পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন চির নতুনের এই কবি ।
জন্মের ১৫৬ বছর পেরিয়ে এবং মৃত্যুর প্রায় ৭৫ বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ এখনও প্রাসঙ্গিক।কেন এখনো তিনি আমাদের মাঝে বরেণ্য? এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাঙালির এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত।’
তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালির মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্যদিয়ে বাঙালি মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়। একশত পঞ্চান্ন বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরূক হয়ে আছেন।’
প্রতিবছরের মত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী এই বাঙ্গালি কবিকে স্মরণ করবেন তার অগণিত ভক্ত। বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই দিবসটি পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও শ্রদ্ধায়।
বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জীবনের আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা, সংকট-সাফল্যে, উৎসব-পার্বণে রবীন্দ্রনাথ বাঙালির পরম আশ্রয়। তিনি আমাদের আত্মার আত্মীয়।’
প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের তিনি একান্ত আপনজন। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে অবস্থানকালে এসব অঞ্চলের মাটি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। শিলাইদহ ও পতিসর অঞ্চলেই তিনি রচনা করেছিলেন ‘ছিন্নপত্র’র সিংহভাগ এবং অসামান্য কিছু গান। গ্রামীণ দরিদ্র ও অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের জন্য তার পল্লিউন্নয়ন প্রচেষ্টা আজও আমাদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে আছে।’
জাতীয় পর্যায়ে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। ঢাকাসহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে। এদিন বিকাল ২টা ৩০ মিনিটে নওগাঁর পতিসরে রবীন্দ্র কাচারি বাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাঃ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক ও নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘মানুষের ধর্ম : রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা’। এ বিষয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ। আলোচনার পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়াও কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগসহ ঢাকায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিনদিনব্যাপী কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বাংলা একাডেমিতেও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জাতীয় পর্যায়ে মূল অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানসমূহে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।