উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে কর্মরত এনজিও সংস্থা কোডেক ও রোহিঙ্গাদের মাঝে মত বিরোধের কারনে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে ওইসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ৫২জন রোহিঙ্গা শিক্ষক চাকুরী অব্যাহতি দিয়েছে। তাদের দাবী পুরণ না হলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েদের বিদ্যালয়ে না যেতে নিষেধ করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছে।
জানা গেছে, পাশ^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ১৯৯১ সালে সীমান্তের পাহাড়ী জনপদ ও নাফ নদী অতিক্রম করে প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। এ সময় আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপের মুখে, দুদেশের কুটনীতিক পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠকের ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজী হলে শুরু হয় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। ২০০৫ সালে হঠাৎ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাওয়ায় উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে প্রায় ১১ হাজার ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে ২১ হাজার সহ প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা দুইটি শরণার্থী শিবিরে আটকা পড়ে যায়। যদিও বা এর থেকে অদ্যবধি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি আরো ৯০হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে বিভিন্ন সংস্থার জরিপ সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, কুতুপালংয়ে অবস্থানকারী রেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা পরিবারের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা সহ মৌলিক চাহিদার উপর কাজ করে যাচ্ছেন ইউএনএইচসিআর, আইওএম,এসিএফ সহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক এনজিও সংস্থা। এসব এনজিও গুলো স্থানীয় এনজিও’র মাধ্যমে মাঠে-ময়দানে কাজ গুলো বাস্তবায়ন করে থাকে। তখন শিক্ষা ব্যবস্থার কোন সুযোগ ছিল না। ১৯৯৬সালে রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েদের স্বদেশীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য রোহিঙ্গারা নিজস্ব উদ্যোগে কয়েকটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে। বিষয়টি শরনার্থী কাজে নিয়োজিত এনজিও সংস্থার নজরে আসলে ১৯৯৯সালে উক্ত বিদ্যালয় গুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং কর্মরত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া শুরু করে। তখন বার্মিজ ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হতো ছাত্র/ছাত্রীদের। ২০০৪ সালে প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলেও ২০০৮সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষার পাশাপাশি বার্মিজ ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয় রোহিঙ্গা শিশুদের। কুতুপালং জি-ব্লকের নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রোহিঙ্গা শিক্ষক মোঃ ফারুক (২৮) জানান,২০০৮সালের পর থেকে বাংলা শিক্ষিত রোহিঙ্গা শিশুদের এ দেশে নাগরিক করে নেওয়ার কথা বলে বার্মিজ শিক্ষাটি উঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৩সালে পিএসসি পরীক্ষার সময় আসলে আর তাদের পিএসসিতে সুযোগ দেওয়া হয়নি। বার্মিজ শিক্ষা থেকে দুরে সরে দেওয়ায় আমাদের কোন ছেলে/মেয়েরা মিয়ানমারের নাগরিক বলে দাবী করতে পারছিনা, কারণ বার্মিজ শিক্ষা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। এসব মিলিয়ে গত মাসে আমরা ৫২জন শিক্ষক চাকুরী অব্যাহতি দিয়েছি।
কোডেক প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুর রহিম বলেন, রোহিঙ্গা শিক্ষকদের সাথে আমাদের যে মতানৈক্যটি ছিল সেটি অবসান হয়েছে। যার ফলে অব্যাহতি দেওয়ার শিক্ষকরা আবার চাকুরী ফিরতে শুরু করেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।