ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞা আংশিক স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এর ওয়েবসাইটে এই খবর জানানো হয়েছে। সিএনএন-এর ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, অথবা ভ্রমণরত অবস্থায় আছেন; এমন নাগরিকদের বেলায় ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতি প্রয়োজ্য হবে না। বৈধ কাগজপত্রের অধিকারী যারা, তাদের ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়িত হবে না বলে জানিয়েছে আদালত।
শুক্রবার এক নির্বাহী আদেশে তিন মাসের জন্য ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি শরণার্থী কর্মসূচি চার মাসের জন্য স্থগিত করেন তিনি। তবে সব শরণার্থীর বেলায়, কর্মসূচি স্থগিতের মেয়াদ নির্দিষ্ট ৪ মাস হলেও সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের। প্রশাসনের শরণার্থী সীমিতকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন নবনির্বাচিত এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মুসলিমদের বদলে খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়।
নিষেধাজ্ঞার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় তা বাস্তবায়নের ‘অ্যাকশন’। নির্বাহী আদেশের প্রথম দিনেই বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে শুরু করেন মুসলমানরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় মুসলিম যাত্রীদের। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি মসজিদে হামলা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও মুসলমানদের এমনকী রীতিমতো হেনস্থা করা হচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জারি করা নতুন নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিমানবন্দর এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যালয়ের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাম্প যখন এই নির্বাহী আদেশে সই করেন, তখন যাত্রা শুরু করে আদেশ স্বাক্ষর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন; এমন নাগরিকদেরও আটকে দেওয়া হয়েছে। আবার বৈধ বিমান টিকিট ও ভিসা নিয়েও বিমানে উঠতে পারেননি কেউ কেউ। আশঙ্কা করা হচ্ছে ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির সঙ্গে তারা এখনও ভালোভাবে পরিচিত হতে না পারার কারণে এমন ঘটছে।
এই অবস্থায়, শনিবার রাতে মার্কিন ফেডারেল আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এদিন ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় আংশিক স্থগিতাদেশ জারি করেন ফেডারেল বিপারপতি। ফেডারেল আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়, যারা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন, অথধবা যারা এই মুহূর্তে ভ্রমণপথে রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি প্রযোজ্য হবে না। ফেডারেল আদালতের সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়েছে, যারা বৈধ ভিসার অধিকারী, তাদেরকে অবশ্যই প্রবেশাধিকার দিতে হবে।
শরণার্থী কর্মসূচি স্থগিত ও মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে গিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা ব্যক্তিরা ট্রাম্পের আদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ট্রাম্প আইনি চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছেন। দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) নামের এক বিখ্যাত আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, নয়া প্রেসিডেন্টের এই আদেশ সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদেশটিকে একটি ফেডারেল মামলা দায়েরের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্পের এ আদেশের মূল উদ্দেশ্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।