২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি

বিসিএসে সংস্কার আসছে

bcs_kalerkantho_picবিসিএস পরীক্ষায় ব্যাপক সংস্কার আনছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। সময় বাঁচিয়ে অল্প সময়ে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা পদ্ধতি পাল্টে স্বল্পমেয়াদি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে লিখিত পরীক্ষা হবে ৫০০ নম্বরের। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে মৌখিক পরীক্ষার নম্বরও কমিয়ে আনা হবে। ‘একজন পরীক্ষকই সর্বেসর্বা, তিনি যা বলবেন তাই ঠিক’—এ পদ্ধতি পাল্টে সব খাতাই রিচেক করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। পরীক্ষার এসব খাতা বাসায় নেওয়া যাবে না। পিএসসিতে বসেই খাতা দেখা শেষ করতে হবে। আরো বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তনের মাধ্যমে পরীক্ষা পদ্ধতির খোলস পাল্টে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পিএসসি।

পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘বিসিএস পরীক্ষার সংস্কারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক আমাদের (সদস্যদের) সাথে কথা বলেছেন। আমাদের মৌখিক সম্মতি পাওয়ার পর জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথেও আলোচনা করেছেন। সংশ্লিষ্টরা গ্রিন সিগন্যাল দেওয়ার পরই এসব নিয়ে কাজ শুরু করেছে পিএসসি।’

পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার ও পিএসসির আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ কাজও শুরু করেছেন। তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে পিএসসিকে নির্বাচন কমিশনের মতো ব্যয় বিভাজনের আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। গত ২৬ অক্টোবর অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের আর একটি মাত্র কমিশন আছে, তা হলো বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনকে এরই মধ্যে বরাদ্দকৃত বাজেটের মধ্যে ব্যয় বিভাজনের আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এই স্বাধীনতা দিয়ে সরকার যে প্রশংসার কাজটি করেছে তা একই ধরনের প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশনকেও দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা শিগগিরই এ-সংক্রান্ত আর্থিক স্বাধীনতা পিএসসিকে দেবেন।

একজন সদস্যের দেওয়া এসব তথ্যের সত্যতা জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। বর্তমান যুগে একজন প্রার্থীর পক্ষে মাসের পর মাস ধরে পরীক্ষা দেওয়া সত্যি কষ্টকর। জটিল পরীক্ষা পদ্ধতির জন্য অনেক মেধাবী প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় অংশ নেন না। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু কারণে আমরা কিছু সংস্কার করব। তবে এই সংস্কারের জন্য একটু সময় লাগবে। কারণ বর্তমানের যে পদ্ধতি তা রাতারাতি পাল্টে ফেলা যাবে না। এগুলো চালু রেখেই আমরা সংস্কার করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিভিন্ন পরীক্ষার নম্বর কমালেও প্রার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ে কোনো ঘাটতি হবে না। কারণ কম নম্বরের মধ্যেও স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্ন করে প্রার্থীর মেধা ও যোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব। যথাযথ মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য কেবল দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা নিতে হবে—এমন কোনো কথা নেই।’

বর্তমান বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি তিন স্তরবিশিষ্ট। ২০০ নম্বরের এমসিকিউ টাইপের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর প্রার্থীদের বসতে হয় লিখিত পরীক্ষায়। ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার পর তৃতীয় স্তরে ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি ও বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০০ করে ৬০০ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ১০০ করে মোট ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পিএসসির একজন সদস্য জানান, এই ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিতে পিএসসির এক মাসের বেশি সময় লেগে যায়। ৩৭তম বিসিএসের প্রার্থী ছিল দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে আট হাজার ৫২৩ জনকে বাছাই করা হয়েছে এক হাজার ২২৬টি পদের জন্য। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করতেই আট মাস সময় লেগেছে। এই দীর্ঘ সময় প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এরপর লিখিত পরীক্ষা তো আছেই। মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৩৭তম বিসিএসের ফল প্রকাশের প্রত্যাশিত তারিখ হচ্ছে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট। এ অবস্থায় পিএসসি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি সময়োপযোগী নয়।

তাই এটা পরিবর্তন করা হবে। ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ৫০০-তে নামিয়ে আনার চিন্তা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিসিএসের বিস্তৃত সিলেবাস কমিয়ে আনা হবে। বাংলার ওপর নির্ভরতা কমানো হবে। কারণ ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলার ওপর জোর দিতে গিয়ে প্রশাসনে ইংরেজি জানা কর্মকর্তার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এ কারণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজির ওপর জোর দেওয়া হবে। ইংরেজির বিষয়ে কিভাবে সংস্কার আনা হবে তা এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। তবে ইংরেজি মাধ্যমে যাঁরা পরীক্ষা দেবেন তাঁদের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।

পিএসসির আরেকজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। মৌখিক পরীক্ষায় এত বেশি নম্বর থাকলে দুর্নীতির দুয়ার খুলে যায় বলে তাঁরা মনে করেন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় দুর্নীতির সুযোগ কম। কারণ লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখেন একজনে। সেখানে একজনের পক্ষে অনেক কিছু করার সম্ভাবনা যতটুকু, তিনজনের পক্ষে সেই সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কারণ মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে থাকেন তিনজন। কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্য ছাড়াও বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে থাকেন একজন বিভাগীয় প্রতিনিধি। এর পরও লিখিত পরীক্ষার নম্বর কমে ৫০০ হলে মৌখিকে তা সর্বোচ্চ ১০০ হতে পারে।

ওই সদস্য আরো জানান, বিভিন্ন সময় মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমানো-বাড়ানো হয়েছে। নিশ্চয়ই এটার প্রয়োজন ছিল। অনেক সময় লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাই করা সম্ভব হয় না। মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব বোঝা যায়। সার্বিক বিষয়ে তার জ্ঞান ও দক্ষতা কতটা প্রখর তা অনুমান করা যায়। এসব কারণে পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর রাখার পক্ষে। এ ছাড়া মৌখিক পরীক্ষার যখন নম্বর দেওয়া হয় তখন ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় কত পেয়েছে তা জানেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএসসির আরেক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেছেন, পিএসসি সরকারের রাজস্বভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে। কারণ একটা বিসিএসে পিএসসির ফান্ডে জমা হয় প্রায় আট কোটি টাকা। সেখান থেকে মাত্র তিন কোটি টাকা খরচ হয় সংশ্লিষ্ট বিসিএসের সব কার্যক্রম শেষ করতে। বাকি টাকা জমা হয় সরকারের কোষাগারে। এসব কারণে পিএসসি আরো কিছু টাকা ব্যয় করে হলেও সার্বিক বিষয়ে একটা মানোন্নয়ন আনতে চাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা নিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে হয়। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা পিএসসির বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহ দেখান না। কারণ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা হলে দায়িত্ব পালন করে যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, পিএসসির পরীক্ষায় এর চেয়ে অনেক কম টাকা পাওয়া যায়। একটা বোর্ডের পরীক্ষায় এক দিনে এক হাজার টাকাও আয় করা যায়। আর পিএসসির পরীক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা পেতে পারেন। এ কারণে পরীক্ষা গ্রহণ-প্রক্রিয়ায়ও সংস্কার আনতে চায় পিএসসি।

আরেক সদস্য জানিয়েছেন, বর্তমানে পরীক্ষকদের খাতা দেখার জন্য খাতা তাঁদের বাসায় নিতে দেওয়া হয়। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা দূর করার উপায় খুঁজে বের করেছে পিএসসি। সংস্কারের অংশ হিসেবে খাতা আর পরীক্ষকের বাসায় পাঠানো হবে না। পরীক্ষক পিএসসিতে বসে খাতা দেখবেন। তাঁর যত রকমের সহায়তা দরকার পিএসসি তাঁকে দেবে। এতে করে সংশ্লিষ্টরা কম সময়ে অনেক বেশি খাতা দেখতে পারবেন। ফলে কম সময়ে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খাতা দেখার জন্য পরীক্ষকদের অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হবে, অর্থাৎ তাঁদের সম্মানী ভাতা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

খাতা দেখার পদ্ধতিতেও সংস্কার করা হবে জানিয়ে একজন সদস্য বলেন, বর্তমান নিয়মে একজন খাতা দেখেন। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ভুল করার এই ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসার জন্য খাতা রিচেক করা হবে। প্রতিটি খাতাই রিচেক করা বাধ্যতামূলক করা হবে। এতে আপাতত সময় বেশি লাগবে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সময় বেশি লাগবে না। কারণ খাতা দেখানো হবে পিএসসিতে।

পিএসসির একজন সদস্য বলেছেন, বর্তমানে ম্যানুয়ালি বিসিএস পরীক্ষার ফল তৈরি করা হয়। একজন সদস্যের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্টরা বসে সব কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে ফল তৈরি করেন। সংস্কারের আওতায় ফল যেন প্রযুক্তির সহায়তার অল্প সময়ে তৈরি করা যায় সেই বিষয়ও গুরুত্ব পাবে। বর্তমানে বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর এমসিকিউ টাইপ বাছাই পরীক্ষা ওএমআর রিডেবল উত্তরপত্রে গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার উত্তরপত্র ওএমআর মেশিনে স্ক্যান করে ফল তৈরি করা হয়। পিএসসির মাত্র চারটি ওএমআর মেশিন রয়েছে। আরো একাধিক ওএমআর মেশিন কেনা হবে।

জটিল মেধা কোটায় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না—জানতে চাইলে পিএসসির একজন সদস্য বলেন, যতই কোটা সিস্টেম থাকুক, প্রকৃত মেধাবীরাই বিসিএস চাকরি পান। কারণ প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন। এসব ধাপ পেরোলেই কেবল কোটার প্রশ্ন। এ ছাড়া যখন কোটার প্রার্থী পাওয়া না যায় তখন মেধা কোটা থেকেই প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিসিএসসহ প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব চাকরি ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে হয়। অবশিষ্ট ৫৫ শতাংশ চাকরি হয় প্রাধিকার কোটায়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ১০ শতাংশ জেলা কোটা। প্রাধিকার কোটার কোনো পদ অপূর্ণ থাকলে প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।