নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল আজ এ সংলাপে যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনে যাবে।
দলটির পক্ষ থেকে এ জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি চাইলে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব তাঁর হাতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি সূত্র।
বিএনপির পর আগামী ২০ ডিসেম্বর সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ২২ ডিসেম্বর জাসদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন রাষ্ট্রপতি। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি চিঠি দেবেন।
ইসি পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসে। তবে বিএনপি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকায় ওই সংলাপ থেকে কার্যকর কোনো ফল বেরিয়ে আসেনি। উল্লেখ্য, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। এরপর নতুন ইসি দায়িত্ব নেবে। ওই কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন।
ইসি পুনর্গঠনের সময় ঘনিয়ে আসায় বিএনপি শুরু থেকেই সমঝোতার ভিত্তিতে ইসি পুনর্গঠনের দাবি করে আসছে। সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে ১৩ দফাপ্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। যার মূল কথা হলো স্বাধীনতার পর সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। পাশাপাশি সার্চ কমিটির কাঠামো (একজন আহ্বায়ক ও চারজন সদস্য) উল্লেখ করে দলটি এ জন্য কতগুলো যোগ্যতা ও ‘ক্রাইটেরিয়ার’ কথাও বলেছে। একইভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) চারজন নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা বা ‘ক্রাইটেরিয়া’ সম্পর্কেও কতগুলো সুপারিশ তুলে ধরে দলটি।
যত দূর জানা গেছে, ওই সব যোগ্যতার আলোকেই আহ্বায়কসহ সার্চ কমিটি এবং ইসিতে নিয়োগদানের প্রস্তাব হিসেবে কয়েকজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, বেশ কিছু ব্যক্তি বা বিশিষ্ট নাগরিকের নাম তারা চূড়ান্ত করে বঙ্গভবনে নিয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি চাইলেই কেবল ওই নামগুলো প্রস্তাব আকারে তাঁর কাছে দেওয়া হবে। তবে কৌশলগত কারণে নাম চূড়ান্ত করার বিষয়ে দলটি বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। আওয়ামী লীগ কোনো নাম প্রস্তাব করলে বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে, একইভাবে বিএনপি কোনো নাম প্রস্তাব করলে আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে—এটিই বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ বলে মনে করা হয়। ফলে দলটি চাইছে তাদের প্রস্তাবের নামগুলো রাষ্ট্রপতি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যত্র প্রকাশ না পায়।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, উত্থাপিত প্রস্তাবের আলোকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি চাইলেই কেবল ওই সংক্রান্ত সুপারিশ তাঁর কাছে দেওয়া হবে।
সার্চ কমিটি ও ইসি পুনর্গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের সার্বিক প্রস্তুতির জন্য সর্বশেষ গতরাতে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধি বাড়ল তিনজন নতুন ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় যে প্রতিনিধিদল যাচ্ছে, সেখানে আরো তিনজনের নাম যুক্ত করেছে বিএনপি। তাঁরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য এম তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এ নিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ প্রতিনিধিদলের সদস্যসংখ্যা ১৩ জনে দাঁড়াল। নতুন তিনজনের নাম যুক্ত করে শুক্রবার মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠি বঙ্গভবনে যায় এবং বঙ্গভবনও এতে সম্মত হয়েছে বলে জানা যায়।
সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপির ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে নাম পাঠানোর জন্য বঙ্গভবন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল গত ১২ ডিসেম্বর। নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির ১০ জনের নামের তালিকা বঙ্গভবনে পাঠানো হয়। খালেদা জিয়া ছাড়া ওই তালিকায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম ছিল। নতুন তিনজন যুক্ত হওয়ায় বস্তুত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে শারীরিকভাবে অসুস্থ শুধু এম কে আনোয়ার প্রতিনিধিদলে বাদ থাকলেন। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। তারেক রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ বিদেশে রয়েছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।