টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় সরকারী নীতিমালা উপেক্ষা করে গড়ে উঠা অবৈধ করাতকলসমূহে চলছে কাঠ চিরাইয়ের মহোৎসব। সরকারী রিজার্ভ বাগানের গাছ ও বনাঞ্চল ধংস করে এসব করাতকলে প্রতিদিন মজুদ করা হচ্ছে শত শত ঘনফুট চোরাইকৃত কাঠ। এতেকরে একদিকে যেমন আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন হচ্ছে অপরদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশও হুমকিতে পড়ছে। তবে অবৈধ করাতকল বহাল তবিয়তে থাকার পেছনে বন বিভাগের বিরুদ্ধে করাতকল মালিকদের মামলা ও কিছু অসাধু বনকর্মী দায়ী বলে স্থানীয়রা জানায়।
সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ২০/০৫/২০১২ ইং জারী করা বন আইনের সেকশন ৪১-এ প্রদত্ত বিধি ৩ নং ধারা (১১০) উপ-ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ‘কোন ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যাতীত কোন করাত কল স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারবেনা।’ কিন্তু সরকারের এ আইনকে অমান্য করে টেকনাফ পৌরসভার আওলিয়াবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৬টি অবৈধ করাতকল গড়ে উঠেছে। এসব করাতকলে প্রতিদিন বন সম্পদ ধংস করে কাছ চিরাই করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করার পরও ওই অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলা সাবরাং এলাকার মৃত ছৈয়দ আহমদের পুত্র শফিক আহমদ, মাওলানা কবির আহমদ ও একই এলাকার রশিদ আহমদের পুত্র মোস্তাক আহমদ দীর্ঘ দিন ধরে সরকারী নীতিমালা লঙ্গন করে অবৈধ করাতকল বসিয়ে বনাঞ্চলের কাঠ চিরাই করে চলেছে। প্রতিদিন এখানে শতশত ঘননফুট কাঠ চিরাই হয়ে থাকে। তাছাড়া এখানে বিভিন্ন জনের চোরাই কাঠও মজুদ রাখা হয়। এ বিষয়ে অনেক সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। ওই করাতকলের মালিক মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। মামলা নং- বন ৫৫/১৪। মামলাটিতে তার বিরুদ্ধে সমন জারী করেছে আদালত। তবে এ অবৈধ করাতকলের সাথে স্থানীয় কতিপয় রাঘব বোয়ালের সম্পৃক্ত রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ দিকে অবৈধ করাতকল বাঁচাতে কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছে অবৈধ করাতকলের মালিক মোস্তাক আহমদ। মামলা নং-অপর-৫৬৭/২০১৪। এ মামলায় কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল সরকার, সহকারী বন সংরক্ষক (দক্ষিণ) রেজাউল করিম চৌধুরী ও টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা মীর আহমদকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় বন বিভাগ আপত্তি জানানোর কারণে কোন আদেশ দেয়নি আদালত। আগামী ১ এপ্রিল এ মামলার শুনানীর দিন ধার্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। একই ব্যক্তি তার অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদনও করেছেন। তবে এর বিরোধীতা করে কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল সরকার সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছেন। জবাবে তিনি বন আইনের বিভিন্ন ধারা উপ-ধারা তুলে ধরে ‘অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা’ জারীতে আপত্তির কথা জানান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ করাতকল মালিকরা বনকর্মীদের সাথে আঁতাত করেই পার পেয়ে যাচ্ছে। দিন দুপুরে এখানে দেদারছে কাঠ চিরাই হলেও প্রশাসনিক দূর্বলতার কারণে বন্ধ হচ্ছেনা এসব অবৈধ করাতকলে কাঠ চিরাই। সরকার বন সম্পদ রক্ষায় অবৈধ করাত কল বিরুধী অভিযানের পরও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ধরা-ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে মোস্তাক আহমদের অবৈধ করাতকলসহ অন্যান্য করাতকলগুলো।
এ বিষয়ে কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবৈধ করাতকল থাকার কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর। এরকম একটি করাতকলের বিষয়ে আমাদের জানা আছে।’ এ সময় অবৈধ করাতকল মালিকদের সাথে বন বিভাগের কারো সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।