বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এমন শতাধিক লিখিত অভিযোগ এসেছে। অভিযোগকারীদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
তাদের কেউ অভিযোগে বলেছেন, পুলিশের সহায়তায় সরকার সমর্থক প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্র দখল করেছে। এজেন্টদের মারধরের পর বের করে দিয়েছে। আবার কারো দাবি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ভোট পেলেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ফল পাল্টে দেয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের সঙ্গে কেউ কেউ অনিয়মের নানা ছবি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ছবির ক্লিপিংও সংযুক্ত করেছেন।
অভিযোগে বেশিরভাগ প্রার্থীরা নির্বাচনী গেজেট প্রকাশ না করে পুনঃনির্বাচন দাবি করলেও বৃহস্পতিবার রাতেই তড়িঘড়ি করে গেজেট প্রকাশ করেছে কমিশন।
গত মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট হয়। ব্যাপক জাল ভোট, কেন্দ্র দখল আর কারচুপির অভিযোগ এনে বেলা ১২টার মধ্যে বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
পরের দিন বুধবার তিন সিটিতে সরকার সমর্থক প্রার্থী আনিসুল হক, (ঢাকা উত্তর), সাঈদ খোকন (ঢাকা দক্ষিণ) ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে (চট্টগ্রাম) মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
এদিন থেকেই নির্বাচন কমিশনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ আসতে থাকে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় শতাধিক আবেদন জমা পড়ে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসি কার্যালয়ে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। প্রার্থীদের কোনো অভিযোগ থাকলে এর জন্য আপিল কর্তৃপক্ষ আছে। তারা সেখানে আপিল করলে কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
আর নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণার পর কমিশনের আইনত কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ-আবেদন করেও কোনো লাভ নেই। অভিযোগকারীদের এখন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে।’
ইসিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াছুর রহমান লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এতে তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টার দিকে ওই ওয়ার্ডের ৩৮ কেন্দ্রে তার প্রতিপক্ষ ‘ঠেলাগাড়ি’ প্রতীকের মো. সেলিমের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রতিটি বুথ থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে ইচ্ছামতো সিল মারে। কেন্দ্রের বাইরে থাকা তার এজেন্টদেরও মারধর করা হয় এবং ওই সব এজেন্টের কাছে থাকা ১০টি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
ইলিয়াছুর রহমান এখানে ‘ঘুড়ি’ প্রতীকে প্রার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে খবর পেয়ে জরিনা সিকদার স্কুল ও রায়েরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাই। আমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ওরা কয়েকটি বোমা ও কয়েক রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি হয় এবং আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। ওই সময় হাজারীবাগ থানার সেকেন্ড অফিসারের সহযোগিতায় পুলিশ প্রটেকশনের মাধ্যমে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সৈয়দ আমিুনল হোসেনের মাধ্যমে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানাই।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে লেখা অভিযোগপত্রে ইলিয়াছুর রহমান আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘এই ভোট লুটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করুন।’
ঢাকা উত্তর সিটিতে কাউন্সিলর পদে আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসি সচিবালয়ে অভিযোগ জমা দেন। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত ফল প্রকাশ না করে ইচ্ছামতো ফল প্রকাশ করে আমার প্রতিপক্ষকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকা দক্ষিণের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মোহাম্মদ মনির হোসেন ইসিতে অভিযোগ করেন, তার ওয়ার্ডে ২০টি কেন্দ্রে প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে ৩,৪৮৯। অথচ তিনি ওই ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে পেয়েছেন ৩,৮২৭ ভোট।
মনির হোসেন তার অভিযোগপত্রে বলেছেন, ‘ভোট গণনার অনেক আগেই অনেক কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টদের কাছে রেজাল্টশিটে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয় এবং তাদের জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে মনমতো রেজাল্টশিট তৈরি করা হয়। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অনেকেই এ দুর্নীতিতে অংশ নেন।’
তিনি জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার তিনি পাননি।
আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ভোটে হেরে বেশ কয়েকজন প্রার্থী ইসিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে তারা ভোট জালিয়াতি ছাড়াও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশে ফলাফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
এমনই এক কাউন্সিলর প্রার্থী হলেন- ঢাকা উত্তরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে রমনা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোক্তার সরদার। তিনি আবেদনে অভিযোগ করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ওই ওয়ার্ডে ১৭টি কেন্দ্রে তিনি ৩,৪২৪ ভোট পেয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফয়জুল মুনির চৌধুরীকে ১৭ কেন্দ্রে ২,৪৭৩ ভোট পাওয়ার পরও জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।’
মোক্তার সরদার বলেন, ‘এক প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশেই আমার ওয়ার্ডের ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আমি সিইসির কাছে এর প্রতিকার চেয়েছি।’
ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গত বুধবার ইসিতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে নির্বাচনে কারচুপি, কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে গেজেট প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।
অভিযোগের সঙ্গে ভোটগ্রহণে অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ছবির ক্লিপিং জমা দেন তিনি।
অভিযোগে তিনটি দাবি তুলে ধরে তাবিথ বলেন, নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে তা সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যালট পেপার সিলগালা করে নিরাপদে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশসহ প্রতিবেদন না হওয়া পর্যন্ত মেয়র পদের ভোটের সরকারি ফলসংবলিত গেজেট প্রকাশ বন্ধ রাখতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিব নির্বাচনী ফল প্রকাশে অনিয়মের অভিযোগ করেন। প্রমাণ হিসেবে তিনি একটি কেন্দ্রের রেজাল্ট শিট উপস্থাপন করে বলেন, খোদেজা খাতুন প্রাইমারি স্কুলের পুরুষ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ২৬১৫ জন। কাউন্সিলর পদে ১,০৬৪টি ভোট পড়েছে। ওই শিটে অনুপস্থিত ভোটার দেখানো হয়েছে ১,১৫১টি।
বাকি ৪০০ ভোট তাহলে কোথায় গেছে সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। অথচ একই কেন্দ্রে মেয়র পদে ফলের শিটে প্রদত্ত ভোট দেখানো হয়েছে, ১,০৬৬ এবং অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে ১,৫৪৯। এ বিষয়ে ইসিতে অভিযোগ করে খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিব ওই কেন্দ্রের ভোট পুনঃগণনা বা পুনঃভোটগ্রহণের দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘একটি কেন্দ্রে ৪০০ ভোট কারসাজি করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ২৬৮ ভোট বেশি দেখিয়ে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।’
এছাড়া ঢাকা উত্তরে সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী পেয়ারা মোস্তাফা জাল ভোটের অভিযোগ এনে ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী রেজাউল হক ভূঁইয়া কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে পুনঃনির্বাচনের জন্য আবেদন করেছেন।
ঢাকা উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এ এল এম কাওছার আহমেদের পক্ষে তার প্রস্তাবকারী আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেছেন।
এতে বলা হয়েছেন, ‘এলাকায় সৎ, শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত ৬৫ বছর বয়সী কাওছার আহমেদ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই মিরপুর থানার পুলিশ ও ডিবি পরিচয়ে তার বাসায় গিয়ে এক দল লোক তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য কয়েকবার হুমকি দেয়। এরপর তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গত ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। এরপরও ভোটগ্রহণের দিন সকাল থেকে কাওছার আহমেদের রেডিও মার্কায় বিপুলসংখ্যক ভোট পড়ে। কিন্তু দুপুর ১২টার পর কুমড়া প্রতীকের (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতীক) লোকজন আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে জাল ভোট দিতে থাকে এবং পরে ভোট গণনাও বিলম্বিত করে। আমরা এখনো জানতে পারিনি ওই ওয়ার্ডে কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন।’
কাওছার আহমেদের পক্ষ থেকে ওই ওয়ার্ডের ১৭টি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গণনার আবেদন জানানো হয়েছে। তবে জানা গেছে, ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাত্র ১৩৫ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ মো. আলমগীর নির্বাচনে কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে ইসির কাছে প্রতিকার চেয়েছেন।
দক্ষিণের সংরক্ষিত ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শামীমা আক্তার সোমা তার লিখিত অভিযোগে বলেন, তার নির্বাচনী এলাকা গোড়ান ও মেরাদিয়ার সব কেন্দ্রে সরকারি দলের কর্মীদের জাল ভোট দেয়ার সময় হাতে-নাতে ধরা হয়। এ সময় জালিয়াতিকারীরা আমাকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, দক্ষিণ বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জালভোট দেয় সরকারদলীয় প্রার্থীর কর্মীরা। এ সময় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সোমা নির্বাচন কমিশনের কাছে ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনঃভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম সিটির সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রেখা আলম চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসের মাধ্যমে নীলু নাগের লোকজন কেন্দ্র দখল করে তার পানপাতা প্রতীকে সিল মারে। এ সময় আমার পোলিং এজেন্টদের মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোট স্থগিত করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করি। কিন্তু তিনি সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এজন্য তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর জালিয়াতি করা ভোটের ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের অনুরোধ জানান।
একই সিটির সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌস বেগম মুন্নি জানান, ভোট গ্রহণ শুরুর পর প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী ভোট কেন্দ্রগুলো থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়। এর প্রতিবাদ করলে তার বোনসহ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তারা প্রিজাইডিং ও সহাকরী প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যাপকভাবে জালিয়াতি করে।
তিনি মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তার নির্বাচনী এলাকায় পুনঃভোটের আবেদন জানান।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুস সবুর লিটন বলেন, নির্বাচনে ১২৫ ভোটে এগিয়ে থাকি, যা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত নমুনা কপি আমাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কমিশনে আসার পর দেখা যায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এসএম এরশাদ উল্লাহর প্রাপ্ত ৬১ ভোটের স্থলে ৩৮১ ভোট দেখিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
তিনি বিষটি সুরাহার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন।
ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষণ নিয়েও লুকোচুরি
সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ঘটলে তার ভিডিওচিত্র ধারণ করার জন্য তিন সিটিতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫৩ জন কর্মী নিয়োগ করেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই কর্মীদের ওয়েবক্যামসংবলিত একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ঢাকা দক্ষিণের তিনটি কেন্দ্রে তাদের তিনটি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়ে ধারণ করা ভিডিওচিত্র নষ্ট করে পরে ফেরত দেওয়া হয়। অনেক কেন্দ্রে ওই কর্মীরা সহজে ঢুকতেও পারেননি। প্রতিকূলতার মধ্যেও অনিয়মের চিত্র ধারণ করে ইসি সচিবালয়ে জমা দিয়েছেন কয়েকজন। কিন্তু সেসব এখনো দেখার সময় পাননি নির্বাচন কমিশনাররা।
জানতে চাইলে ওই কর্মীদলের সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্টেনো-টাইপিস্ট কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছোট চাকরি করি। আমার কাছে এসব বিষয়ে কিছু জানতে চাইয়েন না। যা দেখেছি, যা ধারণ করেছি তা নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি।’
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের আইটি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব তথ্য ভবিষ্যতে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য কাজে লাগতে পারে। আগের কমিশন সিসি টিভির মাধ্যমে ভোট পর্যবেক্ষণের পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু ওই ব্যবস্থা ব্যয়বহুল বিবেচনায় পরিত্যাগ করা হয়েছে। এবার ল্যাপটপ দিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে কমিশন উপলব্ধি করেছে যে এত বড় একটি ডিভাইসে ভালো কাজ হবে না।’
এছাড়া নির্বাচন কমিশন ৪৫ জন থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারাও কোনো পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেননি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিশন যেমন প্রতিবেদন চায়, তেমন প্রতিবেদনই জমা দেওয়া হবে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।