আধুনিক হাসপাতাল (অরিজিন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার নামে রোগীদের নানা হয়রানি ও ধোঁকা দিয়ে চলেছে। এতেভোগান্তির শিকার হন হাজারো রোগী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই বলেই রোগীদের সঙ্গে এমন আচরণকরছেন বলে স্থানীয়দের মন্তব্য। ভুল চিকিৎসা, ভুল রিপোর্ট ও হয়রানির কারণে কষ্ট পাচ্ছেন রোগীরা।
উখিয়ার ব্যস্ততম স্টেশন কোটবাজারের প্রাণ কেন্দ্রে অরিজিন হাসপাতালটির অবস্থান হওয়ায় মানুষের মিছিল শুরু হয় প্রতিদিনআলো ফোটার আগেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ কিন্তু সে হিসেবে নেইসেবার মান।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু চিকিৎসক, নার্স ও অদক্ষ কর্মচারী মিলে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে বাধ্য করছে। এছাড়া রোগীদের কাছথেকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও সিরিয়ালের নামে ভোগান্তির শেষ নেই।
ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন সুমন জানান, আমার স্ত্রী গর্ভবতী। যার কারণে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হলে দূরে না গিয়েপার্শ্ববর্তী অরিজিন হাসপাতালে একদিন আগে সিরিয়াল দিয়ে পরদিন ৫ টা ৪০ মিনিটের দিকে গিয়ে ৬টা ১০ মিনিটের দিকেডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার ৩টি পরিক্ষা করানোর পরামর্শ দিলে রিসিপশনে টাকা জমা দিয়ে একটি পরিক্ষা করার পরপরবর্তী পরিক্ষার জন্য ঘটে বিপত্তি। ডাক্তার যে আল্ট্রা পরিক্ষা দিয়েছেন সেটা করানোর জন্য জন্য ওই হাসপাতালে কর্মী নেইযার কারণে ডাক্তারকেই সে পরিক্ষা করাতে হবে। আর সেই ২০ মিনিটের একটি পরিক্ষা করানোর জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টাগর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে মানুষের ভীড় সহ্য করে বসে থাকতে হয়েছে। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে করজোড় মিনতি করেও তার আগেসেবা মিলেনি। পরবর্তীতে আল্ট্রা করানোর পর আবার রিপোর্ট ও প্রেসক্রিপশনের অপেক্ষা। যা এক নারকীয় অভিজ্ঞতা হয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি না হয় একদিন আগে সিরিয়াল দিয়ে দ্রুত রোগী দেখাতে পেরেছি কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে যেরোগী আসে তাদের সাথে কি হয় ভাবলেই অবাক লাগে। মানবিক সেবার নামে সাধারণ মানুষের সাথে গলাকাটা বানিজ্য করছেএই হাসপাতাল।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার মনের ক্ষোভ থেকে অরিজিন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হওয়ার জন্য সোশ্যালমিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস দিলে সেখানে ভুক্তভোগীদের প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
কিন্তু সেখানেও ওই হাসপাতালের স্টাফরা ভুল স্বীকার না করে উল্টো বাজে মন্তব্যও করেছেন। এ থেকেও শিক্ষা নেওয়া যায়অরিজিন হাসপাতাল আসলে কোন মানের।
আরেক ভুক্তভোগী মরিচ্যা বাজার নিবাসী এড. মো.শরিফ মোহাম্মদ রহিম জানান, আমার বোনকে চিকিৎসার কাজেহাসপাতালে নিয়ে গেলে আমাকেও রিপোর্টের জন্য ১২টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখে যা খুবই বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। রোগিদের কষ্ট দিয়েসেটা কেমন সেবা। এরকম হাজারো রোগী এইখানে হেনস্থার শিকার হয়।
মোঃ রুবেল জানান, আমার নানা একজন ব্যবসায়ী। তিনি আসর নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদে পড়ে গেলে অন্যান্য মুসল্লীরাউনাকে উদ্ধার করে আমাকে ফোন করলে আমি দ্রুত এসে অরজিন হাসপাতালে বিকেল সাড়ে ৫টায় রিসিপশনে সিরিয়াল দিলে৪শ টাকা ফি খুঁজলে তা জমা দেওয়ার পর রোগীর অবস্থা ইমারজেন্সি তাই দ্রুত দেখানোর অনুরোধ করলে তারা ৫শ টাকা দাবীকরে।
আমি যখন জানতে চাইলাম অতিরিক্ত টাকা কেনো তখন তারা বলে ইমারজেন্সি তাই দিতে হয়। কিন্তু আমার কথা হলোরোগিদের সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়ে যদি তারা হাসপাতাল পরিচালনা করে তবে কেনো রোগিদের সুবিধা–অসুবিধা না বুঝে ধান্ধাকরবে। এ জন্য যদি রোগিদের বিপদ/খারাপ কিছু হয় তবে এর দায়ভার কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিবে প্রশ্ন রইল আমার। তাছাড়ারিপোর্টও সঠিক সময়ে দেইনা তারা।
কোটবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, কিছুদিন আগে দোকানে কাজ করতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেলে এক্সরে করার প্রয়োজন পড়লেঅরিজিনে করাতে যায়। কিন্তু তারা আমার ভুল এক্সরে করে ভুল ওষুধ উল্টো বিপদে ফেলে দিয়েছিলো। সেদিনের পর থেকেচিকিৎসা নেওয়ার জন্য আর অরিজিনে যায়নি।
হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণ জানতে অরিজিন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে পরিচালক মন্ডলীর মোঃইউনুছ বলেন, সফটওয়্যার সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে রিপোর্ট দিতে দেরী হচ্ছে ও এ সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং রোগীদেরসাথে কথা বলছেন বলে প্রতিবেদককে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু তিনি কথা দিয়ে কথা না রাখায় পরক্ষণে পূণরায় যোগাযোগ করলেতিনি আর কল রিচিভ করেননি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।