বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের প্রায় অর্ধশত স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দাগি অপরাধী সহ ছিনতাইকারী চক্র। মঙ্গলবার পৃথক ভাবে একজন আইনজীবী ও একজন এনজিও কর্মী ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার ঘটনায় পুরো শহরজুড়ে আতংক দেখা দিয়েছে। বলতে গেলে শহরে প্রতিনিয়ত ছোট বড় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। যার ফলে ভেঙ্গে পড়েছে জেলা শহরের আইশৃংখলা পরিস্থিতি। পর্যটন শহর কক্সবাজার, হোটেল-মোটেল জোন ও সমুদ্র সৈকতে অন্তত শতাধিক পেশাদার ছিনতাইকারী ও ছিনতাই চক্রের টমটমপার্টি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শহরের দুর্গম এলাকায় আস্তানা গড়ে শহরজুড়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে এই চক্রটি। বিশেষ করে কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া, মোহাজেরপাড়া, বাসটার্মিনাল এলাকা, বাদশাঘোনা, হালিমা পাড়া, সমিতি পাড়া, সার্কিট হাউস এলাকা, হোটেল মোটেল জোন, লাইটহাউস পাড়া, সাহিত্যিকা পল্লী, পাহাড়তলী, দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া, পেশকারপাড়া ও কলাতলী আদর্শ গ্রাম কেন্দ্রীক বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র বিভিন্ন আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সক্রিয় রয়েছে। ছিনতাইকারী দলে দলে বিভক্ত হয়ে সমুদ্র সৈকতসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার নির্জন স্থানে ছিনতাই করে থাকে। বিশেষ করে ভোরে ও রাতে এরা তৎপর থাকে সবচেয়ে বেশি। আবার পর্যটন মৌসুমে এরা শহরের সমুদ্র সৈকত, ডায়াবেটিকস পয়েন্ট ও ঝাউবাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ওৎপেতে থাকে। অন্য সময় এরা বৃহত্তর পাহাড়তলী, হোটেল মোটেল জোন, রুমালিয়ারছড়া ও ঘোনারপাড়ায় পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে থাকে। কেউ বাধা দিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টা পার হলেও কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট রেজাউল করিম রেজা ও এনজিও কর্মী ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহতের ঘটনা কোন ধরনের কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলে দাবি করেন। এদিকে গতকাল বুধবার এর প্রতিবাদে আদালত চত্বরে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ব্যানারে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা দ্রুত ছিনতাইকারী চক্রদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি তুলেন এই মানববন্ধনে।
কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৩ স্পেশাল পি.পি. এড. একরামুল হুদা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী নিজ বাড়ি থেকে ফিরে এডভোকেট রেজাউল করিম রেজা কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এসে কলাতলী আসার জন্য একটি সিএনজি-তে উঠেন। সিএনজি’র পেছনের সিটে আগে থেকেই ২ জন যাত্রী ছিলো। সিএনজিটি টার্মিনাল থেকে কলাতলী আসার পথে উত্তরণ গৃহায়ণ সমিতির নিকটে আসলে চালক সিএনজিটি থামিয়ে ফেলে। সাথে সাথে সিএনজিতে আগে থেকেই থাকা ২ জন যাত্রী এডভোকেট রেজাউল করিম রেজাকে চুরি উচিয়ে জাপ্টে ধরে সব কেড়ে নিতে থাকে। এসময় এডভোকেট রেজাউল করিম রেজা ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তাঁর শরীরের সামনে নাভীর বাম পাশে ও পিটের নীচে গুরতর আহত হয়। ওই সময় যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা এডভোকেট রেজাউল করিম রেজা’র কাছ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ সহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে নেয় এবং একই সিএনজি নিয়ে ছিনতাইকারীরা ফ্লিমি স্টাইলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরে এডভোকেট রেজাউল করিম রেজাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে সেখানে জরুরি বিভাগে তাঁর দেহে ছুরিকাঘাতে কেটে যাওয়া সামনে নাভীর বাম পাশে ৬ টি সেলাই ও পিটের নীচে ৪ টি সেলাই দেওয়া হয়। চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পর এডভোকেট রেজাউল করিম রেজা কক্সবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ার ছরার নিজ বাসভবন “ছগির ম্যানশন” রয়েছেন।
অপরদিকে মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৬ টার দিকে শহরের সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী প্রিয়তোষ বেদজ্ঞ। এ ঘটনায় রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরী দাখিল করতে গেলে সেটি গ্রহন না করে উল্টো মোবাইল হারানো বা চুরির জিডি করার পরামর্শ দেয়া হয়। প্রথমে থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও পরে ওসি এ পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) সেলিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পৃথক ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে অভিযান চলছে বলে দাবি করেন। কোন ধরনের সফলতা আছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সহসাই সু-খবর পাবেন।
জানতে চাইলে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, তিনি যোগদানের পর অপরাধ রোধে বিভিন্ন সফলতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, শহরের দাগি ও চিহ্নিত অপরাধীদের বহুবার আটক করা হয়েছে। এসব অপরাধীরা সহসাই জামিনে বেরিয়ে আসার কারনে কিছু বিছিন্ন ঘটনা ঘটছে।
ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে চুরি বা হারানোর জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করার পরামর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রকৃত তথ্য দিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করবেন। ভুক্তভোগী কেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি করবেন? আমি মনে করি প্রকৃত তথ্য দিয়ে অভিযোগ করা উচিত।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।