জাতীয় ডেস্কঃ অভিবাসী হওয়ার ঢলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশিদের অবস্থান ষষ্ঠ। ২০১৯ সালে এসে বাংলাদেশের ৭৮ লাখ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাস করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই জীবিকার তাগিদে শ্রমিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থায়ীভাবে অভিবাসন নিয়েছেন। আবার কেউ উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে স্থায়ী অভিবাসী হয়েছেন। তিন দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এভাবেই বছরের পর বছর এ দেশের লাখ লাখ মানুষ জীবিকার তাগিদে ও ভালো থাকার আকাঙ্ক্ষায় দেশান্তরি হয়েছেন।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ অভিবাসন নিয়ে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। অভিবাসী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ভারতীয়রা। বর্তমানে পৌনে দুই কোটি ভারতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করছেন।
বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে মেক্সিকো, চীন, রাশিয়া ও সিরিয়া। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ২০ লাখে। সবাই যে উন্নত জীবন ও কাজ নিয়ে বিদেশে যান, তা নয়। সংঘাতপূর্ণ অনেক দেশের বাসিন্দারা জীবন বাঁচাতে অভিবাসী বা শরণার্থী হন। জাতিসংঘের মতে, অভিবাসী হওয়ার জন্য সবচেয়ে পছন্দের পাঁচটি গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে সৌদি আরবে শ্রমিক অভিবাসীই বেশি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তরুণদের পছন্দমতো কাজ দিতে পারছি না, তাই তাঁরা শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাচ্ছেন। এদিকে দেশের উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান কমে গেছে। শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। দেশে যাঁরা পছন্দমতো কাজ পাচ্ছেন না, বিদেশে গিয়ে তাঁরাই রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছেন।’ মির্জ্জা আজিজের মতে, যেসব পরিবার থেকে তরুণেরা বিদেশে যাচ্ছেন, সেসব পরিবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে যাচ্ছে, তাঁরা রেমিট্যান্স না পাঠালে হয়তো ওই সব পরিবারের অবস্থার পরিবর্তন হতো না।
বাংলাদেশ
অল্প বয়সে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশে বেড়ে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশি অভিবাসীদের গড় বয়স ৩০ বছর। ৯ বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে বাংলাদেশি অভিবাসীদের গড় বয়স ছিল ৩৪ বছরের বেশি। এর মানে, এ দেশে তরুণ-তরুণীরা পছন্দমতো কাজের সুযোগ না পেয়ে অল্প বয়সে শ্রমিক হিসেবে বিদেশ চলে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নব্বইয়ের দশকে বছরে গড়ে আট লাখের মতো বাংলাদেশি কাজের জন্য বিদেশে যেতেন। এখন তা বেড়ে ২১ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিদেশে যত বাংলাদেশি অভিবাসী আছেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ২০ থেকে ৬৪ বছর। তাঁরা কর্মক্ষম। তাঁরা কমবেশি সবাই দেশে রেমিট্যান্স পাঠান।
বিদেশে যাঁরা যান, তাঁদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক। তাই দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ লোক পাঠানোর পক্ষে মত দেন এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রাজীব গান্ধী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে চলে যাচ্ছিলেন। তখন রাজীব গান্ধীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মেধাবীরা দেশের বাইরে চলে গেলে দেশের ক্ষতি হবে। রাজীব গান্ধীর উত্তর ছিল, ‘এটি আমি সঞ্চয়ী আমানতে অর্থ রাখছি। ভবিষ্যতে এটি মুনাফা দেবে।’ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ওই সব ভারতীয় বিশেষজ্ঞ ইউরোপ আমেরিকা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। গড়ে তোলেন বেঙ্গালুরু সফটওয়্যার শিল্প। বেঙ্গালুরু এখন শুধু ভারতের নয়, এই অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তির রাজধানী।
বাংলাদেশিরা শুধু অভিবাসী হন না, বাংলাদেশেও বিদেশিরা আসেন। মিয়ানমার থেকে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে বসবাস করছে। জাতিসংঘের হিসাবে, এমন শরণার্থীরা সংখ্যা এখন ৯ লাখ ৩২ হাজার। নব্বইয়ের দশকে এই সংখ্যা এক লাখের কম ছিল। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে আছে। শীর্ষে আছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে প্রায় ১৪ লাখ শরণার্থী আছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।