রাশেদুল মজিদ : কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া বাজার ইজারা নিলাম হয়েছে ভ্যাট-আয়করসহ এক কোটি ৯২ লাখ টাকায়। অথচ ওই বাজারটি গেল অর্থবছরেও ইজারা হয়েছিল মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এটির সরকারি নির্ধারিত দর ছিল ৭৭ লাখ টাকা। গত বছরের ইজারা মূল্য এবং চলতি অর্থবছরের সরকারি দর ছাপিয়ে এক লাফে সর্বোচ্চ ইজারা মূল্য উঠেছে এক কোটি ৬০ লাখ টাকায়। যা ভ্যাট-আয়কারসহ এক কোটি ৯২ লাখ টাকা। এটি কক্সবাজার জেলার মধ্যে হাট-বাজার ইজারায় সর্বোচ্চ নিলামের মধ্যে অন্যতম ডাক বলে অংশগ্রহনকারীরা জানিয়েছেন। শুধু এটি নয়, লিংক রোড বাজার, সদর উপজেলা বাজার, বাংলাবাজারসহ ১৯ টি হাট-বাজার ইজারাতেই গতকাল বৃহস্পতিবার ইজারার দরপত্র খোলার পর এ চিত্র উঠে এসেছে। আর এ ঘটনায় উৎফুল্ল হয়েছেন ইজারা দরপত্র আহবানকারী কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন। তিনি গতকাল রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুনেছি ইতিপূর্বে একটি সিন্ডিকেট সমঝোতার মাধ্যমে কম মূল্যে বাজারটির ইজারা হাতিয়ে নিতো। এখন সেই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। যার কারণে ইজারা দরপত্রে প্রতিযোগিতা হওয়ায় সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তি এক লাফে বেড়ে গেছে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি।’ আর তাতেই খোশ মেজাজে আছেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছরের জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলার ১৯ টি হাট-বাজার ইজারা দেয়ার জন্য গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহবান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত খরুলিয়া বাজারের দরপত্রে অংশ নিতে ৪৮টি দরপত্র ফরম বিক্রি হয়। ফি বছরের ন্যায় দরপত্র সমঝোতায় অংশ নিতেই এতো বেশি ফরম ক্রয় করেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। যথারীতি দফায় দফায় বৈঠকের পরও শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়ায় ৪৮টি ফরমের মধ্যে গতকাল দরপত্র ফরম দাখিলের দিনে জমা পড়ে মাত্র ১৫টি। সমঝোতা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায় ইজারা মূল্য। কিন্তু ৭৫ লাখ টাকার বাজারের ইজারা মূল্য এক লাফে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা উঠে যাওয়ায় হৈচৈ পড়ে যায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। অপরদিকে সরকারি রাজস্ব বেড়ে যাওয়ায় বেজায় খুশি হয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, গতকাল দরপত্র দাখিলের দিনে বাজারটির সর্বোচ্চ ইজারা মূল্য দিয়েছেন হাসান মুরাদ নামের এক ব্যক্তি। তার দাখিলকৃত মূল্য এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা ভ্যাট-আয়করসহ দাঁড়াবে এক কোটি ৯২ লাখ টাকায়। এরপর আছেন যথাক্রমে শাহাজাহান আনছারী এক কোটি ৫২ লাখ টাকা, কে এম রহিম এক কোটি ৫১ লাখ টাকা, আবদুল মান্নান ভূট্রো এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা, রহিম এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা, মো. শরিফ এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা, মো. আলম এক কোটি ৩২ লাখ টাকা, নুরুল আমিন ভূট্রো এক কোটি ৩০ লাখ টাকা, মা এন্টারপ্রাইজ এক কোটি ২০ লাখ টাকা, হাবিবুল ইসলাম এক কোটি ২০ লাখ টাকা, শাহিনুল এন্টারপ্রাইজ এক কোটি ১৫ লাখ টাকা, ফজল করিম এক কোটি ১৪ লাখ টাকা, সালাউদ্দিন সেতু ৯৫ লাখ টাকা, মা আমিনা এন্টারপ্রাইজ ৮১ লাখ টাকা। এছাড়া সাড়ে ৭ লাখ টাকার লিংক রোড বাজার ২৫ লাখ টাকায়, ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বাংলাবাজার ১৫ লাখ টাকায়, ১৩ লাখ ২১ হাজার টাকার সদর উপজেলা কাঁচা বাজার ৩২ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে। এভাবে ১৯টি হাট-বাজার ইজারায় সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ায় বাড়তি রাজস্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় লোকজন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, খরুলিয়া বাজারসহ অন্যান্য যেসব বাজার সরকারি ইজারা মূল্যের চেয়ে দ্বিগুনের বেশি মূল্যে ইজারা নিয়ে কার্যত সাধারণ লোকজনকেই হয়রাণী করবেন ইজারাদার। বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে নিতে তারা সাধারণ ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হতে পারেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোন সুযোগ নেই। ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজনকে হয়রানী করলে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বাজার নজরদারি ও তদারকীর মধ্যেই রাখা হবে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।