আইএসসিজি রোহিঙ্গা কর্মসূচির জন্য প্রাপ্ত তহবিলের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি।
প্রাপ্ত অর্থের কত অংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বয় করা হয়েছে, স্থানীয় উৎস্য থেকে কেনাকাটায় কত ব্যয় করা হয়েছে, স্থানীয়দের মধ্য হতে কতজনকে নিয়োগ করা হয়েছে এসব তথ্যও বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারেনি। স্থানীয়-জাতীয় এনজিও এবং অনেক আন্তর্জাতিক এনজিওর (যেমন আইএফআরসি ও এমএসএম) কার্যক্রম, তাদের প্রাপ্ত অর্থের তথ্য জেআরপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না। তাই আইএসসিজি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় কতটা কার্যক্রর সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।
তাছাড়া ভবিষ্যত পরিস্থিতির বিশ্লেষণ নেই জেআরপিতে, আগামী ৫ বা ১০ বছরে কোনও প্রত্যাবাসন না হলে এই সংকট মোকাবেলায় কী করা হবে সেটা এখনি ভাবা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে অতিরিক্ত ঘনবসতি একটি বড় সমস্যা, এই সমস্যা নিরসনে সিসিএনএফ ইতিমধ্যে সহজেই স্থানান্তরযোগ্য এবং স্থাপনযোগ্য দু’তলা ঘরের সুপারিশ করে আসছে। যেহেতু রোহিঙ্গাদের ৬৫% যুবক-কিশোর, তাই তাদের জন্য প্রয়োজন স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা, তাদের জন্য আয়ের ব্যবস্থাও থাকতে হবে, যাতে তারা কোনও সন্ত্রাস ও অবৈধ কার্যকলাপের দ্বারা প্রলুব্ধ না হয় এবং চলমান কক্সবাজার উন্নয়নের জন্য হুমকিতে পরিণত না হয়।
আবু মোশেদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় পৃথক তিনটি লাইন বা কর্তৃপক্ষ আছে যেমন- আইএসসিজি, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসিসি) এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। কর্মসূচি এবং তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি একক কর্তৃপক্ষ ও একক তহবিল ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। তিনটি সংস্থার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হওয়া উচিৎ, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের (সংসদ সদস্য), স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, স্থানীয় এনজিও এবং মিডিয়া প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গঠিত সেই কমিটির মাসিক ভিত্তিতে সমন্বয় সভা হতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সংক্রান্ত পরারাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটিগুলিতেও সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণ থাকা উচিত।
বিমল দে সরকার বলেন, রোহিঙ্গা অর্থায়নের স্থানীয়করণ নিশ্চিত করতে ’লোকালাইজেশন রোডম্যাপ’ প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশে জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত লোকালাইজেশন টাস্ক ফোর্স (এলটিএফ), এই সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত হয়েছে এবং ২০২০ সালের নভেম্বরে জমা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো সেই প্রতিবেদনটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। স্থানীয়করণ কম খরচে কর্মসূচি পরিচালনা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অপরিহার্য। মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় এনজিওদের কাছে থাকতে হবে, জাতিসংঘের এজেন্সিগুলি এবং আইএনজিও কেবলমাত্র মনিটরিং এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মধ্যে তাদের কাজ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
আরিফুর রহমান বলেন, অর্থ সহায়তার স্বচ্ছতা থাকা উচিত, যেমন সিসিএনএফ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ৪৮৮ ডলার আসে, কিন্তু পরিবারগুলোতে প্রত্যক্ষ সেবা ও উপকরণ পাওয়া গেছে এর এক তৃতীয়াংশের মতো অর্থাৎ ১৩০ ডলার। মোট প্রাপ্ত তহবিলের মধ্যে স্থানীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এসেছ মাত্র ৪% । ২০২১ সালের পর যেন বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন না হয়, সে লক্ষ্যে দক্ষতা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে।
মো. মজিবুল হক মনির বলেন, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২১ হাজার শরণার্থী প্রতিজন প্রতিদিন ৩.৩ টন বর্জ্য তৈরি করে থাকেন, যার বেশির ভাগই প্লাস্টিক বজ্য। উখিয়া এবং টেকনাফে ভূগর্ভস্থ পানির নিচে নেমে যাচ্ছে, সুতরাং প্লাস্টিক ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত, এবং গভীর নলকূপ স্থাপনও নিষিদ্ধ করতে হবে। নদীর পানি পরিশোধন করে তা সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং পরিবশের ক্ষতিপূরণের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।