পানচাষের প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি হলেও উখিয়ার হাটবাজারে চড়া দামে পান বিক্রি হওয়ার সুবাদে চলতি মৌসুমে পান উৎপাদন ও বাজারজাত করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। বিগত সময়ে আশাতীত ভাবে দরপতনের ফলে পান চাষ করে যারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পান চাষে নিরুৎসাহ হয়ে উঠেছিল, তারাও আবার পূর্ণ উদ্যমে পান চাষে ঝুঁকে পড়তে দেখা গেছে। একাধিক পানচাষী জানালেন, পানের বাজার চড়া হওয়ার কারণে এবার অনেকেই পানচাষ করে লাভবান হয়েছে।
পান ব্যবসার সাথে জড়িত ক্ষুদ্র ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার উৎপাদিত পান আকারে বড় ও গুনগতমান সম্পন্ন হওয়ার সুবাদে প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকার পান দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে। আর এসমস্ত পানের সিংহ ভাগ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, পানের চাহিদা অনুপাতে দাম চড়া হওয়ার কারণে কৃষকেরাও লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি পান চাষে উৎসাহিত হয়ে পানচাষ উত্তরোত্তর সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিদানিয়া গ্রামের শামশুল আলম(৩৫) জানান, সে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ২০ শতক জমিতে পান চাষ করেছে। এ পর্যন্ত সে দেড় লক্ষাধিক টাকার পান বিক্রি করেছে। একই ভাবে রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া গ্রামের রুস্তম আলী জানান, সে ১০ শতক পানের বরজ করে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা পান বিক্রির পরেও বরজে অবিক্রিত আরো ১৫/২০ হাজার টাকার পান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে একাধিক পানচাষী পান বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে কিছু কিছু পানের বরজে রোগবালাই দেখা দিলেও তা সেরে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
শনিবার ও মঙ্গলবার উখিয়া, সোমবার ও বৃহস্পতিবার সোনারপাড়া, রবিবার ও বুধবার কোটবাজার এলাকায় জমে উঠা পান বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকার পান হাত বদল হচ্ছে। এসমস্ত পান চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট, হাটহাজারী, রাজশাহী, সিলেট, ঢাকা, নোয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন আড়তে যাচ্ছে। আড়তদার ব্যবসায়ীরা এসব পান প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিদেশে রপ্তানী করছে। ডিগলিয়াপালং গ্রামের পাইকারী পান ব্যবসায়ী জাকের হোসেন জানান, বর্তমানে ভালমানের এক বিরা পান বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ২শ’ টাকা। মাঝারী সাইজের পানের বিরা ১শ’ টাকা ও ছোট সাইজের পানের বিরা ৭০/৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একেক জন পানচাষী বাজারে ১০/১২ হাজার টাকার পান বিক্রি করছে। এভাবে শত শত কৃষক পান বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শংকর কুমার মজুমদার জানান, এ উপজেলায় মৌসুমে সাড়ে ৪শ’ একর জমিতে পান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হলেও তার চাইতে দ্বিগুন জমিতে পানচাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা খরায় আক্রান্ত না হওয়ার কারণে পানের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। হাটবাজারে পানের দাম আশাতীত ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষকেরা আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।