ঈদুল আজহা এলেই প্রতিবছর অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের দাম। সেই ধারা অক্ষুণ্ন রয়েছে এ বছরেও। গত বছরসরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এ বছর এরই মধ্যে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ। আর বাণিজ্য সচিব বলছেন, পেঁয়াজের এই দাম বৃদ্ধি সাময়িক।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বছর ভারতেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভেলোরের অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। সে দেশেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আর এরই প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে।
এ বছর দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। এর পরেও পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, ‘এটি সাময়িক। কয়েকদিনের মধ্যে কমে যাবে পেঁয়াজের দাম।’ তিনি বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেঙে গেছে। এতে ট্রাক চলছে না। তাই হয়তো পেঁয়াজ পরিবহনের খরচ বেড়েছে। এ কারণে হয়তো বাড়তে পারে পেঁয়াজের দাম।’
রাজধানীতে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দামে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম ৪৫ টাকা কেজি। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, ঈদুল আজহা এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদাররা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। যে কারণে তাদেরও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আর বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই শেষ পর্যন্ত এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভোক্তার ওপর।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। রমজান মাস ও কোরবানিকে কেন্দ্র করে এ চাহিদা বেড়ে যায়। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা পূরণে আমদানি করা বাকি পেঁয়াজের বেশিরভাগই আসে পাশের দেশ ভারত থেকে। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়।
জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতিমাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি পেঁয়াজের চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। এবারের রমজানে পেঁয়াজ নিয়ে কোনও কারসাজি না হলেও কোরবানি ঈদকে টার্গেট করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দেশে উৎপাদন, আমদানি ও চাহিদা হিসাব করলে এখনও দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ থাকার কথা।
সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। সংস্থাটির হিসাবে, গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এই সময়ে ১৩ টাকা দাম বেড়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায় এবং আট টাকা দাম বেড়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর কাওরান বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে দেশি পেঁয়াজ আছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে দাম এত বাড়ত না। দেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে মজুদ করা পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘শুধু পেঁয়াজ নয়, দেশে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে দু’য়েকটি পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ের বাইরে চলে গেলে বিষয়টি মনিটরিং করতে হবে।’ কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অযৌক্তিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিলে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বাবদ ব্যবসায়ীদর খরচ পড়েছে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা। দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। পেঁয়াজের দাম কী কারণে বাড়ছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি মনিটরিংসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কোরবানির সময় মসলাজাতীয় পণ্যের বাড়তি চাপ থাকে। কিন্তু এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।