উখিয়ার উপকূলীয় এলাকার সবুজবেষ্টনীখ্যাত ঝাউ বাগান প্রতিনিয়ত নিধন করা হচ্ছে। সাগরের করাল গ্রাস ও সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারী চক্রের নগ্ন থাবায় উজাড় হওয়ার পথে ঝাউ বাগান প্রকল্প। সেই সাথে শংকিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় জনপদে বসবাসরত জেলে পরিবারসহ আশপাশের লোকজন। সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারনে বিলীন হবার পথে রয়েছে নয়নাভিরাম ঝাউবিথী।
সরেজমিনে জানা যায়, উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা সোনারপাড়া, ইনানী, মাদারবনিয়া, চোয়াংখালী, চেপটখালী ও মনখালী এলাকায় ঝাউগাছ কেটে উজাড় করছে সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারী চক্র। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজে এসব ঝাউ গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, নয়নাভিরাম ঝাউবিথী কেটে পাচার করায় উপকূল হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে । জ্বালানী কাঠ সহ বিভিন্ন কাজে এইসব ঝাউ গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের ফলে ব্যাপক প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে উপকূলীয় জনপদে বসবাসরত অধিকাংশ পরিবার সহায় সম্পত্তি হারিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে। এ সময় সরকার উপকূলীয় এলাকার জেলে পরিবার গুলোর পুর্নবাসনসহ উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সাগর উপকূলীয় এলাকায় ঝাউ গাছ ও নারিকেল গাছ সৃজন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্বাবধানে জেলার দীপাঞ্চল উপজেলাসহ উখিয়া-টেকনাফ উপকূলে প্রায় আড়াই লাখেরও অধিক ঝাউ গাছ ও নারিকেল গাছ সৃজন করা হয়।
স্থানীয় মনখালী বন রক্ষা কমিটির সভাপতি নুরুল আবছার জানান, স্থানীয় কতিপয় চিহ্নিত কাঠ পাচারকারী চক্র ঝাউ গাছ কর্তন করে তাদের বসত বাড়ীতে মজুদ করে। পরবর্তীতে সড়ক পথে ঝাউ গাছ পাচার করে দেয়। তিনি আরো বলেন, মাঝেমধ্যে বন বিভাগের লোকজন অভিযান চালালেও পাচার প্রক্রিয়া থেমে নেই।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নূরুল আমিন চৌধুরী জানান, মনখালী খালের ভাঙ্গনে প্রতি বর্ষা মৌসুমে শত শত ঝাউ গাছ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন বিশ্রামাগার, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, মনখালী বাজার ভাঙ্গনের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থায় মনখালী খালের গতিপথ পরিবর্তন করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বিস্তৃর্ণ উপকূলীয় এলাকার ঝাউ বাগানসহ ফসলী জমি নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাসেম বলেন, উপকুল রক্ষায় ঝাউগাছ সংরক্ষণ একান্ত জরুরী । বনবিভাগ এবং প্রশাসনের ঝাউ গাছ রক্ষায় কঠোর হতে হবে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: আলী কবির বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ঝাউ গাছ রক্ষনা-বেক্ষনের দায়-দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যাস্ত করা হয়। লোকবল সমস্যার কারনে কাঠ চোরদের হাত থেকে ঝাউ গাছ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। চেষ্টা চলছে কিভাবে নিধন বন্ধ করা হয়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।