ইমাম খাইর :
আটকের পরে ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলো কক্সবাজার শহরে মাঝেরঘাট এলাকা থেকে ১ লক্ষ ইয়াবা লুটের ঘটনার মূল হোতা মিজান (৩২)।
সোমবার (২০ জুলাই) ভোররাতে কক্সবাজার শহরের খুরুশকুল ব্রীজ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় ১০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি দেশিয় বন্দুক ও এক রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
মিজান কক্সবাজার পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম টেকপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মওলা বাবুল প্রকাশ জজ বাবুলের ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির।
তিনি জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি শহরে মাঝেরঘাট এলাকা থেকে ইয়াবা লুটের ঘটনায় মিজান জড়িত রয়েছে। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল।
সর্বশেষ ১৭ জুলাই বেনাপোলের ইমেগ্রেশন পুলিশ মিজানকে আটক করে কক্সবাজার জেলা পুলিশকে অবগত করেন।
পুলিশের একটি টিম গিয়ে মিজানকে কক্সবাজার নিয়ে এসে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক সোমবার (২০ জুলাই) ভোররাতে মাঝিরঘাটস্থ খুরুশকুল ব্রীজ এলাকায় লুট হওয়া ইয়াবা গুলো উদ্ধারে যায় সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ।
ওসির দাবী, মিজানকে নিয়ে ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে গেলে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা তার সহযোগিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। ইয়াবা কারবারিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে।
মাদক কারবারিরা গুলি ছুঁড়ে মিজানকে ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টাকালে গুলিবিদ্ধ হয় মিজান। এসময় পুলিশের পাল্টা গুলিতে সহযোগিরা পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি দেশিয় বন্দুক ও এক রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গুলিবিদ্ধ মিজানকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক ‘মৃত’ ঘোষণা করে।
সুত্র জানায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের মাঝেরঘাটে আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটিতে ইয়াবার এই বিশাল চালানটি লুটের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মিজান ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই ইয়াবাগুলো বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে।
দালালের মাধ্যমে ইয়াবাগুলো ২৪ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছিলো। এই ঘাটে একটি ফিশিং বোটে করে একটি আন্তর্জাতিক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট বিশাল এই ইয়াবার চালানটি এনেছিলো।
এ বিষয়ে কক্সবাজার শহরজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিজান কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর রোডস্থ একটি গণ পরিবহনে করে চট্রগ্রাম চলে যায়। ওই সময় চট্রগ্রাম শহরে মিজান ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান করার পর একইদিন রাতেই বিমানযোগে সে ভারত পালিয়ে যায়।
পরে মিজানের মোবাইলের সিডিএমএস পর্যাবেক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের সঙ্গে কথা বলে মিজান দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবরটি নিশ্চিত হয় পুলিশ। ভয়ংকর মিজান টেকপাড়া ও আশেপাশের এলাকার মানুষের কাছে এক মুর্তিমান আতংকের নাম।
এক কোটি ইয়াবা লুটের প্রধান হোতা মিজানের পিতা গোলাম মওলা বাবুল কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে চাকুরীরত অবস্থায় নিজেকে ‘জজ বাবুল’ হিসাবে জাহির করতেন। সে কারণে ‘জজ বাবুল’ হিসাবে তার পরিচিত।
একজন চতুর্থ শ্রেণির সাবেক কর্মচারি হয়েও নামের আগে ‘জজ’ শব্দ ব্যবহার করতে পেরে গোলাম মওলা বাবুল এট নিয়ে এখন বেশ গর্ববোধ করেন।
তার সন্তান মিজানের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ)/৪২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। যার নং-৮৭/২০২০।
এদিকে, ইয়াবা লুটের পর ওই সময় মিজান পালিয়ে গেলেও তার প্রধান দুই সহযোগী ফিরোজ ও তার সহোদর মোস্তাককে ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে দুই লাখ ইয়াবাসহ আটক করেছিলো পুলিশ। তারা বর্তমানে কারাগারে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।