২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক

অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে কক্সবাজারের দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সমুদ্র সৈকত বেষ্টিত এই মেরিন ড্রাইভকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন এক পর্যটন সম্ভাবনা। কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ১৪ বছর। শনিবার (৬ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সড়ক উদ্বোধনের মাধ্যমে উন্মুক্ত হবে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। আর এ সড়কের মাধ্যমে খুলে যাবে অপার সম্ভাবনার পর্যটনের অবারিত দুয়ার।

একপাশে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের সমারোহ নিয়ে উঁচু পাহাড়। অপর পাশে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালিয়াড়ির বুকে। এই দু’য়ের বুক চিরে চলে গেছে সু-প্রশস্ত পিচঢালা পথ। কল্পনার এই চিত্র বাস্তবে দেখা মিলবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কোলঘেঁষে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই সড়কটির নির্মাণ সম্পন্ন করতে পেরেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ১৬ ইসিবি। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪০ কোটি টাকা।

মেরিন ড্রাইভ নির্মাণাকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর ইসিএ-১৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম মেহেদী হাসান জানান, বিশ্ব পর্যটনের দুয়ার খুলতে চলেছে সড়কটি। সড়কের ধারে নারিকেল, সুপারি গাছসহ নানা প্রজাতির ১১ লাখ গাছ লাগোনো হয়েছে।

সেনা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শুরুতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী পয়েন্টে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ঠিকাদারের নির্মিত দুই কিলোমিটার সড়ক সাগরেই বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালে এই সড়কের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসিএকে। এরপর সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৮ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৮০ কিলোমিটার করা হয়।

মেহেদী হাসান জানান, তিন ধাপে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হয় মেরিন ড্রাইভের। প্রথম ধাপে ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে ২৪ কিলোমিটার ও তৃতীয় ধাপে ৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়কের কারণে বিশ্ব দরবারে কক্সবাজার একটি সমৃদ্ধশালী পর্যটন শিল্প হিসেবে প্রকাশ পাবে বলে মনে করেন কর্নেল মেহেদী হাসান।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক

মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় উল্লেখ করে ইসিএর অধিনায়ক বলেন, প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতায় সড়কের মাটি সাগরের উত্থাল ঢেউয়ে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। লোনা হাওয়ায় ব্যবহৃত রডে ধরে মরিচা। তদুপরি পাহাড়ের পাদদেশ এবং সাগরের তীর দিয়ে এ রকম দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের সময় ২০১০ সালের ১৫ জুন হিমছড়ি ইসিএ ব্যারাকে টানা ভারি বর্ষণে আকস্মিক পাহাড়ধসে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান ৬ সেনা সদস্য।

কক্সবাজার সদর রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, মেরিন ড্রাইভটি একদিকে সাগরের তীরে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে বিস্তৃীর্ণ জায়গা-জমি ও ফসল রক্ষা পাবে সাগরের ভাঙন থেকে। একই সঙ্গে পর্যটনশিল্পেও যোগ হবে নতুন মাত্রা। এর ফলে বিদেশি পর্যটকের আগমন আরও বেড়ে যাবে।

স্থানীয়রা বলছেন, বিশ্ব পর্যটনের দুয়ার খুলতে চলছে সড়কটি। একই সঙ্গে সড়কের কারণে বদলে যাবে এখনার মানুষের জীবনের মানও। কক্সবাজারের ব্যবসায়ী নেতা রইছ উদ্দিন জানান, এ সড়কের মাধ্যমে বিদেশিরা বেশি আকৃষ্ট হবে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল ওর্নাস অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এক দিকে পাহাড় আর অন্য দিকে সাগর, আর মধ্য ভাগে এ সড়ক। এটি বিদেশিদের জানানো গেলে পর্যটনের জন্য অনেক বড় কিছু হবে।

সাগরতীর আর পাহাড়ের পাদদেশে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভ্রমণই হবে পর্যটকদের কাছে বড় পাওয়া বলে জানান কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিঃ রানাপ্রিয় বড়ুয়া। তিনি জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ শুরুর দিকে অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই দৃষ্টিনন্দন সড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবে।

সড়কটিতে ১৭টি ব্রিজ, ১০৮টি কালভার্ট রয়েছে। যেখানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এ সড়কের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের পর্যটন আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।