হুমায়ুন সিকদার:
বস্তুনিষ্ঠতা ও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় পথচলা ২৬ বছরে দৈনিক হিমছড়ি। সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করে দৈনিক হিমছড়ি পাঠকের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সমর্থ হয়েছে।
সংবাদপত্র শিল্পের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। এর পথচলা আদৌ কুসুমাকীর্ণ ছিল না। নানা বন্ধুর পথ পেরিয়ে সংবাদপত্র আজ শিল্পের মর্যাদায় আসীন। যে পত্রে সংবাদ পরিবেশিত হয় বা বিদেশীদের সহস্র সংবাদকে বুকে ধারণ করে যে পত্র সর্বসাধারণের সামনে পরিবেশিত হয় সে পত্রকে সংবাদপত্র বলে। এ জন্য সংবাদপত্রকে Current History বা ইতিহাস চলন্তিকা বলে। সংবাদপত্রকে ইংরেজীতে News Paper বলে। কেননা চর্তুমেরুর সংবাদ পরিবেশিত হয় News শব্দটির পূর্ণরূপ হচ্ছে N-North, E-East, W-West, S-South.অর্থাৎ উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ তথা চর্তুদিকের খবরের সমন্বয় জালের সমাবেশ। বলা বাহুল্য ওই কাগজের চলতি বিশ্বের খবরা খবর লিপিবদ্ধ হয়। তাই একে সংবাদপত্র বা ইতিহাস চলন্তিকা বলা হয়। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম চীনে সংবাদপত্রের প্রচলন শুরু হয় বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। এরপর ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও রুমসহ আস্তে আস্তে সারাবিশ্বে সংবাদপত্র চালু হয়।
বর্তমান প্রযুক্তি যুগে সংবাদপত্র ঘটনা প্রবাহ জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সংবাদপত্র বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। মাসিক, পাক্ষিক, সপ্তাহিক ও দৈনিক। অন্যান্য বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সংবাদপত্র রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ জেলা কক্সবাজারে রয়েছে ২০’র অধিক দৈনিক। তৎমধ্যে কক্সবাজার পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ‘হিমছড়ি’ নামকে ধারণ করে প্রকাশিত হয়েছে ‘দৈনিক হিমছড়ি’। হিমছড়ি জেলা সদর থেকে ১০ কি:মি দক্ষিণে ঝর্ণাবেষ্টিত নয়নাভিরাম লীলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে প্রতিবছর দেশে-বিদেশ থেকে লক্ষ কোটি মানুষ আগমণ করে থাকে এক নজর দেখার জন্য। সত্যিকার অর্থে ওই নামকে ধারণ করে প্রকাশিত হয়েছিল আজ থেকে ২ যুগ আগে এই পত্রিকাটি। ১৯৯৭ সালে কক্সবাজারে শুধুমাত্র পত্রিকা ছিল ৩টি। তৎমধ্যে দৈনিক হিমছড়ি, দৈনিক কক্সবাজার ও দৈনিক সৈকত। তখন লেটার প্রেসে পত্রিকা ছাপানো হতো। লেটারে প্রেসে পত্রিকা ছাপানো কত কষ্টকর তা যারা প্রত্যক্ষদর্শী তথা তখনকার পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলেন তারাই একমাত্র ভূক্তভোগী। এরপরেই প্রকাশিত হয় দৈনিক আজকের দেশ বিদেশ ও দৈনিক বাঁকখালী।
১৯৯৯ সালে স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যাদি নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। ২ দশক আগে দৈনিক বাঁকখালীতে ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করে নিয়মিত সাংবাদিকতা পেশা শুরু। এ পেশায় দৈনিক বাঁকখালীই আমার হাতেখড়ি। এরপরে শ্রদ্ধেয় জনাব শারেক ভাই’র আহ্বানে ২০০৮ সালের অক্টোবরে দৈনিক হিমছড়ি পরিবারের সদস্য হয়ে অদ্যাবধি কর্মরত আছি। নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে ১২ ডিসেম্বর। তখন কক্সবাজারে ৬টি পত্রিকা প্রকাশিত হতো- দৈনিক হিমছড়ি, দৈনিক কক্সবাজার, দৈনিক সৈকত, দৈনিক আজকের দেশবিদেশ, দৈনিক বাঁকখালী ও দৈনিক দৈনন্দিন। তখনকার সময়ে অনলাইনের ব্যাপক ব্যবহার ছিল না। সংবাদ সংগ্রহে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যেতাম ওই সময়। এছাড়া ওই আমলে অফিসে জনবল কম থাকায় রুটিন মাফিক রাতের দায়িত্ব পালনের পর সকালে লঞ্চঘাটে পত্রিকার বান্ডিল দিয়ে আসা এবং অসংখ্যবার অফিসের জন্য চা- নাস্তা আনাসহ আন্তরিকতার সহিত হকারের দায়িত্ব পালন করেছি।
একইভাবে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শ্রদ্ধেয় জনাব শামসুল হক শারেক ও বর্তমান সম্পাদক জনাব হাসানুর রশীদ ভোর সকালে অফিসে এসে জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পত্রিকা পৌঁছেছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করতেন। এছাড়া সহকর্মী কাইসারুল ইসলাম বিজ্ঞাপন বিভাগের দায়িত্বের পাশাপাশি ভোর বেলায় সার্কুলেশন বিভাগও দেখাশুনা করতেন। মুলত তখন বলতে গেলে আমরা ৪জনই এ পত্রিকায় সাংবাদিক, ষ্টাফ ও হকার। হিমছড়ির এ পর্যন্ত পথচলা আমাদের ত্যাগ ও অবদান কোন অংশে কম নয়। কোন একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতি ও স্থায়ীত্ব করার নিমিত্তে কিছু ব্যক্তিবর্গের ত্যাগ-কোরবানী ও আন্তরিক পরিশ্রম থাকে। দৈনিক হিমছড়িতে এ ৪ জনেরই ওই ত্যাগও আন্তরিক পরিশ্রমে এ পর্যন্ত চলমান। অনেকটা সেই আলোচিত পক্তির মতো
‘যখন তোমার কেউ ছিলনা, তখন ছিলাম আমি/আমরা- এখন তোমার সব হয়েছে পর………।’
শিকড়সন্ধানী একটি পত্রিকা দৈনিক হিমছড়ি।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় গণমাধ্যম হিসেবে পাঠকের কাছে নন্দিত ও সুপরিচিত। শহর ছাড়িয়ে দৈনিক হিমছড়ি পৌঁছে গেছে গ্রামগঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দৈনিক হিমছড়ি দেশ ও দশের কথা বলে, মাটি ও মানুষের কথা বলে। জেলার পাঠকের মন জয়ে হিমছড়ি অন্যতম শীর্ষ দৈনিকের তালিকায় যে স্থান দখল করেছে, তা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
আংশিক নয় পুরো সত্য প্রকাশের দৃঢ় অঙ্গীকার হৃদয়ে ধারণ করে ২৬ বছর আগে আজকের এই দিনে যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক হিমছড়ি । নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ফেলে আসা দিনগুলোতে মানুষের সুখ-দুঃখ, বেদনা আর আনন্দের সাথী হয়ে মানুষের তথ্য জানার ও পাওয়ার অধিকারটা সমুন্নত রেখে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে প্রয়োজনীয়, অথচ না জানা যত দৈনন্দিন সংবাদ এবং সংবাদের পেছনের সংবাদ, যা পত্রিকাটাকে এনে দিয়েছে পাঠকপ্রিয়তা। দৈনিক হিমছড়ি এখন পাঠক নন্দিত দৈনিক পত্রিকা-যেটা স্হানীয় দৈনিকের মধ্যে অধিকতর পাঠকপ্রিয় হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তির সংগ্রামী জীবন, সফলতা, আবিষ্কার, জীবনের বেড়ে ওঠা ও সফলতার গল্প, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা দিক ফুটে ওঠে। পক্ষান্তরে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সমকালীন বিষয় নিয়ে আলোচনায় সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অভিমত প্রকাশ পায়। মানুষের অধিকার, দুঃখ ও দুর্দশা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে অসংখ্য পাঠকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে দৈনিক হিমছড়ি ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।