২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি

এটিএসআই ইউসুফের কান্ড, ট্রাফিক জ্যামের ছবি তোলায় মারধর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বুধবার (১৮ অক্টোবর) বেলা প্রায় সাড়ে ১১ টা। শহরজুড়ে ট্রাফিক জ্যাম। গাড়ী চালানো তো দূরের কথা-খালি পায়ে হাঁটা যাচ্ছেনা। এক ঘন্টার কাছাকাছি সময় জ্যামের কবলে পড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ওই সময় বার্মিজ মার্কেট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের সহকারী ইন্সপেক্টর (এটিএসআই) ইউসুফ। ট্রাফিক জ্যামের এমন করুণ দশার ছবি তুলছিলেন দৈনিক হিমছড়ির চীফ রিপোর্টার ছৈয়দ আলম ও ক্যামরাম্যান কেফায়েত উল্লাহ।
ক্যামরা দেখে দায়িত্বরত ইউসুফ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, ‘এখানে আমি সকাল থেকে ডিউটি করতেছি। কোন জ্যাম নাই। আপনারা জ্যাম কোথায় পাইলেন?’ একথা বলা শেষ না করতেই ক্যামরাপার্সন কেফায়েতকে মারধর শুরু করে ইউসুফ। পরে প্রতিবেদক দ্রুত তার কাছে গেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে অন্যান্য সাংবাদিকরা শহরের ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় দেখতে পেয়ে ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে পুরো ঘটনাই অস্বীকার করেন। পরক্ষণেই ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘মেরেছি কি হয়েছে? এখন আপনারা কি বলতে চান। আমি অনেকদিন কক্সবাজারে চাকরী করতেছি আর করতে ইচ্ছে করছেনা। কি করবেন করেন?’ এভাবে বলেই জনসম্মুখে নাজেহাল করেন। সাংবাদিক ছৈয়দ আলম জানান, অভিযুক্ত ইউসুফ কক্সবাজার শহরে অনেকদিন ধরে চাকরী করে আসছে। আগে ছিলেন হাবিলদার। এখন হলেন পুলিশের সহকারী ইন্সপেক্টর (এটিএসআই)। পদোন্নতি পাওয়ায় কাউকে পরোয়া করেনা। চাঁদাবাজি করা তার একমাত্র লক্ষ্য। দীর্ঘদিন দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে কক্সবাজারের আনাচে-কানাচে সবকিছু জানে কোথায় টাকার খনি। সেই খনি থেকে মাসিক মাসোয়ারা আর প্রতিদিন লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ গাড়ী থেকে টাকা আদায় করে। এমনকি শহরের সড়কের ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি জানান, সময়-অসময়ে ঘুষ আদায়, ধমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, আটক বাণিজ্য, হামলা ও গাড়ি ভাংচুরে কক্সবাজার পরিবহন সেক্টরে মুর্তিমান আতংক হয়ে উঠেছে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী ইন্সপেক্টর ইউসুফ। দীর্ঘদিন ধরে তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকির রোষানালয়ে পড়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে পরিবহন মালিকরা। শহরে মাসিক চাঁদা ও ভ্রাম্যমান চাঁদা আদায়ের অভিজ্ঞতার থলি বেশি হওয়ায় ট্রাফিকের ওই সহকারী ইন্সপেক্টর মুর্তিমান আতংক বলেও মন্তব্য করেন অতিষ্ট হওয়া পরিবহন চালকরা। দীর্ঘদিন ধরে তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও হুমকি-ধমকির রোষানলে পড়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। শহরের বিভিন্ন স্থানে সকাল-সন্ধ্যা নানা অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন জাতের গাড়ী আটক করে পরে সুযোগ বুঝে টাকার বিনিময়ে কিছু গাড়ী স্পটে ছেড়ে দিলেও অবশিষ্ট আটককৃত গাড়ী গোপন জায়গায় নিয়ে শুরু করে বাণিজ্যের মহোৎসব। এই ইউসূফ এর বিরুদ্ধে গাড়ি আটক করে ব্যবসা করার অভিযোগ নতুন নয়, রয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্ট মানুষদের সাথে দূর্ব্যবহারের অভিযোগ। আর এবার আরো একটা খেতাব বসালেন দুর্নীতির খাতায় সাংবাদিককে নাজেহাল করে। এভাবে নায়কের মত চলাফেরা আর হুমকিতে পর্যটন শহর কক্সবাজারে অতিষ্ট করে তুলেছে হাবিলদার থেকে পদোন্নতি পাওয়া এ দুর্নীতিবাজ ইউসুফ।
সুত্র জানায়, কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের এই ইউসুফের আতংকে পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা যেমনি রীতিমতো হয়ে পড়েছে তেমনি পরিবহণ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার উপক্রম দেখা দিয়েছে। সচেতন মহলের ভাষ্য মতে, ছোট একটি শহরে ইউসুফের মত আরো কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট কর্মরত থাকলেও গত কিছুদিন পূর্বে একজন অন্যত্র বদলী হয়ে যান। কক্সবাজার শহরে দীর্ঘদিন ধরে টিআই/এটিএসআই এর কর্মস্থল কম হওয়ায় তারা আটক বাণিজ্যে দাঁপিয়ে বেড়চ্ছেন। কক্সবাজার ট্রাাফিক বিভাগে ধারবাহিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের আটক ও পরে ছাড়ার নামে বাণিজ্যে থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামণা করেছে এলাকার পরিবহণ সংশ্লিষ্ট ও প্রাইভেট মটরসাইকেল মালিকরা। নাম প্রকাশে এক টমটম মালিক জানান, প্রতিদিন এই ইউসুফ দিনের বেলায় ডিউটি শেষ করে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত সিভিল পোশাকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান করেন। এসময় রিক্সা, টমটম ও সিএনজি থেকে নানা অজুহাত দিয়ে টাকা আদায় করেন। তার কথা মত কোন চালক টাকা দিতে স্বীকৃতি জানালে তার গাড়িটি আটক করে ট্রাফিক অফিসে নিয়ে যায়। এর পর অনেক দেন-দরবার করে অবশেষে টাকার বিনিময়ে গভীর রাতে ছেড়ে দেয়া হয় ওইসব গাড়ী। ঘটনাস্থলে আরো কয়েকজন গাড়ী চালক অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন পরিবহণের গাড়ি সপ্তাহে কয়েকবার করে আটক করেন ট্রাফিক পুলিশ। পরে গাাড়ি আটক করে নিয়ে গেলেও গভীর রাতে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। একটি গাড়ি বার বার আটক করে বার বার টাকা আদায় করার কারনে অতিষ্ট হড়ে পড়েছে চালক ও মালিকরা। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা থেকে কোন গাড়ীর লাইসেন্স নিলে ট্রাফিক পুলিশ থেকে নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে ১৫২ ধারায় মামলা দিয়ে থাকে। শহরের কয়েকটি পরিবহণের দায়িত্বরত কয়েকজন ইনচার্জ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুরপাল্লার গণপরিবহণ থেকে সময়ে অসময়ে ঘুষ আদায়, পরিবহণের বিভিন্ন কাউন্টার হতে মাসোহারা আদায়, ড্রাইভারদের ধমক দিয়ে চাঁদাবাজি, গাড়ী আটক বাণিজ্য, সাদা পোষাকে টোকেন বাণিজ্য, কেইচ রসিদ বাণিজ্যসহ সব অপকর্মের নেপথ্যে নায়ক ইউসুফ। আর দূরপাল্লার বাসগুলো হতে মাসিক টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই সাবেক কনষ্টেবল ইউসুফকে। অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, শহরে মাসিক চাঁদা ও ভ্রাম্যমান চাঁদা আদায়ের অভিজ্ঞতার থলি বেশি হওয়ায় ট্রাফিকের ওই কর্মকর্তারা মুর্তিমান আতংক বলেও মন্তব্য করেন অতিষ্ট পরিবহন চালকরা। কক্সবাজার শহরে কোন ভিআইপি গাড়ি প্রবেশ করলেও তাদের চাঁদাবাজির ভোগান্তির শিকার হয়। কক্সবাজারের বিতর্কিত ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাড়ী আটকের নামে গাড়ীর মালিকদের নানাভাবে হয়রাণির অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি পরিবহণ সেক্টর থেকে প্রতিমাসে এটিএসআই ইউসুফসহ কয়েকজন টাকা নেয়। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দালালদের টাকা সংগ্রহ করেন। চাউল বাজারে যেসব ট্রাকে করে চাল আনা হয় ওই সব ট্রাক থেকেও চাঁদা আদায় করে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগ কক্সবাজারের এএসপি বাবুল চন্দ্র বণিক জানান, তিনি একজন সাধারণ এসআই। কাউকে মারধর করার অধিকার কারো নাই। এরকম ঘটনা অত্যান্ত নিন্দনীয়। ঘটনার খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।