২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

ইয়াবা পাচারে নিত্যনতুন চমক!

ইয়াবা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তৎপরতা বাড়ছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ইয়াবা জব্দ করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাচারকারীদের চমক! নিত্যনতুন কৌশলে দেশজুড়ে ইয়াবা সরবরাহ করছেন তারা। কখনো শরীরের গোপনস্থান, তো কখনো পাকস্থলি। কখনো ফল-সবজির আড়াল, কখনো দুধের কৌটা কিংবা জুতার সুকতলা কৌশলের যেন শেষ নেই।

গত বছরের ৭ জানুয়ারি পেটে পুরে ২ হাজার ইয়াবার চালান পাচার করতে গিয়ে মোশতাক আহমদ নামে একজনের মৃত্যু হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পেট থেকে ইয়াবা বের করা হয়।

একই বছরের ১০ জানুয়ারি পায়ুপথে নিয়ে ইয়াবা বড়ি পাচার করতে গিয়ে বাঘাইয়া নামে একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। অবশ্য পেটের ব্যথার কারণে তিনি মারা যান। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বাঘাইয়ার পেট থেকে ১ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়।

গত বছরের ১৩ ফেরুয়ারি টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচারকারী দুই নারী ৮৫০টি ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। রাজধানী মতিঝিল এলাকার শতাব্দী টাওয়ারের সামনে থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। ওই ইয়াবা কলার ভেতর করে খেয়ে তারা ঢাকায় আসছিল। পরে হাসপাতালে নিয়ে পায়খানা করার সময় ওই ইয়াবা বের হয়ে আসে।

গত বছরের ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে পাঁচ লাখ ইয়াবাসহ ৭ জনকে আটক করে র‌্যাব। তারা বিশেষ কায়দায় ট্রলারের ভেতর ইয়াবাগুলো লুকিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসছিল।

গত ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কর্ণফুলী এলাকার মইজ্যারটেক থেকে দেশ ট্রাভেলস পরিবহনে তল্লাশি করে কাঠের চেয়ারে বক্স তৈরি করে পাচারের সময় ২৫ হাজার ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করা হয়। আটক দুইজনের মধ্য একজন নারী।

এ ছাড়া গত ১৮ নভেম্বর শনিবার রাতে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহসড়কের সাতকানিয়া চেকপোস্ট থেকে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। তার কাছে থাকা একটি পরিপক্ব ঝুনা নারিকেলের ভেতরে কৌশলে লুকিয়ে রাখা এক হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়।

এ ছাড়াও কাঁচা সুপারি, বইয়ের ভেতর, চশমার বাক্সের ভেতর, জিআই পাইপের ভেতর, পুরুষের মলদ্বার ও নারীর শরীর থেকে ইয়াবা উদ্ধার করছে পুলিশ। আবার সন্দেহ না করার জন্য সাংবাদিক থেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ইয়াবা পাচারে আনছে নতুন কৌশল। বেছে নিচ্ছে নতুন নতুন পাচারের রুটও।

এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর লালপুর এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে বিশেষ কায়দায় লুকানো ৭ লাখ ইয়াবাসহ দুইজন আটক করা হয়।

পুলিশ বলছে, সংঘবদ্ধ ইয়াবা পাচারকারী চক্র তাদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। দুই একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যান কিনে তারা নিজেদের পরিবহন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। সেই পরিবহনে তারা সাধারণত পচনশীল দ্রব্য যেমন মাছ পরিবহন করছে। মূলত পণ্য পরিবহনের মতো করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবা চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ অামানত সেতু সংলগ্ন চাক্তাই মেরিনার্স রোডের মুখে মাছ বোঝাই একটি কাভার্ডভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে এক লাখ ২০ হাজার ইয়াবা জব্দ করে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, এতো ঝুঁকি নিয়ে তারা কেন এরকম অপরাধ করে? ইয়াবা পাচার ও ধরা খেলে সরকার কঠোর আইন করেছে জেনেও তারা ইয়াবা পাচার করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির সিনিয়র পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা বহনকারীদের দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। শরীরে তল্লাশি করেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ইয়াবা বহনের অভিনব কৌশল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সহজে যাতে খুঁজে না পাওয়া যায় সেজন্য এখন পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদক পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে ইয়াবা বহন করছেন। ইয়াবা বহনের এত কৌশল রীতিমতো বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে পুলিশকে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতুর ( কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু) দক্ষিণ পাশে সার্বক্ষণিক তল্লাশি ও নজরদারি জোরদার করার কারণে পাচার ও রুট পরিবর্তন করে নৌপথ ও রেলপথ দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা এখন নির্বিঘ্নে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ( অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মো.তানভির জানান, এতো ধরা পড়ার পরও কমছে না ইয়াবা পাচার। অপরাধীরা এক এক সময় ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন যা রীতিমতো ভাবনার বিষয়।

সড়ক পথ ছাড়াও নৌ-পথে ইয়াবা পাচার হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে (সাগরে) কোস্ট গার্ডের সদস্যরা রয়েছেন। কোন সুযোগ নেই পাচারের।

এতো চেকপোস্টের পরও ইয়াবার চালান বন্ধ হচ্ছে না -এমন প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের চেষ্টার কোন বিকল্প নেই।’

র‌্যার-৭ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) মিমতানুর রহমান কে বলেন, ’আমাদের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। পাচারকারিরা যতই ধূর্ত হওক আমাদের চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না। আমাদের টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।’

সূত্রঃ প্রিয় ডটকম

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।