বাংলা সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ও পোষাক-পরিচ্ছদের সারা বছর ধার না ধারলেও পহেলা বৈশাখে নববর্ষ বরণের দিন আমরা হঠাৎ করেই যেন সবাই এক দিনের জন্য বাঙালী হয়ে যাই। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দেশাত্ববোধক গান গেয়ে ফতুয়া-পাঞ্জাবী পরে ১লা বৈশাখে একদিন পান্তা-ইলিশ খেয়ে বাঙালী সাঁজার চেষ্টা করলেও এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা বিরাট প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার বটে। কারণ আবহমান বাংলার হাজারো বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ লোকজ ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি বাদ দিয়ে সারা বছর আমরা আমদানী করা বিজাতীয় সংস্কৃতি নিয়েই পড়ে থাকি। তাই দেখা যায়, কাপড় কিনতে গেলে ভিন্নদেশী জিন্স, ইতালিয়ান সু, কোরিয়ান শার্ট ও ফ্রান্সের পারফিউম-কসমেটিক্স সহ বিদেশী জিনিস চড়া দামে কিনে বড়াই করি। অথচ বাংলাদেশে প্রস্তুত কাপড় ও গার্মেন্টস সামগ্রী সারাবিশ্বে পরম সমাদৃত। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেশীয় পণ্যের ধারও ধারিনা। ফাস্টফুড সপ এ খেতে গেলে দেশী খাবার বাদ দিয়ে অন্তন, নুডুলস, পিজা, বার্গার ও হটডগ সহ বিদঘুটে নাম এবং স্বাদের বিদেশী খাবার অর্ডার করি আমরা। আব্বা-আম্মা-চাচা-চাচীর বদলে ডেডি-মাম্মি-আংকেল-আন্টি স্থান দখল করে নিয়েছে এখন। টিভি দেখার সময় ভারতীয় চ্যানেল দেখা নিয়ে টিপতে টিপতে রিমোটের বারটা বাজাই। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়াল দেখার জন্য দাম্পত্য কলহের জের ধরে অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে। হাল আমলের ছেলে মেয়েদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখলে রুচির দৈন্যতা প্রকট হয়ে ধরা পড়ে। যে কাপড়ে যত বেশি তালি-জোড়া দেয়া থাকে তা ততই চড়া দামে বিক্রি হয়। চুল কাটার সময় ভিনদেশী বিভিন্ন নায়ক-নায়িকাকে অনুসরণ করে ঐ সব স্টাইলে চুল কাটার ফলে অনেককে বানর, হনুমান, ভল্লুক ও কাঠবিড়ালীর মনুষ্য সংস্করণ মনে হয়। বিয়ের আনন্দ অনুষ্ঠানের সময় বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান-হঁলার পরিবর্তে আলমিরা সাইজের সাউন্ড বক্সে ইংরেজী ও হিন্দিগান বাজাই আমরা। এভাবেই চলছে আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা, যেখানে প্রতিক্ষনেই ভিনদেশী (অপ)সংস্কৃতির নগ্ন আগ্রাসন। এমতাবস্থায় পহেলা বৈশাখে ডাক-ঢোল, সানাই বাজিয়ে একদিনের জন্য বাঙ্গালী সেঁজে পান্তা ইলিশ খাওয়ার পর ডায়েরীয়া বাধানোর পরদিন থেকেই আবারো ভিনদেশী স্টাইল-সংস্কৃতি অনুসরণ করা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? এখন তাই দেখার সময় এসেছে।
আতিকুর রহমান মানিক
ফিশারীজ কনসালটেন্ট,
সংবাদকর্মী ও সংগঠক।
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক,
আনলাইন রিপোর্টাস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার।
প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ নদী বাচাঁও আন্দোলন,
কক্সবাজার জেলা শাখা।
সাংগঠনিক সম্পাদক, ঈদগাহ প্রেসক্লাব, সদর, কক্সবাজার।
০১৮১৮-০০০২২০
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।