বিশেষ প্রতিবেদক:
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’ এর প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিনের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছ। ঘরের ভেতরে কয়েক ফুট পর্যন্ত পানি ঢুকেছে। ফলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে মানুষ। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৮ টার পর থেকে দ্বীপের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
তিনি জানান, জোয়ারের সময় পানি বাড়লেও তা শুধু নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। আমরা লোকজনকে সরিয়ে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। সরকারি দুটি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বেসরকারি ভবন, ডাকবাংলো, সরকারি অফিসকে আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে। জোয়ারের পানি নেমে গেলে লোকজন যার যার বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু এখন কাউকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বের হতে দিচ্ছি না।
রাত দশটার সময় কথা হয় চেয়ারম্যান মুজিবের সাথে।
তিনি আরো বলেন, এখন বাতাসের গতিবেগ কমে এসেছে। জোয়ারের পানিও নামতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় আমাদের মাঝে আতংকও কমে এসেছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে লাখো মানুষ। অনেকটা নির্ঘুম রাত উপকূলবাসীর।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন, কক্সবাজার থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছে। সোমবার রাত বা ভোরবেলায় এটি কক্সবাজারে আঘাত হানতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৭নং বিপদ সংকেত বলবৎ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, সোমবার দুপুর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ও ৩ হাজার গৃহপালিত পশু আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। শহরের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া ও নাজিরারটেক এলাকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন সরিয়ে নিচ্ছে কক্সবাজার পৌরসভা। অজানা শঙ্কায় হাজার হাজার মানুষ ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রে। তবে যানবাহন সংকটে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, সাগরের তীরবর্তী হওয়ায় এই এলাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী একেএম তারিকুল আলম বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ১৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষকে যানবাহন করে আনা হচ্ছে। সবার জন্য খাবারসহ নানা সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় মাঠে নেমেছে পৌর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে ঝুঁকিপূর্ণ এালাকায়
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ১নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়া, নাজিরার টেক, কুতুবদিয়া পাড়া। এখানে সকাল থেকে পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লোকজনকে নিরাপদে সরাতে মাইকিং করছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য বোঝানো হয়েছে। স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে না আসা পর্যন্ত এই কাজ অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ অন্তত এক লাখ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাদের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লোকজনকে ইতিমধ্যে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে।
মহেখালী উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, উপজেলার মাতারবাড়ি, ধলঘাটা ও কুতুবজোমসহ মহেশখালীতে অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দুপুরের পর থেকে তাদের সরিয়ে আনার কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা জানান, কুতুবদিয়া ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে সাত থেকে আট হাজার মানুষ। তাদের সরিয়ে নিতে কাজ করেছে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। বিকাল পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ সব লোকজনকে সরিয়ে আনার কথার জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: এরফানুল হক চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কিছু এলাকায় পানি ঢুকেছে। তবে এ পর্যন্ত প্রাণহানি বা বড় ধরনের দূর্যোগ বা দূর্ঘটনা ঘটেনি। তারপরও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি নেয়া আছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র। মজুত আছে ১০ লক্ষ টাকা, ৩০০ মে.টন চাল, ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করছে ১০ হাজার সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক ও ১০৮টি মেডিকেল টিম।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।