রায়হান সিকদার,(লোহাগাড়া): ভিক্ষে করে বা কারো করুণার উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনা। সংসার সমরাঙ্গনে শত আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতায় আমি মনোবল হারাইনি। জীবন সংগ্রামে আমি একজন অতন্দ্র প্রহরী। আমি গরীব। সংসারের অভাব অনটনের সহিত প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে কালযাপন করে যাচ্ছি। আমি বর্তমানে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। পরিবার-পরিজন নিয়ে জীর্ণশীর্ণ কুটিরে বসবাস করছি। গত ২২ অক্টোবর বিকেলে উক্ত প্রতিনিধি তাঁর সহিত স্বাক্ষাৎ করলে তিনি শুরুতে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাঁর সহিত আলাপ করলে তিনি জানান, তার নাম আব্দুল ছপুর। বয়স প্রায় ৪৫বছর। পিতার নাম মৃত আব্দুল আলিম। মধ্য আমিরাবাদ খাইয়ের উকিল পাড়ায় তাঁর বাড়ি। সংসারে এক স্ত্রী ও দু’কন্য রয়েছে। বড় কন্যার বয়স ৭বছর এবং ছোট কন্যার বয়স প্রায় ১বছর। বড় কন্যাটি বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। তাঁর সহায়-সম্বল কিছুই নেই। এক কক্ষবিশিষ্ট জীর্ণশীর্ণ একটি কুটিরে পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করে যাচ্ছেন। বর্ষায় তাদের দূর্গতির সীমা থাকেনা। প্রতিবন্ধী হওয়া সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞসা করা হলে তিনি জানান, জন্মগতভাবে তিনি প্রতিবন্ধী নন। তাঁর বড়ভাই একজন সিএনজি টেক্সী চালক। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অদম্য আগ্রহ নিয়ে শৈশবে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। লেখাপড়া প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি উত্তর আমিরাবাদ এমবি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। কালের সিঁড়ি পেরিয়ে পা-পা করে অষ্টম শ্রেণীতে উপনীত হন। ওই সময় তিনি ফুটবল প্রেমিক ছিলেন এবং প্রায় সময় ফুটবল খেলতেনও। হঠাৎ একদিন ফুটবল খেলায় তাঁর ডান পায়ের হাঁটুতে আঘাত লাগে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করেও তিনি ওই আঘাত থেকে পরিত্রান লাভ করেননি বরং আঘাত দিন দিন জটিল আকার ধারণ করতে থাকে। পরবর্তীতে ব্যাথা-বেদনা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আর্থিক সামর্থ্যনুযায়ী বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাও করেছিলেন। কিন্তু সুস্থতা লাভ করা তাঁর ভাগ্যে জুটেনি। যেকারনে এ করুণ পরণতির শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী হিসেবে কাল যাপন করতে হচ্ছে। শারীরিক শ্রম দিয়ে কোন কাজ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপরও ভিক্ষাবৃত্তির পর পরিহার করে তিনি কর্মের মাধ্যমে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। শক্ত মনোবল নিয়ে তিনি অবশেষে বিবাহ অনুষ্ঠানের ঘটকগিরি করতে শুরু করেন। যেহেতু ওই কাজে শারীরিক শ্রম তেমন ব্যয় করতে হয় না। তিনি আরো জানান, কখনো সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না এবং বিছনায় ও সোজা হয়ে ঘুমাতে পারেন না। সংসারে আর্থিক ব্যয়ভার নির্বাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, গুঁজো দিয়ে তাঁকে পায়ে হেঁটে অতি কষ্টের মাধ্যমে চলাফেরা করতে হয়। বিয়ের ঘটকগিরি করে মাঝে-মধ্যে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে তিনি সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করে থাকেন। আর্থিক সহায়-সম্বল না থাকায় তিনি প্রতিনিয়ত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা সংকটের সম্মুখীন। বর্তমানে অতি কষ্টের মাধ্যমে মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয়ভার নির্বাহ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, কর্মময় জীবনের অশান্ত স্রোতের মাঝে ন্নিমূল হয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে যেন মান-সম্মান সহকারে সমাজে টিকে থাকতে পারেন এটুকু আশা বুকে নিয়ে কোন মতে জীবন অতিবাহিত করছেন। তাই তিনি এই জীবনে কারো করুণার উপর নির্ভরশীল না হয়ে কর্মের মাধ্যমে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।