কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় ব্যাপক আপত্তির মধ্যেদিয়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাচাই বাছাই কালে যেকোন নাগরিকের প্রশ্ন করার সুযোগ থাকলেও উখিয়ায় তা করা হয়েছে বাইরে লালবাতি জ্বালিয়ে ক্লোজড ডোরে একান্ত গোপনে। একজন ইউপি চেয়ারম্যান যাচাই বাছাই করতে প্রবেশ করে সরকারের উদ্দেশ্য, লক্ষ্যকে ভুলুণ্ঠিত করে প্রহসনের কথিত যাচাই বাছাই কাজ বন্ধ করার দাবী জানান। উখিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, নাগরিকদের অভিযোগ করতে দেখা গেছে। যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম রাজ্জাক, সদস্য সচিব মোঃ মাঈন উদ্দিন, সদস্য জয় সেন বড়–য়া, সুনিল বড়–য়া, পরিমল বড়–য়া, ক্যাপ্টেন আব্দু ছুবাহান, আলী আকবর বাঙ্গালী।
শনিবার উখিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কালে স্থানীয় অনেক সচেতন নাগরিক মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য, আপত্তি ও অভিযোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ নিয়ে গেলেও সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ অধিকার না থাকায় তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। যাচাই বাছাই কালে উপস্থিত থাকা উখিয়ার মুক্তিযোদ্ধার সংগঠক, ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া চৌধুরী, ভারতীয় তালিকা ভুক্ত বিডিআরের (অবঃ) ল্যান্স নায়েক আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা জানান, যারা সরকারী সুবিধা ভোগ করছে অথচ কোন গেজেটে অর্ন্তভূক্ত হয়নি এবং কোথাও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অনেক অভিযোগ ও আপত্তি রয়েছে। কিন্তু যাচাই বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটির অনেক সদস্য ওইসব মুক্তিযোদ্ধাদের দলভূক্ত হওয়ায় এসব অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি ও কোন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে না। তারা জানান, উখিয়ায় অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সরকারী সুবিধা ভোগী থাকলেও তাদের মধ্যে থেকে যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য অর্ন্তভূক্ত হওয়ায় অপরাপর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বৈধ করার মিশন কাজ করছে।
যেসব মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের মুখোমুখি হয়েছে তাদের ১৯টি প্রশ্নসম্বলিত নির্ধারিত ফরম পূরন করে জমা দিতে হয়েছে। এসব ফরমের প্রশ্ন গুলো একই নিয়মে উখিয়ায় সুবিধা ভোগী ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা জমা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য ছাড়াও যাচাই বাছাইয়ের মুখো মুখি হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে আপত্তি কিংবা মতামত দিয়ে যে কোন নাগরিকদেরও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকলেও উখিয়ায় কোন প্রচার প্রচারণা ছাড়া গোপনে উখিয়া নির্বাহী অফিসারের অফিস কক্ষে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে লালবাতি জ্বালিয়ে একান্ত গোপনে যাচাই বাছাই কমিটি কাজ করায় এটির স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যাচাই বাছাই কালে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে হলদিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম বাচাই কক্ষে প্রবেশ করে বাচাই প্রক্রিয়া অনুধাবন করে তিনি যাচাই বাছাই কমিটির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের যে স্বচ্ছতার উদ্দেশ্য লক্ষ তা এখানে ভুলন্ঠিত করা হচ্ছে বলে দাবী করলে ওইসময় সেখানে ব্যাপক হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
শনিবার উখিয়াসহ সারা দেশের ৯৪ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, উখিয়ায় বর্তমানে ভাতা ও সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগকারী ৪০জন ছাড়াও আরো ৭৬জন মুক্তিযোদ্ধা হতে আবেদন করেছেন। এসব ভাতা ভোগী অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন ভাবে আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধা আগ্রহীদের যাচাই বাছাই কার্যক্রম চলছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৪ সালের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অর্ন্তভূক্তির জন্য যারা আবেদন করেছেন এবং যারা ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তার তালিকা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সনদ পাননি কিন্তু গেজেট ভূক্ত কিংবা মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাময়িক সনদপত্র পেয়েছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ভাতা পাচ্ছেন তাদের এ যাচাই বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়া লাল মুক্তিবার্তায় তালিকা ভূক্ত ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকলে সে অভিযোগও আমলে নেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এখানে তা অনুসরন করা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক এম রাজ্জাক বলেন, অনাকাঙ্খিত অহেতুক লোকজনের চাপ ও ঝামেলা এড়াতে ক্লোজড ডোরে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। তিনি অধিকতর স্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অর্ন্তভূক্ত করার জন্য সরকার ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর যে আন্তরিকতা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নির্দেশিকা অনুসরন করে উখিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।