কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁর উপকূলে লবণ উৎপাদন এবার লক্ষ মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন চাষীরা। স্থানীয় চাষী আবদুল গফুর, মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন লবণ মৌসুমের আর মাত্র দুই মাস বাকী। কিন্তু লবণের ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মন লবণের দর উঠেছিল ১৬০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু তা হঠাৎ করেই নেমে ১২৫ টাকায় এসে ঠেকেছে। এর উপর আবার শুনা যাচ্ছে সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পরিকল্পনা করছে। লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হলে এতদ্াঞ্চলের প্রায় হাজার হাজার লবণ চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তার মতো একাধিক চাষীরা এ প্রতিবেদককে জানান গত ২ মাসে প্রচুর লবণ উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে এখন দাম কম থাকায় চরম উৎকন্ঠায় রয়েছি।
সদর উপজেলার চৌফলদন্ডীর লবণ চাষী কলিম উল্লাহ জানান প্রতি মৌসুমে লবণের ভাল উৎপাদন হয়। চাহিদার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদিত হলেও সরকারি কতিপয় আমলা ও ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের স্বার্থে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে। যার কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। যখনই লবণ আমদানির কথা শুনা যায় তখনই লবণের দাম কমে যায়, যার কারণে লোকসানের ভয়ে লবণ চাষীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
সরেজমিন গতকাল সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী, পোকখালী ও ইসলামপুরের লবণ মাঠ পরিদর্শণ ও চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব এলাকার প্রায় ১ হাজার লবণ চাষী লবণ আমদানির খবরে উদ্বিগ্ন। তারা চলতি মৌসুমে লবণের ন্যায্য মূল্য পাবে কিনা তা নিয়ে আশংকা করছেন। তারা লবণ আমদানি বন্ধ করে চাষীদের ন্যায্য মূল্য পেতে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ইসলামপুরের কার্যালয় সূত্র জানায় বিগত ২০১৪ সালে এ ৩ ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় গেলবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে এবার মওসুম শেষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ অফিসের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ চৌধুরী জানান জেলার উপকূলীয় এলাকার প্রায় অর্ধ লক্ষ চাষি সরকারের চাহিদার বিপরীতে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন করে আসছে প্রতি বছর। কিন্তু একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভুল তথ্য দিয়ে প্রতি বছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানি অব্যাহত রাখায় আর্থিকভাবে মার খাচ্ছেন চাষীরা।
বাংলাদেশ লবণ চাষি সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন একশ্রেনীর মিল ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে হাজার হাজার মেট্রিক টন লবণ বিদেশ থেকে আমদানি করে নিয়ে আসে। আর তার মাসুল দিতে হচ্ছে এখন প্রান্তিক চাষিদের।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।