আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন এমন সংসদ সদস্যদের তালিকা ক্রমশই দীর্ঘ হচ্ছে। ’প্রায় ৮০ জন এমপি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন’ কিছুদিন আগে দলীয় সূত্রে এমন খবর জানা গেলেও, জানা যাচ্ছে, তাদের তালিকাটা আরো দীর্ঘ হতে পারে।
দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের তথ্য, সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক স্তরের সর্বশেষ জরিপে ১৩০ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। এসব সংসদ সদস্যদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আভাস দেয়া হয়েছে, এ তালিকা আরো বাড়তে পারে। চূড়ান্ত মনোনয়নের আগ পর্যন্ত তিন মাস পরপর এ জরিপ চলবে।
সূত্র জানিয়েছে, জরিপে যে ১০ ধরনের অভিযোগ ওঠেছে সেগুলো হলো: এলাকায় গডফাদারের ভূমিকা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো, নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা ও এলাকায় খুবই কম যাওয়া, নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রুপিং করে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের বিভক্ত করে রাখা, স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্যদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া, বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দলে ভেড়ানো, চাকরি দেওয়ার কথা বলে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়া ও টাকা ফেরত না দেওয়া, বিরুদ্ধে বললেই হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি বা পঙ্গুত্ববরণ অথবা জীবন নিয়ে নেওয়া, ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং বিদ্যুতের লাইন দেওয়ার নাম করে জনসাধারণের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানির মত অভিযোগও আছে কোনো কোনো এমপির বিরুদ্ধে। বর্তমান এমপিদের মধ্যে কেউ কেউ হত্যা, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দায়ে জেলে গেছেন। আবার কারো বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কয়দিন আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কক্সবাজারের বিতর্কিত এমপি বদিউর রহমান বদি মনোনয়ন পাবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক বছর আগে থেকেই প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমানে মন্ত্রী-এমপিদের কে কি করছেন সে তথ্য ছাড়াও তিনি সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। অনেককে ডেকে এনে সংশোধন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও যারা সংশোধন হননি তারা আর সুযোগ পাবেন না। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কাজে শত ব্যস্ততার মাঝেও নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, কে বাদ পড়বেন এটি যেমন দেখছেন, তেমনি বর্তমান এমপিদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী নির্বাচনের ফলাফলে কী প্রভাব পড়তে পারে সেই বিষয়টিও তিনি পর্যালোচনা করছেন। সব হিসাব মিলিয়ে ৩শ’ আসনে কারা মনোনয়ন পাবেন তার প্রাথমিক তালিকা করে রেখেছেন। তবে তিন মাস অন্তর জরিপ হালনাগাদ করা হচ্ছে।
মনোনয়ন পাচ্ছেন না যারা
উল্লিখিত ১০ কারণে মনোনয়ন ঝুঁকিতে থাকা এমপিদের মধ্যে চট্টগ্রামে ৪ জন, ঢাকায় ৪ জন, খুলনায় ৩ জন, টাঙ্গাইলে ১ জন, গাইবান্ধায় দু’জন, নীলফামারীতে ১ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, দিনাজপুরে ১ জন, নওগায় ১ জন, রাজশাহীতে ১ জন, পাবনায় ২ জন, চাপাইনবাবগঞ্জে ১ জন, মেহেরপুরে ১ জন, নড়াইলে ১ জন, কুষ্টিয়ায় ১ জন, যশোরে ২ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১ জন, বাগেরহাটে ১ জন, বরগুনায় ১ জন, পিরোজপুরে ২ জন, পটুয়াখালীতে ১ জন, বরিশালে ১ জন, ঝালকাঠিতে ১ জন, জামালপুরে ১ জন, শেরপুরে ১ জন, ময়মনসিংহে ১ জন, নেত্রকোনায় ১ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ জন, ফরিদুপুরে ১ জন, শরীয়তপুরে ১ জন, সুনামগঞ্জে ১ জন, মৌলভীবাজারে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জন, কুমিল্লায় ২ জন, চাঁদপুরে ২ জন, ফেনীতে ১ জন, নোয়াখালীতে ১ জন, রাজবাড়িতে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে মনিটরিং, পর্যবেক্ষণ, খোঁজ-খবর ও জরিপের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিভিন্ন জরিপে জনগণের কাছে যারা গ্রহণযোগ্য তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর অগ্রহণযাগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। প্রার্থী মনোনয়নের জন্য এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
সূত্র- পূর্ব পশ্চিম
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।