২৯ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  যারা ক্লাসে ৭০% উপস্থিত থাকবে না তাদের পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া হবে না- শাহাজাহান চৌধুরী   ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান

ইয়াবা কারবারির পাশে ডিআইজি!

মাদকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলছে জোরদার অভিযান। ইয়াবা কারবারি ও তাদের নেপথ্য জোগানদাতাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে র্যাব-পুলিশ। সাধারণ মানুষও তাই মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন মাদকের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্সের কথা। এই যখন অবস্থা, তখন খোদ পুলিশেরই এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এক ইয়াবা কারবারির নাম মাদকবিষয়ক একটি মামলার চার্জশিট থেকে ‘বিশেষ সখ্যতার’ কারণে বাদ দেওয়ার।
যার বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ, তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) এসএম মনির-উজ-জামান। আর অভিযোগকারী

তারই রেঞ্জভুক্ত কক্সবাজারের রামু থানার ওসি লিয়াকত আলী। আর যাকে মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তার নাম জিএম ছারোয়ার। তিনি ঢাকার সদরঘাট তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ভিসিভোয়া) সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর কক্সবাজারের কলাতলী ট্যুরিস্ট জোনে অবস্থিত বে-ভিউ আবাসিক হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে ৩২ পিস ইয়াবাসহ তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তার নামে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়, যার নম্বর ৪৬ (১২) ২০১১ইং।
এদিকে ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যাসহ একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন ওসি লিয়াকত আলী। অন্যদিকে তারই ডিআইজি মনির-উজ-জামান পুলিশ সদর দপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন ওসি লিয়াকত আলীকে রামু থানা থেকে প্রত্যাহারের জন্য। বিষয়টি নিয়ে এখন কক্সবাজারের পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে নানা রকম গুঞ্জন। এ অবস্থায় এ গুঞ্জনে জোর বাতাস লেগেছে ডিআইজি মনির-উজ-জামানের সঙ্গে তোলা একটি ছবি জিএম ছারোয়ার তার ফেসবুকে পোস্ট করায়। পুরো বিষয়টিতে নজর রেখেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওসি লিয়াকত আলীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর রামু থানা পুলিশ ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ একটি প্রাইভেটকার ও এর চালক দ্বীন ইসলামকে আটক করে। প্রাইভেটকারের অপর দুই আরোহী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আটকের পর গাড়িচালকের মোবাইল ফোনে একটি রহস্যজনক এসএমএস দেখতে পায় রামু থানা পুলিশ। ওই এসএমএসে লেখা ছিল, ‘স্যার দোয়া করেন। মাল পাইছি। কাল পাইবেন।’
তদন্তকারী সূত্র বলছে, রামু থানা এলাকায় আটকের আগে ইয়াবার চালান হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ইয়াবা কারবারিকে এ বার্তা পাঠান গাড়িচালক দ্বীন ইসলাম। ফোন নাম্বার থেকে দেখা গেছে, সেটি জিএম ছারোয়ারের। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দ্বীন ইসলাম গাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই আরোহীসহ ইয়াবার ওই চালান পাচারে জড়িত মোট তিনজনের নাম প্রকাশ করে। রামু পুলিশ বলছে, তৃতীয়জন হচ্ছেন জিএম ছারোয়ার।
ওই ঘটনায় রামু থানার এসআই ফজলুল করিম বাদী হয়ে গাড়িচালক দ্বীন ইসলাম, ইয়াবার কারবারি হিসেবে জিএম ছারোয়ার, কামরুল ইসলাম লিংকন ও শাহিদ উদ্দিন নামের চার ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করেন [রামু থানার মামলা নং-২৫ (১০) ২০১৭]।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রামু থানাধীন পুরান বাইপাস ও জোয়ারিয়া নালা এলাকায় অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকালে চা-বাগান রাস্তার মাথায় অবস্থানকালে গোপন সূত্রে জানতে পারেন, রামু থানাধীন পুরান বাইপাস কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী রাস্তার ওপর একটি সাদা প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো গ ৩৭-৯৬৪০) চেক করে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় রাস্তার ওপর আটক করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামু থানার এসআই সৈয়দ ছানাউল্লাহর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাড়িটি আটকের পর অপর দুজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি তল্লাশি করে ১০টি নীল রঙের জিপার প্লাস্টিকের প্যাকেটে প্রতিপ্যাকে ২০০ পিস করে মোট ২ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। যার মধ্যে ৩টি প্যাকেটে ৬০০ পিস ইয়াবা গাড়িচালক দ্বীন ইসলামের প্যান্টের পকেটে ছিল। ৭ প্যাকেটে ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা চালকের বসার সিটের নিচে ছিল।
এতে আরও বলা হয়, মামলার সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারা মোতাবেক আলাদা কাগজে লিপিবদ্ধ করি। পর্যালোচনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি দ্বীন ইসলামের সঙ্গে মামলার ঘটনাপূর্বে একাধিকবার পলাতক আসামি জিএম ছারোয়ারের যোগাযোগ এবং এসএমএস আদান-প্রদান হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে পাঠানো ব্যাখ্যায় ওসি লিয়াকত আলী জানান, রামু থানায় মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে গত ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মনির-উজ-জামানের সঙ্গে তার চট্টগ্রাম অফিসে দেখা করেন ইয়াবা কারবারি ছারোয়ার। এ সময় তিনি ডিআইজি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে ফাঁসানোর অভিযোগ তোলেন জিএম ছারোয়ার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জিএম ছারোয়ারের অভিযোগ দায়েরের পর ডিআইজি মনির কক্সবাজার সফরে যান। তখন রামু থানায় জিএম ছারোয়ারসহ চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী এসআই ফজলুল করিম ও তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল পারভেজকে কক্সবাজারের হোটেল কক্স টুডেতে মামলার ডকেটসহ ডেকে পাঠান ডিআইজি। তবে ডিআইজি হোটেলে না গিয়ে কেস ডকেট পর্যালোচনার জন্য রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের স্টাফ অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ও একই অফিসের একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে (এএসপি) ওই হোটেলে পাঠান। দুই পুলিশ কর্মকর্তা কেস ডকেট পর্যালোচনা করে আইনি সুযোগ না থাকলেও ডিআইজির নির্দেশে এজাহারনামীয় আসামি জিএম ছারোয়ারকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
ডিআইজির নির্দেশে শুধু গাড়িচালক দ্বীন মোহাম্মদকে অভিযুক্ত করে মাদক মামলার আসামি জিএম ছারোয়ারসহ ৩ আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। চার্জশিট দাখিলের জন্য যে সাক্ষ্য স্মারকলিপি দেওয়া হয়, তাতে অনুমোদন দেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার। পরে তিন আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি ডিআইজি মনিরকে অবহিত করা হয়।

ওসির প্রতিবেদনে আরও যোগ করা হয়, মাদক মামলার আসামিদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার পর ডিআইজি মনিরের নির্দেশে উল্টো জিএম ছারোয়ারের দেওয়া অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম রোকনউদ্দিন সরেজমিন রামু থানায় গিয়ে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি গ্রহণ করলেও ওসির কাছ থেকে কোনো বক্তব্য গ্রহণ করেননি। উপরন্তু গত ৩০ এপ্রিল কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার একেএম ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওসিকে শোকজ করা হয়। এতে বলা হয়Ñ মামলা দায়েরের আগে পলাতক এজাহারনামীয় আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা সে সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করেননি। মামলাটি তদন্তকালে সঠিক উদ্যোগ নেননি। পলাতক আসামিরা এজাহার মোতাবেক কেন ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এবং কেনইবা পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই না করে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য গাড়িচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল ও পলাতক আসামিদের অব্যাহতি প্রদানের নিমিত্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট এমই (স্বাক্ষ্য স্মারকলিপি) অগ্রবর্তী করেন। এ ক্ষেত্রে ওসি হিসেবে আপনার মামলা তদন্ত তদারকিতে চরম অবহেলা ও অনভিজ্ঞতা প্রকাশ পায়, যা অসদাচরণের শামিল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘কাউকে বাদ দিতে গেলে সেটা তদন্তের পর্যায়েই হয়। তদন্তে যদি আমার নামও আসে, তা হলে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তথ্যপ্রমাণ থাকলে কাউকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া যায় না।’
আর রামু থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, এটা আমাদের বিভাগীয় বিষয়। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।