উখিয়ায় ১৩টি হাট বাজারে শীতকালিন শাক সবজির ভরা মৌসুমেও ক্রয় ক্ষমতা জনসাধারনের নাগালের বাইরে রয়েছে। ফলে জনসাধারণ বেশি দামে সবজি ক্রয় করে চাহিদা মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতি নিয়ত। একশ্রেণীর প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কারসাজির আশ্রয় নিয়ে এসব বাজার গুলোতে নিয়মিত নৈরাজ্য ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। এদিকে সিন্ডিকেটের মারপ্যাচে পড়ে ভোক্তা ও ক্রেতা সাধারণ ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে নিত্য নৈমত্তিক। বলতে গেলে সাধারণ ও মধ্যবৃত্ত পরিবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রীতিমত।
সরজমিনে উখিয়ার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উখিয়া সদরের দারগা বাজার নিয়ন্ত্রন করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। সরকারের নিকট থেকে বাজার ইজারা নিয়ে তা আবার দ্বিগুণ টাকায় উপ ইজারা দিয়ে মরার উপর খঁড়ার ঘাঁ’র মত অবস্থার সৃষ্টি করছে কথিত সিন্ডিকেট। তারা ইচ্ছা মত বাজারে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের ঠকিয়ে রীতিমত পকেট কাটছে সাধারণ জনগণের। তাছাড়াও উপ ইজারাদারদের টোল আদায়ের জন্য নিয়োগকৃত দালালেরা ছোট বড় ব্যবসায়ী বা সড়কের উভয় পাশে বসা ভ্রাম্যমান হকারদের কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে জোর পূর্বক অর্থ আদায়ের নামে সুকৌশলে চাঁদা আদায় করে চলছে। যা ভোক্তা ও ক্রেতা সাধারণের জন্য বিষপোঁড়ায় পরিনত হয়েছে বলে একাধিক ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে।
উখিয়া দারগা বাজারের মত অন্যান্য বাজারগুলোতেও চলছে একই অবস্থা। তৎমধ্যে বাণিজ্যিক স্টেশন কোটবাজারে সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য ও বিশৃংখলা হয়। এখানে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহল বাজার ইজারা নিয়ে ছোট বড় শাক সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ উঠছে। সোনারপাড়া বাজার, মরিচ্যা বাজার, পাতাবাড়ি বাজার, কুতুপালং বাজার, পালংখালী বাজার, থাইংখালী বাজার, বালুখালীসহ অন্তত ১৩ টি ছোট বড় হাট বাজারে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট শাক সবজি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাহিরে নিয়ে গেছে। তৎ মধ্যে দেশি আলুর মূল্য এখনো ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, ফুলকপি, টমেটো, বাধাকপি, সীম, শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউসহ বিভিন্ন প্রকার শীতকালিন সবজি দাম এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানায়, বাজার নিয়ন্ত্রনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি প্রশাসন রয়েছে এবং সরকারি বিধি নিষেধসহ কিছু নীতিমালা রয়েছে ক্রেতা সাধারণের সুবিধার্থে। কিন্তু এখানকার প্রশাসনের চরম উদাসীনতা, কর্তব্য অবহেলা, অনিয়ম দুর্নীতি, বাজার সিন্ডিকেটদের সাথে যোগসাজস করে আইন অমান্য করে চলছেন। ক্রেতাদের জন্য নিদিষ্ট মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির অনুসরণ করার জন্য সাইন বোর্ড টাঙানোর নিয়ম থাকলেও কার্যত কোন দোকানে মূল্য তালিকা চোখে পড়েনি। কিন্তু উখিয়ার বাজার গুলোতে এসব সরকারি নিয়ম নীতির কোন বালাই নেই।
স্থানীয়রা জানান, সোনারপাড়া বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে ইজারাদার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে সাম্প্রতিক সময় বাজার ইজারাদারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিনের নিকট একটি অভিযোগ দিয়েছেন রতœাপালং গ্রামের বিশিষ্ট ঠিকাদার ছাবের আহমদ।
তেলীপাড়া গ্রামের সোনা মিয়া জানান, সোনারপাড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও ইজারাদার আতাঁত করে মোটা অংকের টাকার টোল আদায় করার নিমিত্তে গত ১ জানুয়ারী থেকে একটি নতুন নিয়ম চালু করেছে। তাদের এই নিয়ম মানতে ব্যবসায়ীরা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। ফলে ছোট খাট অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলছে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে কোটবাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি কবি ও সাহিত্যিক আদিল চৌধুরীর নিকট জানতে চাইলে সরকারি ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রন আইন ভঙ্গ না করলে বাজার উন্নয়নের পাশাপাশি শৃংখলা ফিরে আসতো বলে তিনি জানান।
উখিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ একরাম বলেন, বিশেষ করে দারগা বাজারে টোল আদায়ের নামে একপ্রকার টাউট, বাটপার ও চাঁদাবাজাদের দৌরাতœ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে বাজারে প্রতি নিয়ত বিশৃংখলা লেগে থাকে। উক্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাজার সিন্ডিকেটের হর্তাকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা এড়াতে উপজেলা প্রশাসন সরকারিভাবে মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়। তাছাড়া ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের নিয়ে বাজারে শৃংখলা ফেরাতে একটি বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদকে জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।