৬ মার্চ, ২০২৫ | ২১ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ৫ রমজান, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  বন কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকির ভিডিও ভাইরাল, নিরাপত্তা চেয়ে জিডি   ●  টেকনাফে ১০০০ জেলে পরিবারকে সহায়তা করছে কোস্ট ফাউন্ডেশন   ●  আল-নুর ইন্টান্যাশনাল মাদ্রাসা’র বই বিতরনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন   ●  টেকনাফে গহীন পাহাড়ে বন্যহাতির রহস্যজনক মৃত্যু!   ●  কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে ‘হাসিনার ভূত’ .নৈশভোটের মাস্টারমাইন্ড ইয়ামিন বহাল তবিয়তে   ●  কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যোগদান করলেন ডা. আরিফা মেহের রুমী   ●     ●  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ওয়াসিমের কবর জিয়ারত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক দল   ●  চকরিয়ায় দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ৩ জনকে আটক   ●  অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার

ইয়াবা পাচারে ৬ পুলিশের ‘কুমিল্লা সিন্ডিকেট’

03_236812_1-300x298

মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে আসে কক্সবাজার হয়ে। এরপর তা ঢাকাসহ ছড়িয়ে যায় বিভিন্ন জেলায়। ভয়ংকর এ মাদক পাচারের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকরা ছাড়াও পুলিশ সদস্যরা জড়িত। কক্সবাজারে কর্মরত পুলিশের একটি সিন্ডিকেট দুই বছর ধরে সারা দেশে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের কাছ থেকে ইয়াবা কিনলে ঝুঁকি কম, তাই ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন ঝুঁকেছে পুলিশের এই বিশেষ সিন্ডিকেটের দিকে। গত শনিবার রাতে ছয় লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা পাচারের সময় ফেনীর লালপোল থেকে এই সিন্ডিকেটের সদস্য এএসআই মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার পরই সিন্ডিকেটের তথ্য বেরিয়ে আসে।
গোয়েন্দা সংস্থার মতে, কক্সবাজার থেকে পুলিশের এ সিন্ডিকেটটি মাসে অন্তত ৫০ লাখ ইয়াবা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে। সিন্ডিকেটের বেশির ভাগ সদস্যের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। এ কারণে পুলিশের মধ্যে এই সিন্ডিকেটের নাম ‘কুমিল্লা সিন্ডিকেট’ হিসেবেও পরিচিত। কক্সবাজারের জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও টেকনাফ থানায় বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা মিলে গড়ে তুলেছেন এ সিন্ডিকেট। এর মধ্যে এসআই পদমর্যাদার দুই সহোদরও রয়েছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। অন্যদের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার রাতে র‌্যাবের একটি দল ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য এএসআই মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর সঙ্গে গাড়িচালক জাবেদ আলীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। মাহফুজ ২০১৩ সালে কক্সবাজার থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত ছিলেন। এর আগে দুই বছর তিনি কক্সবাজার জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার মিরপুর গ্রামে। জাবেদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার বাদুগড় গ্রামে। ঢাকায় তাঁর কাছ থেকে ইয়াবাগুলো হাইকোর্টের মুহুরি মো. মোতালেব, অ্যাডভোকেট জাকির, এসবির কনস্টেবল শাহীন, কাশেম ও গিয়াসের বুঝে নেওয়ার কথা ছিল। মাহফুজ বেশির ভাগ সময় কর্মরত ছিলেন ইয়াবা পাচারের অন্যতম রুট কক্সবাজারের টেকনাফ থানায়।
জানা গেছে, ইয়াবাসহ ধরা পড়ার পর র‌্যাবের কাছে মাহফুজ স্বীকার করেছেন তিনিসহ পুলিশের অন্তত ছয় কর্মকর্তা ইয়াবা পাচারের সঙ্গে যুক্ত। মাহফুজ ইয়াবাগুলো নিয়েছিলেন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রেঞ্জের কুমিরা ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আশিকুর রহমান ও কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মো. বেলালের কাছ থেকে। র‌্যাবের করা মামলায় মাহফুজের সহযোগী হিসেবে বেলাল ও আশিককেও আসামি করা হয়েছে।
ছয় পুলিশের ‘কুমিল্লা সিন্ডিকেট’ : র‌্যাবের কাছে মাহফুজ তাঁর সহযোগীদের নাম স্বীকার করেছেন। বেলাল ও আশিক ছাড়াও সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন কক্সবাজার ডিবি পুলিশের এসআই আমিরুল ইসলাম, ডিবি পুলিশের এসআই কামাল আব্বাস ও আশিকের ভাই কক্সবাজার ডিবি পুলিশের এসআই (বর্তমানে মহেশখালী থানায় কর্মরত) আনিসুর রহমান। সবার বাড়ি বৃহত্তর কুমিল্লায়। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা কক্সবাজরে চাকরি করছিলেন।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় কক্সবাজারে ইয়াবা আটক করেছেন এই সিন্ডিকেটের পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা আটক করলেও তাঁরা অল্প পরিমাণ জমা দিয়েছেন পুলিশ বিভাগে। বাকি ইয়াবা নিজেরা বিক্রি করার জন্য সেগুলো কক্সবাজারে ভাড়া বাসায় নিয়ে মজুদ করতেন। কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টে রুম ভাড়া নিয়েও সেখানে ইয়াবা মজুদ করতেন তাঁরা। এই মজুদ থেকে মাসে দুটি চালান ঢাকায় পাঠানো হতো। নিরাপদে ইয়াবার চালান ঢাকায় আনতে ব্যবহার করা হতো পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি।
জানা গেছে, পুলিশ লেখা ব্যক্তিগত গাড়ি দেখলে রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ তল্লাশি করত না। ফলে সহজেই ইয়াবা পৌঁছে যেত ঢাকায় নির্দিষ্ট ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাতে।
মাহফুজ র‌্যাব কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিতভাবে ইয়াবা পাচার করতেন। কক্সবাজার থেকে এএসআই বেলাল ইয়াবা সংগ্রহ করে তাঁর (বেলালের) মালিকানাধীন মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় নিয়ে যেতেন। আর মাঝেমধ্যে কক্সবাজার যেতেন মাহফুজ। মাহফুজের তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেলাল ও আশিকই ইয়াবা পাচারের মূল হোতা। বেলালের নিজস্ব মাইক্রোবাসে করে ইয়াবা পাচার বেশি হয়।’ মাহফুজুরের গাড়িচালক জাবেদের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাবেদ মূলত মাহফুজুরের গাড়িচালক। তবে ইয়াবা কার কার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, সেটা জাবেদ জানেন না। মাহফুজ নিজেই গাড়ি চালিয়ে গ্রাহকদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেন।’
কক্সবাজার পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের জিজ্ঞাবাসাদ করলে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে। ঢাকায় যারা এঁদের কাছ থেকে ইয়াবা কিনত তাদের নাম পাওয়া যাবে।
এএসআই মাহফুজ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ সিন্ডিকেটের অনেকেই কক্সবাজার থেকে বদলি হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটের সদস্য এএসআই বেলাল ও এসআই কামাল আব্বাসকে ডিবি পুলিশ থেকে বদলি করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশের ইয়াবা পচারে জড়িত থাকার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, পুলিশের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। ইয়াবা পাচারে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

সূত্র: কালের কন্ঠ

 

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।