বিশেষ প্রতিবেদকঃ কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী নদীতে শখের বশে মাছ শিকার করতে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে পানিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে এক যুবক। সোমবার বেলা দেড়টার দিকে ভোমরিয়াঘোনা ফরেস্ট অফিস এলাকার গভীর জলে (স্থানীয় ভাষায় গভীর কুম) তিনি তলিয়ে যান।
তার নাম বেলাল উদ্দিন (২৫)। তিনি ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনার উত্তর শিয়াপাড়ার নুরুল আলমের ছেলে ও এক সন্তানের জনক।
ঈদগাঁও ইউপির ভোমরিয়াঘোনা এলাকার সদস্য আবদুল হাকিম ও পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা কামাল জানান, এলাকার ৫-৬ জন যুবক সোমবার দুপুরে ঈদগাঁও নদীর ভোমরিয়াঘোনা এলাকায় জাল নিয়ে মাছ ধরতে নামে। নাব্যতা হারানো নদীতে বিভিন্ন এলাকায় হাটু পরিমাণ পানি হলেও ফরেস্ট এলাকায় পূর্ব থেকে একটি কুম রেয়েছে (গভীর জল বা গর্ত)। সেই কুমের চারপাশে দাঁড়িয়ে মাছ ধরছিলেন তারা। এক বন্ধুর মাছের ঝুড়ি নিয়ে তার পাশে পানিতে দাঁড়ান বেলাল।
মাছ ধরতে যাওয়াদের বরাত দিয়ে তারা আরো জানায়, সবাই জাল ফেলা ও তোলাতে ব্যস্তছিল। এক সময় একজনের জাল কোথায় যেন আটকে যায়। আটকানো জালটি ছাড়াতে কুমে নামে বেলাল। এ সময় অকস্মাত বেলালকে কে যেন ধীরে ধীরে কুমের মাঝখানে টেন নিয়ে যাচ্ছিল। মাঝ বরাবর নিয়ে তাকে ডুবিয়ে ফেলছিল। এটি দেখে তারা ভয় পেলেও তাকে ধরে রাখার চেষ্টা চালায় তারা। কিন্তু মাঝ বরাবর গিয়ে বেলাল নিমিষেই ভেতরে ডুবে যায়। ওখানে অথৈ হওয়ায় নানা ভাবে চেষ্টা করেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খবর পেয়ে বেলালের পরিবার ও স্থানীয়রা কম এলাকার চারপাশে ভীর জমায় এবং অনেকে পানিতে নেমে রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় কক্সবাজার থেকে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে একটি টীম ঘটনাস্থলে এসে সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সন্ধান চালায়। না পেয়ে তারা মাগরিবের পূর্বে ফিরে যায়। সকাল থেকে চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম স্থানীয়দের সাথে কাজ করছে।
ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ভোমরিয়াঘোনার বাসিন্দা ফরিদুল আলম বলেন, এ কুমে কোন ভয়ানক কিছু আছে। প্রতি বছর কেউ না কেউ এখানে বলি (স্থানীয় ভাষায় ডালি) হয়। সোমবার বেলা দুটা থেকে সারারাত এলাকার মানুষ কুমের চারপাশে অবস্থান করে থাকে। বৈদ্য-ওঝা ও মৌলভীদের দেয়া পানিপড়া ছিটানোসহ যে যেভাবে পারছে বেলালকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত কোন কুল কিনারা করতে না পেরে সকালে ডুবুরী দলকে খবর দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে ডুবুরি দল ঈদগাঁওর পথে রয়েছে।
কক্সবাজার দমকল বাহিনীর উপ-সহকারি পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, আমরা খবর পেয়ে একটা টীম এলাকায় গিয়ে তাকে উদ্ধারে অনেক চেষ্টা চালায় কিন্ত সন্ধ্যা পর্যন্ত না পেয়ে চলে আসে। এখন চট্টগ্রাম থেকে ডুবুরী দল আসছে। তারা আসলে বাকিটা জানা যাবে। ঘটনাস্থলে চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমও সকাল থেকে কাজ করছে।
খালে নেমে উদ্ধার অভিযান চালোনো স্থানীয়দের একজন জিয়াউর রহমান বলেন, কুম এলাকায় পানির ভেতর কয়েকস্থর পাথর রয়েছে। পানির গভীরতাও বেশি।
ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. খায়রুজ্জামান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এমন ঘটনা অলৌকিক। ঘটনাটি শুনার পর ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে রয়েছি। শত শত লোক উদ্বিগ্নতা নিয়ে তীরে অপেক্ষা করছে। উদ্ধারকারিদের সহযোগিতা করছে আমাদের কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার এএসআই মহিউদ্দীনসহ অন্যরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।