২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক চোরা চালানের গডফাদার ফরিদ ফের সক্রিয়

অপ শক্তি রুখতে ৭ মার্চ আমাদের প্রেরণা

41 copdfsy 4 copy

স্বাধীকার আন্দোলন, স্বাধীনতার আন্দোলন তথা পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর কবল থেকে মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে একেকটি আন্দোলন একেকটি মাইলফলক। ধারাবাহিক এ আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামে জনগণকে উজ্জীবিত করেছেন আমাদের রাজনীতিবিদরা। আর আন্দোলনকে যারা বেগবান করেছেন তারা হলেন এ দেশের তরুণ ছাত্র সমাজ।  আজ আমরা যে স্বাধীন দেশের নাগরিক সেই স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল ১৯৫২ সালে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে অনেক ত্যাগ, রক্ত ক্ষয় এবং শ্রম স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে আমাদের পৌছে দেয়। এ কাজটি যিনি করেছিলেন তিনি হলেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বিচক্ষণ নেতৃত্ব জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়। তিনি বুঝে শুনে জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার ঘোষণায় দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।
৭১ এর ২৫ মার্চ গভীররাতে স্বাধীনতার ঘোষণার দিনের মতো অনেকগুলো দিন আছে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয়। তেমনি ১৯৭১ এর ৭ মার্চও ঠিক বাঙালী জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিনে বাঙালী জাতির অবিংবাদিত নেতা হিসেবে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ জনতার সামনে স্বাধীনতার চুড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার আহবান জানান। তিনি বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ প্রকৃত অর্থে এটাই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর এ আহবানে সাড়া দিয়ে সেদিন মুক্তিপাগল মানুষ মুক্তির লক্ষ্যে ঝাপিয়ে পড়ে।
বাঙালীর স্বাধীনতার আন্দোলনে অনেকের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। কাউকে নেপথ্যে থাকতে হয়নি। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সবাই আন্দোলন করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনটা ছিল অনেকখানি ভিন্নতর। তিনি কর্মী থেকে নেতা হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিজের যোগ্যতা, বিচক্ষণতার ফলে অনেককে তিনি ছাড়িয়ে যান। একটা দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার মতো যোগ্যতা এবং ক্ষমতা তিনি অর্জন করেন। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতাও সেদিন বঙ্গবন্ধুর একক ক্ষমতাকে অস্বীকার করতে পারেননি। অস্বীকার না করার একটি বড় কারণ হলো ৭০ এর সাধারণ নির্বাচন। বঙ্গবন্ধুই লড়াই সংগ্রাম করে সেদিন পাকিস্তানী  সামরিক জান্তার কাছ থেকে নির্বাচন আদায় করতে সক্ষম হন। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিপুল বিজয় অর্জিত হয়। নির্বাচনে বিপুল বিজয় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পথকে পরিস্কার করে দেয়। এবং একই সঙ্গে তিনি বৈধতা পেয়ে যান। এই বৈধতার জোরে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে সাহস পেয়েছিলেন।
আজ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে অনেকে অহেতুক বিতর্ক তুলছেন। স্বাধীনতার ঘোষকও বানানো হচ্ছে। এটা শুধু মিথ্যাই নয় এটা এক ধরণের পাপাচার। ইতিহাস বিকৃত করার কাজে যারা শামিল হয়েছেন তারা হয়তো জেনে শুনেই করছেন। পাকিস্তানী প্রেতাত্মা তাদের কাধে ভর করায় এতো সাহস পাচ্ছে বলে আমার ধারণা। ক্ষুদ্র এই গোষ্ঠটি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছিল। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর তাদের আস্ফালন আরো বেড়ে যায়। স্বাধীনতা নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র এখন চলছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি সেই একাত্তরের মতো সারাদেশে পৈশচিকভাবে তান্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে বিদ্যমান গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে নস্যাৎ করার গভীরতর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের মূল লক্ষ্য স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা। ঠিক ৭১-এ তারা যে কাজটি করেছিল আজো সে কাজটি করে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু পশ্চিমাদের কবল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সারা জীবন আন্দোলন করে গেছেন। তার আন্দোলনের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার অর্থ হল অর্থনৈতিক মুক্তি। নানা কারণে সেই অর্থনৈতিক মুক্তি আমাদের পুরোপুরি আসেনি। না আসার পেছনে প্রধানতম কারণ হচ্ছে স্বাধীনতার ৪৪ বছরে নানা সময় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ক্ষমতায় থেকেছে। তারা ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে বিনষ্ট করেছে। পাকিস্তানী কায়দায় দেশ পারিচালিত করেছে। নতুন প্রজন্মকে বিকৃত ইতিহাস শিখেয়েছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে বিনষ্ট করেছে। এই অপ গোষ্ঠীটি আবারো মরিয়া হয়ে উঠেছে ফের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। কোনো কারণে তারা আবার ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বাধীনতা আবার বিপন্ন হবে। ৭১-এর ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্র“র মুখে মোকাবেলা করো।’ স্বাধীনতার  এতোটি বছর পর আজ আবার সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর সেই আহবানে সাড়া দেয়ার। আজ দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি অপ শক্তিরা সৃষ্টি করেছে তাতে পরিস্কার বক্তব্য হল আজ আর নতুন করে আহবান জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। সেই ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু যে আহবান জানিয়েছিলেন সে আহবানকে মূল শক্তি মনে করে আজ আমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের মোকাবেলা করতে হবে। আজকের ৭ মার্চ পালনের স্বার্থকতা এখানেই আমাদের।
লেখক: আইনজীবি, গবেষক, রাজনীতিক, মুক্ত সাংবাদিক ও গ্রন্থকার

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।